Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Suvendu Adhikari

বিক্ষোভে ‘নিষেধাজ্ঞা’ স্পিকারের, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বয়কটে’ বিজেপি

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা আটকে রাখার প্রতিবাদে বিধানসভা চত্বরে বি আর আম্বেডকরের মূর্তির নীচে গত তিন দিন ধর্নায় বসেছিলেন শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী-বিধায়কেরা।

Suvendu Adhikari.

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৩
Share: Save:

গঙ্গাজল, নিষেধাজ্ঞা এবং বয়কট। বিধানসভার চলতি অধিবেশনে শাসক ও বিরোধী পক্ষের সংঘাতের উত্তাপ আরও বাড়ল শুক্রবার তিন ঘটনার ত্র্যহস্পর্শে!

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা আটকে রাখার প্রতিবাদে বিধানসভা চত্বরে বি আর আম্বেডকরের মূর্তির নীচে গত তিন দিন ধর্নায় বসেছিলেন শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী-বিধায়কেরা। তার পাল্টা বিধানসভার পোর্টিকোর নীচে বিক্ষোভে বসছিসেন বিজেপি বিধায়কেরা। পরস্পরের উদ্দেশে ‘চোর, চোর’ স্লোগানে তপ্ত ছিল আবহ। ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’দের বিক্ষোভে আম্বেডকর মূর্তি চত্বর ‘অপবিত্র’ হয়েছে, এমন দাবি করে এ দিন গঙ্গাজল ঢেলে ওই মূর্তির নীচে পুষ্পস্তবক দিয়ে আসেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কেরা। তার পরেই বিধানসভা চত্বরে সব রকম বিক্ষোভ কর্মসূচি কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিদান, সব কর্মসূচির জন্যই তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমকেও ‘সংযত’ আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাল্টা এই সিদ্ধান্তকে ‘গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক’ বলে চিহ্নিত করে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বয়কট’ করার কথা ঘোষণা করেছেন বিরোধী দলনেতা।

বিধানসভায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেছেন, ‘‘আগাম অনুমতি ছাড়া কোনও কর্মসূচি কেউ করতে পারবে না।’’ তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণ যে বিরোধীরা, তা স্পষ্ট করে তিনি আরও বলেন, ‘‘শাসক দল ধর্নার অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা তা নেয়নি। মূল প্রবেশপথ আটকে, অঙ্গভঙ্গি করে তাঁরা যা করেছেন, তাতে শান্তিভঙ্গ হতে পারত।’’ শাসক তৃণমূল প্রত্যাশিত ভাবেই স্পিকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। বিরোধীদের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্পিকার কোনও অন্যায় করেননি।’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সংবিধানকে যারা মানেই না, তারা আম্বেডকরের মূর্তির নীচে ধর্নায় বসে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘চোর’ বলেছে। এই চোরের দল সংসদে দিনের পর দিন কালো পোশাক পরে বাইরের চত্বরে ধর্না, বিক্ষোভ করে। এখানে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল, সেটা গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক। যেখানে সংখ্যার কোনও ভয় নেই যে, সরকার পড়ে যাবে, সেখানে বিক্ষোভ আটকাতে এই সব করতে হচ্ছে!’’ বিরোধী নেতার আরও দাবি, ‘‘তবে আমরা খুশি, বিজেপিকে যে কাজ করতে মানুষ পাঠিয়েছে, তা তারা করতে পেরেছে। আমরা যে ‘সেটিং’ বিরোধী নই, আক্রমণাত্মক বিরোধী, সেটা সরকার পক্ষই স্পষ্ট করে দিল!’’

কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা আদায়ে বিধানসভায় তৃণমূলের মন্ত্রী ও বিধায়কেরা তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিলেন। এই কর্মসূচির পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ শুরু করেছিল বিজেপিও। তৃণমূলের কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে, বুধবার ধর্নায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কয়েক হাত দূরে ভবনের মূল প্রবেশ-পথের সামনে বিক্ষোভে বসেছিলেন শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। তার রেশ ছিল বৃহস্পতিবারও। তার পরে এ দিন মাথায় করে গঙ্গাজল ভরা কলস এনে বিজেপি বিধায়কেরা তৃণমূলের ধর্নাস্থল ধুইয়ে দিলে শাসক শিবিরে ক্ষোভ চরমে ওঠে। সরকার পক্ষের উপ-মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘গঙ্গাজলে আম্বেডকরের মূর্তি ধুইয়ে নিজেদের পাপস্খলন করেছে বিজেপি।’’ জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগে আজ, শনিবার রাজ্য জুড়ে তৃণমূল প্রতিবাদ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, তৃণমলের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডিরা আবার অভিযোগ করেছেন, ধর্নায় তাঁরাও ছিলেন। সেই স্থল ‘অপবিত্র’ হয়েছে বলে দাবি করে বিজেপি আদিবাসীদের ‘অসম্নান’ করেছে। বিরোধী দলের সচেতক মনোজ টিগ্গার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘অদ্ভূত যুক্তি! আমিও তো আদিবাসী। তা হলে আমার নামে তৃণমূল থানায় এফআইআর করল কেন!’’

তৃণমূলের ধর্নায় যখন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছিল, বিজেপির বিক্ষোভ থেকে তা অবমাননা করা হয়েছে, এই অভিযোগে ১১ জন বিরোধী বিধায়কের নামে হেয়ার স্ট্রিট থানায় এফআইআর হয়েছিল। দ্বিতীয় দিনের ধর্নাতেও জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা হয়েছে, এই অভিযোগে ৭ জন বিজেপি বিধায়কের নামে আরও একটি এফআইআর হয়েছে। কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখা পাঁচ জন বিজেপি বিধায়ককে সোমবার তলবও করেছে। এর মধ্যে আরও বিতর্ক বেধেছে দলবদলু বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের নাম এফআইআরে থাকায়। বিজেপির টিকিটে আলিপুরদুয়ার থেকে নির্বাচিত ওই বিধায়ক বছরখানেক আগে তৃণমূলে যোগ দেন। লালবাজার জানিয়েছে, তাদের কাছে অভিযোগপত্রে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধেই এফআইআর করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিস্মিত সুমন এ দিন বলেন, ‘‘বলতে পারব না, কেন আমার নাম রয়েছে। আমি তো রাজ্যের প্রাপ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত (তৃণমূলের) ধর্নায় ছিলাম। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন।’’ যার প্রেক্ষিতে বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘বিধায়ক সুমন যেখানে নিজেই বলে দিচ্ছেন তিনি তৃণমূলে গিয়েছেন এবং দাবি করছেন স্পিকার তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন কিছু হবে না, তা হলে কি বুঝতে হবে স্পিকারও এই দলবদলকে ঘিরে খেলায় শামিল?’’

সিঙ্গুরে দলের নেতা সুহৃদ দত্তের স্মরণসভায় গিয়ে বিধানসভার ঘটনা প্রসঙ্গে এ দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘লোকসভা ভোট পর্যন্ত এখন এটাই চলবে। লোকসভা এবং বিধানসভায় বেকার ছেলেদের চাকরির কথা ওঠে না। দু’পক্ষই চাকরি খেয়েছে, চাকরি নিলাম করেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না, পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্কট বাড়ছে। সে সব নিয়ে একটাও কথা হচ্ছে না। সবই শুধু নাটক!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy