ছবি: পিটিআই।
রাজ্য বাজেটকে ‘প্রতারণার বাজেট’ ও ‘অসত্যের বেসাতি’ বলে অভিহিত করল বিরোধী বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি। তাদের সকলেরই বক্তব্য মূলত তিনটি। এক, এই বাজেটে নানা প্রকল্পের ঢালাও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে তার অর্থ আসবে, তা বলা হয়নি। দুই, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত রাজ্যের যা ঋণ ছিল, তৃণমূল জমানার ৯ বছরে তা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তিন, কর্মসংস্থানের কোনও দিশা এই বাজেটে নেই। এর সঙ্গে বামেদের সংযোজন— মতুয়া, জনজাতি ইত্যাদি নানা সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলে বিভাজনের বাতাবরণকে আরও উস্কে দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভায় সোমবার বাজেট পাশ হওয়ার পর বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভুল তথ্যে ভরা এই বাজেটে অসৎ উদ্দেশ্য অর্ধসত্য বলা হয়েছে। আগামী ভোটের দিকে তাকিয়ে কল্পতরু হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে সরকার। কিন্তু পারেনি। পদে পদে ধরা পড়ে গিয়েছে তার অসত্য।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে বলে জানিয়েছে, সেগুলির পরিকাঠামো কোথায়? কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত জন শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী আছেন, তা রাজ্য স্পষ্ট করে জানাক।’’ এই বাজেটে চা শ্রমিকদের বাড়ি করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মান্নানের বক্তব্য, ‘‘চা শ্রমিকদের জন্য বাড়ি কার জমিতে করা হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।’’
২০১১ সালে বামফ্রন্ট যখন ক্ষমতাচ্যূত হয়, তখন এ রাজ্যের ঋণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। আর রাজ্যের ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী এ বছর ওই ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং, ৯ বছরে রাজ্য ঋণ নিয়েছে ২ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সেই প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘তৃণমূল যে ভাবে রাজ্যকে ঋণের জালে জড়িয়েছে, তা আর কেউ করেনি।’’ রাহুলবাবুর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রের চেয়ে রাজ্যের জিডিপি বেশি। আবার তিনি বলেছেন, গরিব রাজ্য আমাদের। দুটো কী করে সম্ভব? রাজ্যের জিডিপি বেশি হলে তো তার ধনী হওয়ার কথা।’’ সুজনবাবু উদাহরণ দিয়ে দেখান— বাজেটে বলা হয়েছে, এ বছর ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। কিন্তু পরিশোধ করা হবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এই প্রেক্ষিতে সুজনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে বাকি ৩৫ হাজার কোটি টাকা কি উৎসব, মেলা, খেলার ভাতা? নাকি সামনে ভোট আসছে বলে ওই টাকা অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে?’’ বিজেপির পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গার বক্তব্য, ‘‘ভোটের কথা মাথায় রেখে বাজেটে কিছু ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তফসিলি জাতি, জনজাতিদের ভিক্ষা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সমাজে ভাগাভাগি তৈরি করছেন। এতে সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের জন্য বন্ধ ক্যামেরা চালু বাজেটে
সুজনবাবুর কটাক্ষ, ‘‘আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ১ কোটি ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান দিয়েছেন। এ বারে ৯ লক্ষ বাড়বে। এ তো দেখা যাচ্ছে, লোকের চেয়ে কাজ বেশি হয়ে যাচ্ছে! এর পর লোকের পিছনে কাজ তাড়া করে বেড়াবে!’’ বিধানসভায় যেমন সুজন, মান্নান, তেমনই বিধানসভার বাইরে সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু বলেছেন, নানা সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলে কেন্দ্রের বিভাজনের নীতিকেই শক্তিশালী করছে রাজ্য। আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরীও বলেন, ‘‘এই বাজেট ভোটের মুখে জনমোহিনী প্রস্তাবের আড়ালে আসলে ভাঁওতা ও বিভ্রান্তিকর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy