Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Nabanna

পথে পথে বাধার মুখে সাধারণ মানুষও, বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে বিঘ্নিত কাজের দিনের কলকাতা, দোসর বৃষ্টি

সড়কপথেও যানবাহন কম। নিরাপত্তার কারণে অনেক রাস্তাতেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। এর ফলে বহু রুটে বাস নেই। সপ্তাহের গোড়ায় মঙ্গলবার যাঁরা পথে বেরিয়েছেন, তাঁদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে।

বিজেপির নবান্ন অভিযানে প্রশাসনিক কড়াকড়িতে নাকাল সাধারণ মানুষ।

বিজেপির নবান্ন অভিযানে প্রশাসনিক কড়াকড়িতে নাকাল সাধারণ মানুষ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৩৯
Share: Save:

বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি ঘিরে কলকাতা ও হাওড়ায় গোলমাল হতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকেই বাড়ি থেকে বার হননি। তবে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদেরও ভোগান্তির মুখে পড়তে হল সকাল থেকেই। লোকাল ট্রেন থেকে মেট্রো— সবেতেই অন্য দিনের তুলনায় ভিড় বেশি। সেই সঙ্গে সড়কপথেও যানবাহন কম। নিরাপত্তার কারণে অনেক রাস্তাতেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। এর ফলে বহু রুটে বাস নেই। সপ্তাহের গোড়ায় মঙ্গলবার যাঁরা পথে বেরিয়েছেন, তাঁদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে বহু মানুষকে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যা থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার ছবি ধরা পড়ে। আর মঙ্গলবার সকাল থেকে এক দিকে বিজেপি ও অন্য দিকে পুলিশ প্রশাসন মরিয়া ভূমিকায়। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মনোভাব, ‘নবান্ন অভিযান’ সফল করতেই হবে। আর রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাল্টা চ্যালেঞ্জ তা রোখার। সব রকমের পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড তৈরি করেছে পুলিশ। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই এক চিত্র। কলকাতায় বিজেপির বিভিন্ন জেলার মিছিলের প্রবেশ রোখার জন্য কড়া বন্দোবস্তে ঘোর বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও হাওড়া সেতুতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দু’টি সেতুতেই তৈরি হয়েছে ব্যারিকেড। ফলে সাধারণ মানুষকেও ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়।

এ ভাবেই বাদুড়ঝোলা হয়ে অফিসে যেতে হল নিত্যযাত্রীদের।

এ ভাবেই বাদুড়ঝোলা হয়ে অফিসে যেতে হল নিত্যযাত্রীদের।

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এর ফলে পুজোর বাজারেও বড় প্রভাব পড়বে। সকাল থেকে বড়বাজার এলাকা ফাঁকা ফাঁকা। বহু মানুষই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কলকাতায় আসেননি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বড়বাজারের ব্যবসায়ী সুনীল জয়সওয়াল বলেন, ‘‘এমনিতেই পুজোর বাজার গত কয়েকটা দিন বৃষ্টির জন্য জমছে না। তার মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এই দিনটা নষ্ট হল। জেলার বহু বাজারই মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। তাই খুচরো বিক্রেতারা এই দিনে বড়বাজারে আসেন। যা পরিস্থিতি, সেই বাজার পাওয়া যাবে না।’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তিন দিক থেকে মিছিল আসার কথা নবান্নর দিকে। তিন জনের নেতৃত্বে তিনটি মিছিল শুরু হওয়ার কথা যথাক্রমে কলেজ স্ট্রিট, হাওড়া ময়দান ও সাঁতরাগাছি থেকে। তিনটি জায়গাতেই বিশাল পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। অন্য দিকে, নবান্ন পৌঁছনোর আগেই বিজেপির মিছিল আটকে দিতে মজুত রয়েছে দু’টি জলকামান।

মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক পড়ুয়াও। কলকাতা ও প্রেসেডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এই এলাকায় অনেকগুলি কলেজ রয়েছে। ছুটি না থাকায় সেখানে আসতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুকমল সরকার বলেন, ‘‘আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধবই আসেনি। বাড়ি থেকে আমাকেও বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমার খুব দরকার থাকায় এসেছি। শ্যামবাজার থেকে হেঁটে আসতে হয়েছে।’’ একই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী অঙ্গীরা দত্তগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ি উত্তরপাড়ায়। ট্রেনে খুব ভিড় ছিল। এর পরে হাওড়ায় নেমে দেখি বাস কম। যে কয়েকটা ছিল সেগুলোতে ওঠার মতো পরিস্থিতি ছিল না। বাধ্য হয়ে হেঁটে হেঁটেই এসেছি।’’অনেকেই যাচ্ছেন স্কুলে বাচ্চাকে আনতে, অনেকেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। পরীক্ষার্থীদের রাস্তা আটকানোয় চরম হয়রানি সাধারণ মানুষের। কলেজ স্ট্রিট হয়ে হাওড়া যাওয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড। ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে সেন্ট্রাল-এমজি রোড ক্রসিংয়ে। আপাতত গিরিশ পার্ক হয়ে ধর্মতলামুখী গাড়ি এবং ধর্মতলা থেকে গিরিশ পার্ক-মুখী গাড়ি চলাচল করছে। নবান্ন অভিযানের ফলে দুর্ভোগে সাধারণ যাত্রীরা। মিছিলের জেরে হাওড়ার দিকে কোনও বাস যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি, হাওড়া স্টেশন থেকেও কোনও গাড়ি কলকাতার দিকে আসতে পারছে না। এর জেরে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা যাতে কোনও ভাবেই নবান্ন অভিযান সফল করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই গার্ডরেল দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় ট্রাফিককে কড়াকড়ি রাখা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের আশঙ্কা, নবান্ন অভিযানে যেতে না পারলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা দক্ষিণ কলকাতা-মুখী হতে পারেন। তাই সে ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে রয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna BJP Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE