ফাইল ছবি।
জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতা করে দার্জিলিং পাহাড়ে আমরণ অনশন করছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে, বিসর্জনের বাজনা শুনতে পাচ্ছেন অনেকে। পরিস্থিতি এমন, মোর্চার সদস্যরাই গুরুংকে অনশন ভাঙার অনুরোধ করছেন। একেবারে নিশ্চুপ রাজ্য সরকারও।
একটা সময় ছিল, যখন সুবাস ঘিসিংয়ের এক ডাকে অচল হত উত্তরবঙ্গের পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্স। তখন বাম জমানা। ঘিসিংয়ের ছায়াসঙ্গী, তরুণ বিমলের কাছে সেই সব দিনের স্মৃতি উজ্জ্বল। আজ, পাহাড়ে ঘিসিং যেমন অতীত, সে দিনের তরুণতুর্কি বিমলকেও রাজপাট হারানো রাজা বললে অত্যুক্তি হয় না। জিটিএ ভোটের বিরোধিতা করে আমরণ অনশনে বসেছেন বিমল। দু’হাত ভরা সমর্থন তো দূর অস্ত, পাহাড়ে একা কুম্ভ হয়ে অনশন মঞ্চ আগলাতে হচ্ছে অতীতের ছায়া ‘বিমল দাজু’কে। একদা যাঁর অনুমতি ছাড়া পাহাড়ে বেলা গড়াত না বলে দাবি করেন তাঁর অনুগামীরা, আজ তিনিই কি শৈলরানির পরিহাসের অন্যতম খোরাক হয়ে উঠলেন?
পরিস্থিতি এমনই যে বিমলকে অনশন ভাঙতে বলতে হচ্ছে তাঁরই হাতে তৈরি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে। কিন্তু যে দাবিতে অনশন, তার এক শতাংশও পূরণ না করে বিমল মঞ্চ ছাড়েন কী করে! উভয়সঙ্কটে পড়ে হাসফাঁস অবস্থা এক সময়ের পাহাড়ের ‘রাজা’র। পরিস্থিতি যে এমন হতে চলেছে, তা আঁচ করতে ভুল করেনি রাজ্য সরকারও। গোটা ঘটনাপ্রবাহে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে চুপ থেকেছেন শাসক দলের নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সরকারির আমলারা। মোর্চা বলছে, রাজ্য সরকার এসে কথা বলুক বিমলের সঙ্গে। যদিও সেই আবেদনে আপাতত কর্ণপাত করার ইচ্ছে নবান্নের রয়েছে বলে করেন না পর্যবেক্ষকরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৭-য় যে দিন গোলমালের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে পাহাড় ছাড়লেন বিমল, সে দিন থেকেই তাঁর শেষের শুরু। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটে ‘মেঘের আড়াল’ থেকে বিজেপির প্রার্থীকে জিতিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু প্রভাব যে কমছিল, তা গোপন ছিল না। একুশের ভোটের আগে এই বিমলই শেষ চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে। ফিরে এসেছিলেন স্বভূমে। কিন্তু তত দিনে যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। পর পর ভোটে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে না পেরে শেষমেশ জিটিএ ভোটকে নিক্তি করে নিজের জনপ্রিয়তা মাপতে নেমেছিলেন। কিন্তু তাতেও তিনি শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ বলে মনে করছেন পাহাড়ি রাজনীতির ওয়াকিবহালরা।
মোর্চার কার্যকরী সভাপতি লোপসাং লামা বলেন, ‘‘আমাদের সেন্ট্রাল কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিমল গুরুংকে অনশন ভাঙার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি রাজি হচ্ছেন না। বলছেন, রাজ্য থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত কোন প্রকার বার্তা আসছে তিনি নড়বেন না। আমরা চেষ্টা করছি। পাশাপাশি রাজ্যও যেন শীঘ্রই তাঁর সঙ্গে দেখা করে, এটাই আবেদন।’’
মোর্চা কর্মীদের কথায় টানা অনশনে বিমলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে৷ সমর্থকদের আনাগোনা কমেছে অনশন মঞ্চেও। ভারতীয় গোর্খা সুরক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা এসপি শর্মা বিমলের সঙ্গে দেখা করেন। দেখা মেলেনি আর কারও। সব মিলিয়ে, আজ প্রকৃতঅর্থেই একা বিমল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy