Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
R G Kar’s Rape and Murder Case

১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর! খুন-ধর্ষণ মামলা এবং সন্দীপ-অভিজিৎকে ঘিরে কী কী ঘটনাপ্রবাহ

তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং আরজি করের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে দেরিতে এফআইআর রুজু করার অভিযোগ উঠেছিল।

From 14 September to 14 december, what happened with Sandip Ghosh and Abhijit Mondal

সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৪৪
Share: Save:

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় গ্রেফতারির তিন মাস পর জামিন পেলেন সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডল। তথ্যপ্রমাণ লোপাট, দেরিতে এফআইআর দায়ের-সহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন দু’জন। কিন্তু ৯০ দিন কেটে গেলেও এই মামলায় সিবিআই চার্জশিট দিতে পারেনি। ফলে অভিযুক্ত দু’জনকেই জামিন দিল আদালত।

গত ৯ অগস্ট আরজি করের সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় আন্দোলিত হয় গোটা রাজ্য। রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিবাদের ঝড় দেখা যায়। ঘটনার পর পরই কলকাতা পুলিশ এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল। পরে তাঁকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে শুধু কি ওই সিভিক ভলান্টিয়ার, না কি ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই আন্দোলনে যোগ দেন সমাজের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে আবাসিক চিকিৎসক থেকে পড়ুয়া, সকলেরই অন্যতম দাবি ছিল আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের অপসারণ কিংবা পদত্যাগ। আন্দোলনের চাপে পড়ে গত ১২ অগস্ট পদত্যাগ করেন সন্দীপ। স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমাও দেন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দীপকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেখান থেকেও তাঁর অপসারণের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।

গত ১৩ অগস্ট কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় সন্দীপকে ছুটিতে যেতে। সেই থেকে ছুটিতেই ছিলেন সন্দীপ। পরে আন্দোলনের চাপে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন থেকে। তা নিয়ে কখনও স্বাস্থ্য ভবন অভিযান, কখনও রাস্তায় ধর্না-মিছিল করেছেন চিকিৎসকেরা। এমনকি, ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশনে’ও বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সরকারের তরফে বার বার অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন তাঁরা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ভবনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাস্থলে মুখ্যমন্ত্রীর চলে যাওয়া, আলোচনায় বসার আহ্বানের মধ্যেই খুন এবং ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হন টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ।

কলকাতা পুলিশ আরজি কর মামলার তদন্ত শুরু করলে হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। তদন্তভার গ্রহণের পর আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে একাধিক বার জেরা করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেই আবহেই অভিযোগ ওঠে, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে। সে বিষয়ে তদন্তের জন্য গত ১৬ অগস্ট রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়। এক দিন পরেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের পরিবর্তে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে একাধিক বেনিয়মের তত্ত্ব উঠে এসেছে। মর্গ থেকে দেহ উধাও হওয়া থেকে শুরু করে রয়েছে হাসপাতালের জৈব বর্জ্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও! এ বিষয়ে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি। গত ১৯ অগস্ট সন্দীপকে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। জেল হেফাজতে থাকাকালীনই ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং আরজি করের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দেরিতে এফআইআর রুজু করার অভিযোগ উঠেছিল সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরই আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও, সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কেন আত্মহত্যা বলা হয়েছিল, তা নিয়েও তদন্ত করে সিবিআই।

আদালতে সিবিআই আগে দাবি করেছে, ঘটনার পর অভিজিৎ এবং সন্দীপের মধ্যে ফোনে কথা হয়। দু’জনের মধ্যে কী কথোপকথন হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও, ঘটনার আগে এবং পরে সন্দীপ এবং অভিজিতের গতিবিধি জানতে হাসপাতাল এবং থানার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও দাবি করে সিবিআই। এমনকি, তাঁদের পলিগ্রাফ এবং নার্কো পরীক্ষা করতে চেয়েও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও দু’জনের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত সেই দুই পরীক্ষা করা যায়নি। কেন পলিগ্রাফ এবং নার্কো পরীক্ষায় আপত্তি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সিবিআই। জামিনের বিরোধিতায় সেটাই ছিল তাদের অন্যতম অস্ত্র। তবে ৯০ দিন তদন্তের পরেও তথ্যপ্রমাণ লোপাট মামলায় চার্জশিট দিতে পারল না সিবিআই। খুন এবং ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেও এখনই জেলমুক্তি হচ্ছে না সন্দীপের। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে। তবে অভিজিৎ জেল থেকে ছাড়া পাবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

R G kar Incident Sandip Ghosh Abhijit Mondal R G Kar Medical College And Hospital Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy