শহরের পুজো-মণ্ডপ চত্বরে সিপিএমের বইয়ের স্টলে বিমান বসু। —নিজস্ব চিত্র।
হাত বাড়ালে জানতে পারা যাচ্ছে, কাশ্মীরে কী চেয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আবার চাইলেই হাতে তুলে নেওয়া সম্ভব, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে যুক্তিমালা। পরস্পর-বিরোধী সব মতের, সব যুক্তির জন্য পরিসর জুগিয়ে দিল এ বারের শারদোৎসবের আঙিনা।
কলকাতা এবং জেলায় জেলায় পুজো-মণ্ডপ চত্বর এ বার বই বিপণি দেখল লাল, গেরুয়া বা সবুজ সব রঙের। সংখ্যার বিচারে সব চেয়ে এগিয়ে বামেদের মার্ক্সীয় সাহিত্যের বিপণি। তার পরেই বিজেপি এবং গেরুয়া শিবিরের নানা সংগঠনের স্টল। গত কয়েক বছরে বইয়ের বিপণি খুলতে না দেওয়া বা ভাঙচুরের অভিযোগে তপ্ত হয়েছে পুজোর পরিবেশ। বেলেঘাটার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে গত বছরই সিপিএমের বইয়ের স্টল তৃণমূল ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পরে ভাঙা স্টলেই ফের বই সাজিয়ে উদ্বোধন করেছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু এ বারের ছবি তুলনায় শান্তিকল্যাণের! নবমীর রাত পর্যন্ত তেমন কোনও অভিযোগ অন্তত কোনও পক্ষ থেকেই আসেনি।
সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য জুড়ে তাদের বই বিপণির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে কলকাতা পুরসভা এলাকার মধ্যে বিপণি হয়েছে ১০৯টি। কলকাতার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভবানীপুরের ২৩ পল্লির পুজোর মণ্ডপের সামনে গত ৫২ বছর ধরে বইয়ের স্টল দিয়ে আসছে বামেরা। এ বার ভবানীপুর থানা উদ্যোক্তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, ‘নিরাপত্তার কারণে’ স্টল খোলার অনমুতি দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু তার পরেও চড়কডাঙার মোড়ে বিক্ষোভ-সভা করে বই বিপণি খোলা হয়েছে। শ্যামবাজারে মণীন্দ্রনাথ কলেজের কাছের বিপণি নিয়েও অনুমতির জটিলতা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেই স্টলও খুলেছে। সবই চালু থাকবে আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত।
মেদিনীপুরে বিজেপির স্টলে দিলীপ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
পার্ক সার্কাস, কলেজ স্কোয়ার, বাগবাজার বা যাদবপুর ৮বি-র মতো কিছু জায়গায় বহু বছর ধরেই প্রথাগত ভাবে বই বিপণির উদ্বোধনে যান বিমান বসু-সহ সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থাকায় উদ্বোধনে এ বার তাঁরা কেউ ছিলেন না। তবে কলকাতায় ফিরে সপ্তমী বা অষ্টমীর সন্ধ্যায় বিমানবাবু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিমেরা নানা জায়গায় বিপণিতে গিয়ে বসেছেন। বিমানবাবু অভ্যাসবশত বই বিক্রিতে হাত লাগিয়েছেন বাগবাজারে। সর্বত্রই চাহিদার শীর্ষে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাম্প্রতিকতম বই। সিপিএম তো বটেই, সিপিআই, আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকও তাদের বই বিপণিকে কাজে লাগিয়েছে ভোটার তথ্য যাচাইয়ে মানুষকে সহযোগিতার জন্য। বেশ কিছু বড় বিপণি হয়েছে এসইউসি-রও।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘রাজনৈতিক তিন পক্ষই এ বার প্রবল ভাবে আছে। তাই হয়তো গোলমাল কম, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন, ‘‘এটাই তো হওয়ার কথা। গণতন্ত্রে সকলে নিজেদের কথা বলবে শান্তিপূর্ণ ভাবে। কেউ কিছু চাপিয়ে দেবে না।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নানা বই প্রতি বারই নানা পুজো কমিটিকে তুলে দেওয়া হয় তৃণমূল ভবন থেকে। এ বারও তা-ই হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের স্টল আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে ভাঙতে না পারলেও তৃণমূল অনেক জায়গায় হুমকি দিয়েছে। আমাদের স্টলের পাশে নিজেদের স্টল খুলে দিয়েছে!’’
টক্কর এ বার অক্ষরে অক্ষরে। আক্ষরিক অর্থেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy