Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

নির্মলার কাছে চা শিল্পে প্যাকেজ দাবি গৌতমের

উত্তরবঙ্গের চা বাগান এবং চা শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ ‘প্যাকেজ’ ঘোষণার দাবি জানালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের চা বাগানের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ডাকা বৈঠকে এ কথা জানান তিনি। চা বাগান এবং চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ দিন বৈঠক করেন নির্মলা সীতারামন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর (মাঝে) সঙ্গে (বাঁ দিকে) দার্জিলিঙের সাংসদ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর (মাঝে) সঙ্গে (বাঁ দিকে) দার্জিলিঙের সাংসদ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৩:৫৬
Share: Save:

উত্তরবঙ্গের চা বাগান এবং চা শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ ‘প্যাকেজ’ ঘোষণার দাবি জানালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের চা বাগানের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ডাকা বৈঠকে এ কথা জানান তিনি। চা বাগান এবং চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ দিন বৈঠক করেন নির্মলা সীতারামন। উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, সাংসদ রেনুকা সিংহ, দশরথ তিরকি, বিজয়চন্দ্র বর্মন, বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়রা।

প্যাকেজের বিষয়ে কোনও আশ্বাস না দিলেও দ্বাদশ অর্থ যোজনায় চায়ের উন্নয়নে ১৪২৫ কোটি টাকা অনুমোদনের বিষয়টি বৈঠকে এ দিন জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী। চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবি, বন্ধ বাগানগুলি খোলার দাবির মতো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি কথা বলবেন এবং লিখিত ভাবেও জানাবেন বলে জানিয়ে দেন। কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বজায় থাকলে চা শিল্পের সমস্যা মেটাতে তা সহায়ক হবে বলেই এ দিন আশা প্রকাশ করেন এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অনেকেই।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘চা উত্তরবঙ্গের চিরাচরিত শিল্প। বিদেশে চা রফতানি করে বিদেশি মুদ্রা অর্জন সম্ভব। চা বাগান এবং চা শিল্পের উন্নতিতে তাই প্যাকেজ চেয়েছি। প্রস্তাবিত প্যাকেজের বিষয়ে পরে আমরা বিস্তারিত ভাবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রকে আবেদন পাঠাব।’’ কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনও প্যাকেজের আবেদন এখনও তাঁর কাছে জমা পড়েনি। তা ছাড়া উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এ দিন বৈঠকে সম্পূর্ণ সময় ছিলেন না বলেও দাবি করেন তিনি। গৌতমবাবুর তরফে জানানো হয়, বেলা সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত তাঁকে কর্মসূচি দিয়েছিলেন চা পর্ষদের কর্তারা। সেই হিসেবে তিনি নির্ধারিত সময়ে গিয়েছিলেন। এবং অন্য কাজ থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা পরে তিনি বেরিয়েছেন।

শনিবার ডুয়ার্সের রেডব্যাঙ্ক এবং ধরণীপুর চা বাগান ঘুরে দেখা এবং শ্রমিক-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর বাগানগুলির পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বাগানগুলিতে চা শ্রমিকেরা এখনও ন্যূনতম মজুরি পান না। এটা একটা গুরুতর সমস্যা। এর জন্যই শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। আমি চাই দ্রুত এর সমাধান হোক।’’ তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য ইতিমধ্যেই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে বৈঠক করছে বলে জেনেছি। দ্বিতীয় দফাতেও তাঁরা বৈঠক করবেন। বৈঠক যত বার খুশি হোক, এই সমস্যা দ্রুত মেটাতে হবে এবং তা কার্যকর করতে হবে।’’ বাগান সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ছিল ১১২ টাকা। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে তা ১০ টাকা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। মজুরি ছাড়া অন্যান্য যে সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় অর্থের বিচারে তা ধরলে মজুরি ১৯৫ টাকার মতো দাঁড়াবে। সেটাও ন্যূনতম মজুরি থেকে কম।

মজুরি ছাড়াও মালিক পক্ষের তরফে বাগানের শ্রমিকদের কোয়ার্টার, চিকিৎসা পরিষেবা, বিদ্যুৎ পরিষেবার মতো বিভিন্ন ‘ফ্রেঞ্জ বেনিফিট’ দেওয়ার কথা। সে সব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথ মেলে না বলে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকেই। তা নিয়েও এ দিন শ্রম দফতরকে কড়া পদক্ষেপ নিতে তিনি নিদের্শ দিয়েছেন। নির্মলা দেবী এ দিন জানিয়েদেন, ‘‘মজুরি ছাড়াও যে সমস্ত পরিষেবা মালিক পক্ষের তরফে শ্রমিকদের দেওয়ার কথা, তা মিলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তা ঠিক না ভুল জানা নেই। অভিযোগ ঠিক হলে তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। আর যদি অভিযোগ ভুল হয় শ্রম দফতরকে তা প্রমাণ করতে হবে। শ্রমিকদের মধ্যে গিয়ে তাদের প্রাপ্য পরিষেবা যথাযথ যে দেওয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত করে বুঝিয়ে দিতে হবে।’’

বর্তমানে উত্তরবঙ্গে ৭টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে। রেডব্যাঙ্ক, ধরণীপুর, সুরেন্দ্রনগর, ঢেকলাপাড়া, বান্দাপানি, মধু এবং সোনালি। বন্ধ বাগান খোলার ব্যাপারে বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের একাংশের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দ্রুত বন্ধ বাগান খোলাতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে আমরা সচেষ্ট হব, পদক্ষেপ করব।’’ তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সেন্ট্রাল কমিটির কার্যকরী সভাপতি অলক চক্রবর্তী, ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ স্মল টি গ্রোয়ার্স অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি সমীর রায় জানান, বন্ধ বাগান ছাড়াও, রায়পুর এবং একটি শিল্প গোষ্ঠীর বেশ কিছু বাগানের পরিস্থিতি খারাপ। সেগুলির ব্যাপারেও ব্যবস্থা না নিলে বন্ধ বাগানের সংখ্যা ভবিষ্যতে বাড়বে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy