দোকান বন্ধ করতে অনুরোধ উপাচার্যের। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
পর্যটকেরা ভাঙলেন ব্যারিকেড। উপাচার্য শুনলেন ‘গো ব্যাক’। মেলা শেষের ‘নিয়ম ভেঙেই’ চলল দেদার বিকিকিনি। শনিবার এমন একাধিক ঘটনারই সাক্ষী রইল পৌষমেলা।
মেলা শেষের নিয়ম মানার আর্জি নিয়ে এ দিন মেলার মাঠে হাজির হয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সঙ্গে বিশ্বভারতীর আধিকারিক ও মেলা কমিটির সদস্যরা। হাতজোড় করে দোকানদারদের অনুরোধ জানাতেও দেখা যায় উপাচার্যকে। দোকানদারদের তাঁরা অনুরোধ করেন আর বেচাকেনা না করতে। সেই আর্জির কথা শুনে ব্যবসায়ীরা দোকানের ঝাঁপ লাগাতে শুরু করে দেন। এতদূর সব ঠিক ছিল। কিন্তু মেলার মাঠে শালপট্টির কাছে যেতেই উপাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ব্যবসায়ী সমিতির একাংশ। ব্যবসায়ীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘‘উপাচার্য গো ব্যাক!’’ পরিস্থিতি অনুকূল না দেখে সেখান থেকে চলে যান মেলা কমিটির সদস্যরা। তার পরেই আবার যে যার মতো ব্যবসাদারেরা নিজেদের ঝাঁপ খুলে বিক্রিবাটা করতে থাকেন।
পর্যটকেরা যাতে মেলায় ঢুকে কোনওরকম কেনাকাটা না করতে পারেন সে জন্যও মেলার প্রথম দু’টি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে দিয়ে যাতে পর্যটকেরা কোনওভাবেই মেলায় ঢুকতে না পারেন সে জন্য এক্স সার্ভিসম্যানদের তরফ থেকে একটি ব্যারিকেডও করে দেওয়া হয়। কিন্তু মেলা দেখতে আসা পর্যটকদের আটকাবে কে? দু’টি গেট বন্ধ থাকলেও মেলা দেখতে আসা পর্যটকেরা এক্স সার্ভিস ম্যানের তৈরি করা ব্যারিকেড ভেঙে মেলায় ঢুকে পড়েন। পর্যটকেরা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘এতদূর থেকে এসেছি। তাও বৃষ্টিতে একদিন বেরোতেই পারিনি! ভাল করে মেলা দেখব না?’’
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল এ বার পৌষ মেলা হবে চার দিনের। পরে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে মেলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। সেই মতো শুক্রবার মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর শনিবার সকাল থেকেই মেলাতে যাতে কেনাবেচা না করা হয় তার জন্য দফায় দফায় মেলা মাঠে অভিযান চালানো হয়েছে মেলা কমিটির তরফ থেকে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘বৈঠকে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা হয়েছিল চার দিনের পৌষ মেলা হবে। তাই আজ আমরা সমস্ত ব্যবসাদারদের মেলার মাঠ থেকে দোকান তুলে নেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছি। একই সঙ্গে যাতে আর কোনও রকম কেনাবেচা না হয় সে জন্য ব্যবসায়ী বন্ধুদের অনুরোধ করেছি।’’ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ পাল্টা বলেন, ‘‘আমাদের দোকান তুলে দিতে এসেছিলেন মেলা কমিটির লোকজনেরা। আমরা তার প্রতিরোধ করেছি।’’
সব মিিলয়ে শনিবার মেলায় বেচাকেনা কোনওভাবেই আটকানো সম্ভব হয়নি। এ দিন সকাল থেকে বিনোদন মঞ্চ সহ প্রদর্শনী মাঠের ৯০ শতাংশ শামিয়ানা এবং পাটাতন খোলা হয়ে যায়। তবে মেলার অন্য অংশে বিশ্বভারতীর নিষেধাজ্ঞা কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জমে ওঠে মেলা। দিনভর সেই ‘ভাঙা মেলা’ দেখতে ও সস্তায় জিনিস কিনতে জনতার ঢল নামতে দেখা যায়।
মেলায় বসে থাকা বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের এ দিন দেখা যায় প্রকাশ্যেই জিনিসের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করতে। কাউকে আবার দেখা গেল ঝাঁপ লাগিয়ে লুকিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করতে। শ্রীরামপুর থেকে শীতের চাদর-সহ নানা জিনিস নিয়ে ব্যবসা করতে আসা মহম্মদ শানওয়াজ, জাহিদ খানেরা বলেন, ‘‘এ বছর বৃষ্টির কারণে ও সিএএ নিয়ে জায়গায় জায়গায় গণ্ডগোলের কারণে সেইভাবে মেলায় ভিড় জমেনি। এ বছর এত টাকা দিয়ে আমরা অনলাইনে বুকিং করেছি। অথচ এ বছর তেমনভাবে বেচাকেনা হয়নি। মেলা ভাঙার পরেই তো আমাদের বিক্রিবাটা ভালো হয়। সেটুকু করতে না দিলে আমরা কোথায় যাব?’’ একই কথা বলেছেন বাঁকুড়া, বর্ধমান ও বীরভূমের নানা প্রান্ত থেকে আসা গ্রামীণ হস্তশিল্পীরা। তাঁরা বলেন, ‘‘ভাঙা মেলায় আমাদের দুটো পয়সা হয়। এ ভাবে যদি আমাদের তুলে দেওয়া হয় তাহলে আমরা লাভের মুখ দেখবো কীভাবে?’’
ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদকও বলেন, ‘‘এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নাগরিকত্ব আইন পাশের পর নানা জায়গায় গণ্ডগোলের জেরে এ বার মেলায় পর্যটক কম হওয়ায় তেমনভাবে মেলাতে বেচাকেনা হয়নি। তাই আমরা দু’দিনের ভাঙা মেলা করব। তারপর ৩০ ডিসেম্বর আমরা পুরো মেলার মাঠ ফাঁকা করে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy