Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bimal Gurung

Bimal Gurung: অনশন মঞ্চে হতাশ বিমল! পাহাড়ে জমি হারিয়েছি, অকপট স্বীকারোক্তি রোশনের

আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে রোশনের স্বীকারোক্তি, ‘‘সমর্থন অনেকটাই কমেছে। পাহাড়ে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া তার একটা বড় কারণ।’’

অনশন মঞ্চে বিমল গুরুং

অনশন মঞ্চে বিমল গুরুং

পার্থপ্রতিম দাস
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২২ ২২:০৬
Share: Save:

আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিনেও জনসমর্থন নেই। দার্জিলিঙের সিংমারির দলীয় কার্যালয়ের অনশন মঞ্চে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন। মেরেকেটে ৪০-৫০ জন হবে। অনশনে বসে পাহাড়ের মানুষের জনসমর্থন নিয়ে শক্তি প্রদর্শন করতে চাওয়া গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্বের কাছে এই দৃশ্য যথেষ্টই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকদেরও যে মনোবল ভেঙেছে, তা নেতৃত্বের মন্তব্যেই কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাহাড়ে মোর্চা যে জমি হারিয়েছে, তা নিজের মুখেই স্বীকার করে নিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। অন্য দিকে, এখনও ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েই চলছে রাজ্য প্রশাসন।আগামী ২৬ জুন জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতায় বুধবার অনশনে বসেছেন বিমল। এক দিনের তফাতে অনশন মঞ্চের ছবি অনেকটাই বদলে গেল। বুধবার কিছু সমর্থকদের আনাগোনা লেগে থাকলেও বৃহস্পতিবার সব উধাও! দলের গুটিকয়েক নেতা দফায় দফায় মঞ্চে এসে দেখে যাচ্ছেন বিমলকে। ও দিকে, দলীয় কার্যালয়েই দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাতে দেখা গেল রোশনকে। কী ভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে সেখানেই দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। পাহাড়ের জল না মেপেই তাঁরা ‘তুরুপের তাস’ খেলে দিয়েছেন, তা নেতাদের কথায় স্পষ্ট। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে রোশনের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘সমর্থন অনেকটাই কমেছে। পাহাড়ে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া তার একটা বড় কারণ।’’

দার্জিলিঙের বাসিন্দা তাসি ওয়াংদি লামা বলছেন, ‘‘২০১৭ সালের পর পাহাড় একটু একটু করে হাঁটতে শুরু করেছিল। কিন্তু করোনার কারণে গত আড়াই বছরে পাহাড়ের অর্থনীতির কোমর ভেঙে গিয়েছে। আবার পরিস্থিতি খানিক শোধরাতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অনশনে বসেছেন বিমল। এর আঁচ যেন পাহাড়ে না পড়ে! পাহাড়বাসী আর অস্থিরতা চায় না।’’ সুনীতা রাই নামে এক দার্জিলিংবাসী বলেন, ‘‘এই রাজনীতিতে আমরা নেই। পাহাড় একটু একটু করে স্বমহিমায় ফিরছে। আর কোনও অশান্তি চাই না আমরা।’’

পাহাড়বাসীর ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বিমল যে আবেগ টানতে চাইছিলেন, তা রাজ্য সরকারের কাছে শুরু থেকেই পরিষ্কার ছিল। শুধু তাই নয়, মানুষ যে তাতে সাড়া দেবে না, তা-ও সরকার জানত। তাই সরকারের তরফে টুঁ-শব্দটিও করা হয়নি বলেই জানাচ্ছেন শাসকদলের নেতারা। রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘মোর্চা যে আমাদের বিরুদ্ধে, এ নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। আমরা এ-ও জানি, পাহাড়ে জমি হারিয়েছে মোর্চা। তাই আমরা চুপ করে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে থাকলে হয়তো জনসমর্থন কিছুটা হলেও মিলত।’’ গত বিধানসভায় তৃণমূলের শরিক হয়ে লড়া বিমলের সরাসরি ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র বিরুদ্ধে শাসকদলের তরফেও যে পাল্টা ‘রণনীতি’ সাজানো হচ্ছে, তা জানিয়েছেন ওই নেতা।

অনশন মঞ্চের দ্বিতীয় দিনেই যে ‘আশাভঙ্গ’ হয়েছে বিমলের, তা মেনে নিচ্ছেন মঞ্চে উপস্থিত মোর্চার নেতারা। তাঁদের চোখেমুখেও দেখা গিয়েছে হতাশার রেখা। একান্তে আলোচনায় তাঁরা বলছেন, আগে যে বিমল হাঁক দিলে পাহাড়ে জনসমুদ্র লেগে যেত। এখন তাঁকে আমরণ অনশনে বসতে দেখেও সাধারণ মানুষের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই! ভোটের বিরুদ্ধে কর্মসূচি হিসাবেই অনশনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মোর্চা নেতৃত্ব। সেই মতো কয়েক দিন আগে রিলে অনশন শুরু করেছিলেন দলের নেতারা। কিন্তু তাতে রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়ানো সম্ভব হয়নি দেখেই তড়িঘড়ি আমরণ অনশনে বসেছেন বিমল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত যে কার্যত ‘বুমেরাং’ হয়েছে, স্বীকার করে নিচ্ছেন মোর্চা নেতাদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে শুধু পাহা়ড়ে মোর্চার ভাবমূর্তি নয়, দলে তাঁর নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিমলের ঘনিষ্ঠমহল।

অন্য বিষয়গুলি:

Bimal Gurung Darjeelin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy