বুধবার ফের মুর্শিদাবাদ যাচ্ছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র
পাঁচ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার মুর্শিদাবাদ সফরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এ বার স্থানীয় বিধায়ক তথা বাম জমানার দাপুটে মন্ত্রীর আমন্ত্রণে। এ বারও হেলিকপ্টার চেয়ে পাচ্ছেন না রাজ্যপাল— মঙ্গলবার রাজ ভবন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে সে কথা। তবে আরও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কার আমন্ত্রণে বুধবার তিনি ডোকমল যাচ্ছেন।
এ দিন দুপুরে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রাজভবন জানিয়েছে, বুধবার সকাল ছ’টায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সড়কপথে ডোমকলের উদ্দেশে রওনা দেবেন। ডোমকল গার্লস কলেজের নতুন ভবনের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন তিনি, জানানো হয়েছে রাজভবনের তরফে।
তার পরের লাইনেই বলা হয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান বিধায়ক আনিসুর রহমান নিমন্ত্রণ করেছেন রাজ্যপালকে।
২৮ বছর ধরে ডোমকলের বিধায়ক আনিসুর রহমান। ১৯৯১ সালে প্রথম বার ওই কেন্দ্র থেকে জেতেন এই সিপিএম নেতা। এখনও পর্যন্ত তিনিই বিধায়ক। ১৯৯১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা ২০ বছর পশ্চিমবঙ্গের প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী ছিলেন। গত আট বছরের তৃণমূল জমানায় রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বামদুর্গ ধূলিসাৎ হয়ে গেলেও ডোমকল বিধানসভা কেন্দ্রে দলের গড় এখনও টিকিয়ে রেখেছেন আনিসুর। স্থানীয় কলেজের নতুন ভবনের উদ্বোধনে সেই আনিসুর রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে আমন্ত্রণ জানানোয় রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে চমক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:ভয় আর হতাশা থেকেই ‘সংখ্যালঘু উগ্রপন্থা’ মন্তব্য করেছেন মমতা, পাল্টা তোপ আসাদউদ্দিনের
আরও পড়ুন:দেওরের মারে রক্তাক্ত অবস্থাতেই থানায় বৌদি, দায়সারা পুলিশ নড়ল মন্ত্রীর গুঁতোয়
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই শাসক তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের সঙ্গে বার বার তাঁর সংঘাত তৈরি হয়েছে। তৃণমূল রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ করতে শুরু করেছে স্বাভাবিক কারণেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাম না করে বলেছেন, ‘মনোনীত কেউ কেউ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন’। উল্টো দিকে বিজেপি রাজ্যপালের প্রতিটি পদক্ষেপ এবং মন্তব্যকে সমর্থন করছে। নবান্ন-রাজভবন সংঘাতে বিজেপি রাজ্যপালের পাশেই দাঁড়াচ্ছে।
এ রাজ্যের কংগ্রেসও বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যপালকে সমর্থন করেছে। কিন্তু বামেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমদূরত্বের নীতি নিয়ে চলতে চাইছে। বামেরা নীতিগত ভাবে বহু দিন ধরেই রাজ্যপাল পদটা তুলে দেওয়ার পক্ষে। তাই ধনখড়ের মুখে তৃণমূলের বা রাজ্য সরকারের সমালোচনা শুনে বামেরা খুশি হলেও খুব বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন না। রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকার, উভয়ের ভূমিকারই সমালোচনা শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েক জন সিপিএম বিধায়কের মুখে।
সেখানে আনিসুর রহমান কিন্তু বেশ খানিকটা অন্য পথে হেঁটেছেন। ডোমকলের সিপিএম বিধায়ক নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ধনখড়কে। সে আমন্ত্রণে ধনখড় সাড়া তো দিয়েছেনই, আনিসুর রহমানের তরফ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়া যে তাৎপর্যপূর্ণ, তা-ও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আনিসুর নিজে কী বলছেন এ প্রসঙ্গে? বলছেন, ‘‘রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই পদের বিরোধী হতেই পারি। কিন্তু ওই পদ তুলে দিতে হলে তো সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। যত দিন না সংবিধান পরিবর্তন করে ওই পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে, তত দিন রাজ্যপালকে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে মানতেই হবে।’’
রাজ্যপালকে যে আনিসুরের দলের অন্যরা মানেন না, তা কিন্তু নয়। বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকেও মাঝেমধ্যেই নানা অভিযোগ নিয়ে রাজভবনে ছুটে যেতে দেখা যায়। কিন্তু বাম নেতার তত্ত্বাবধানে আয়োজিত কোনও অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজ্যপালকে, এ দৃশ্য কিছুটা বিরল তো বটেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন, বিষয়টা এত সহজ-সরলও নয়। বরং শুধুমাত্র রাজ্যপালের সময় পাওয়া যাচ্ছিল না বলেই এই অনুষ্ঠানের তারিখ একাধিক বার আনিসুররা বদল করেছেন।
শুক্রবার অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর রাজ্যপাল গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায়। সেটিও একটি কলেজেরই অনুষ্ঠান ছিল। বুধবার অর্থাৎ ২০ নভেম্বর যাচ্ছেন ডোমকল। হেলিকপ্টার পাননি বলে এ বারও সড়কপথেই যাচ্ছেন। রাজভবন জানিয়েছে, ডোমকল যাওয়ার পথে কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে এক বার থামবেন রাজ্যপাল। আর ফেরার পথে রানাঘাটে মহকুমাশাসকের অতিথিশালায় থামবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy