জি-প্লটে কংক্রিটের তৈরি সমুদ্রবাঁধ। নিজস্ব চিত্র।
ফারাক কোথায়, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কংক্রিটের বাঁধ আর ম্যানগ্রোভ।
জি-প্লটে বাঁধের ধারেই বাড়ি বছর সত্তরের সবিতা জানার। আমপানে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল তাঁর বাড়ি। ইয়াসের তাণ্ডবের পরেও কিন্তু সেই বাড়ি অক্ষত। বৃদ্ধার কথায়, “গত বছর পুরো বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। কোনও রকমে মেরামত করে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছি। ভেবেছিলাম, এ বার সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ওই বড় বাঁধটাই বাঁচিয়ে দিল।” যে বাঁধের কথা সবিতা বলছিলেন, সেটি কংক্রিটের। উপকূলের অনেক এলাকায় এই ধরনের বাঁধ না-থাকায় ইয়াসের দিন সেখানের ঘরবাড়ি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। তবে শুধু কংক্রিটের বাঁধই নয়, সে দিন ‘জি-প্লট’কে ইয়াসের তাণ্ডব থেকে বাঁচিয়েছিল ম্যানগ্রোভও। নদী ও সমুদ্রবাঁধ মিলিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় ম্যানগ্রোভ রোপণের সুফল মিলেছে হাতেনাতে।
ইয়াসের জেরে বাঁধ ভেঙে উপকূল থেকে দেড়-দু’কিলোমিটার দূরের জায়গাও জলে ভেসেছে। দক্ষিণের দ্বীপ এলাকাগুলি সবই জলের তলায়। কিন্তু বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা জি-প্লটে ক্ষতির পরিমাণ কম। আয়লা-আমপানে সমু্দ্রবাঁধ ভেঙে যে এলাকা তছনছ হয়ে গিয়েছিল, সেখানে কার্যত ইয়াস-তাণ্ডবের ছাপই নেই! স্থানীয়রা জানালেন, কোথাও কোথাও নদী বাঁধ দিয়ে জল ঢুকেছে। তবে কংক্রিটের সমুদ্রবাঁধ প্রায় অটুট থাকায় এ বার বানভাসি পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ প্রান্তে এই জি-প্লট। তিন দিকে নদী ও এক দিকে সমুদ্রে ঘেরা এই দ্বীপ এলাকায় এর আগে প্রায় সব ঝড়েই বাঁধ ভেঙে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইয়াসে কী হবে, তা ভেবে ঘুম ছুটেছিল বাসিন্দাদের। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ধার বরাবর প্রায় সাত কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধ রয়েছে। আমপানে এই বাঁধ ভেঙেই এলাকা ভেসে গিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, আয়লার পরেই কংক্রিটের সমুদ্র বাঁধের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১০ বছরে কাজ তেমন এগোয়নি। আমপানের ধ্বংসলীলার পরে গত এক বছরে অনেকটাই হয়েছে সেই কাজ। পাঁচ কিলোমিটারেরও বেশি জুড়ে প্রায় ২৪ ফুট চওড়া কংক্রিটের বাঁধ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ইয়াসের দিন এই বাঁধে ধাক্কা খেয়ে ২৫-৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উঠছিল জল। কোথাও কোথাও বাঁধ টপকে জলও ঢোকে। কিন্তু বাঁধ ভাঙেনি। তার ধারের বাসিন্দা স্বর্ণজিৎ বাগ বলেন, “ঝড়ের দিন সমুদ্রের সে কী রূপ! উঁচু উঁচু ঢেউ ধাক্কা মারছিল বাঁধের গায়ে। বাঁধ ভাঙলে সব শেষ হয়ে যেত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ভাঙেনি।”
পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ রজ্জাক বলেন, “কংক্রিটের বাঁধই এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছে।’’ বিপর্যয় রোধে ম্যানগ্রোভের ভূমিকার কথা টেনে তিনি বলেন, ‘‘নদী ও সমুদ্রবাঁধ মিলিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল। তা বেড়ে এ বার বাঁধ-রক্ষায় সাহায্য করেছে। আরও ২০-২৫ লক্ষ ম্যানগ্রোভের চারা বসানোর পরিকল্পনা আছে।” পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা বলেন, “জি-প্লটের সমুদ্রবাঁধের বেশির ভাগ কংক্রিটের। তার সুফল পেলাম। এক কিলোমিটারের কাজ বাকি। তা দ্রুত শেষ করা হবে। দুর্যোগে আর ভয়ে কাঁপতে হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy