ফাইল চিত্র।
সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় পরিষেবা দিয়ে গোটা দেশে নজির গড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু এই বিপুল খরচের বোঝা টানতে গিয়ে এখন বছরের শেষ মাসে এসে বকেয়া টাকার ভারে কাহিল এসএসকেএম-সহ রাজ্যের তাবড় প্রথম সারির হাসপাতাল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজকেই বিপুল অঙ্কের টাকা মেটাতে হবে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে। মাসের পর মাস টাকার অপেক্ষায় থেকে এবং বকেয়া সত্ত্বেও ওষুধ ও সামগ্রী সরবরাহ করে সংস্থাগুলিও বিরক্ত। চিঠি লিখে স্বাস্থ্য ভবনকে তারা জানিয়েছে, এ ভাবে টাকা ছাড়া জিনিস সরবরাহ করা আর সম্ভব নয়। এই কারণে হাসপাতালে সময়মতো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ বা সামগ্রী আসছে না। একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, প্রচুর ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। অস্ত্রোপচারও ধাক্কা খাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত শুধু এসএসকেএমেরই ওষুধ খাতে প্রায় ১৭ কোটি এবং চিকিৎসা সামগ্রী খাতে ২৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। মাঝে এক সময়ে সরবরাহকারী সংস্থাগুলি ক্ষুব্ধ হয়ে জিনিস পাঠানো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন তড়িঘড়ি তাদের স্বাস্থ্য ভবনে ডেকে বৈঠক করে পরিস্থিতি সামলান কর্তারা।
গোটা দেশের নিরিখে এ রাজ্যেই সব চেয়ে বেশি পেসমেকার, স্টেন্ট ও অর্থোপেডিক ইমপ্লান্ট বসানো হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সম্প্রতি দেখা যায়, ভাঁড়ারে মাত্র ১৭টি সিঙ্গল চেম্বার পেসমেকার ও ১০টি ডুয়াল চেম্বার পেসমেকার রয়েছে। অথচ, সপ্তাহে এখানে শুধু সিঙ্গল চেম্বার পেসমেকারই বসানো হয় ৩০-৪০টি। তাতেও অপেক্ষমান রোগীর তালিকা সুদীর্ঘ। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ভাঁড়ারের বারবারই এমন বিপজ্জনক দশা হচ্ছে। একাধিক বার অস্ত্রোপচার বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়েছে। সরবরাহকারীদের হাতে-পায়ে ধরে সামগ্রী আনাতে হচ্ছে। এ ভাবে কি উচ্চমানের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব?’’
আরও পড়ুন: স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে মৃত চিঠির ঠিকানা, বেল টাওয়ার
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, সেখানে ওষুধ খাতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া। চিকিৎসা সামগ্রী খাতে বাকি প্রায় ন’কোটি। কিছু দিন আগে ওষুধ খাতে জুনের বকেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ মেটানো হয়েছে। তার পর থেকে সব ক’টি মাসের টাকাই বাকি। স্বাস্থ্য ভবনের কাছ থেকে ‘প্ল্যানড বাজেট’ খাতে ওষুধের জন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ২০ কোটি টাকা ও অন্য হাসপাতালগুলিতে ৫২ কোটি টাকা চেয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ২০ কোটির মধ্যে মাত্র পাঁচ কোটি ও ৫২ কোটির মধ্যে মাত্র ১৪ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে। ফলে আর জি কর, এন আর এস, কলকাতা মেডিক্যাল থেকে শুরু করে রামপুরহাট, উত্তরবঙ্গ, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মতো অনেক হাসপাতালে ওষুধের অসম্ভব আকাল তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর দায়িত্বে থাকা ডেপুটি সেক্রেটারি অরূপ দত্ত বকেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘টাকা বাকি পড়েছে। কেন পড়েছে, বলা যাবে না। এটা আমাদের দফতরের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যে হেতু এসএসকেএমে রোগীর সংখ্যা প্রচুর, তাই সেখানে বকেয়া স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। তবে আমরা ইতিমধ্যেই টাকা ছাড়ছি। সমস্যা মিটে যাবে।’’ কেন বারবার এমন অবস্থা হচ্ছে? তাঁর উত্তর, ‘‘এটা একটা প্রক্রিয়া।’’
জেলাগুলিতেও একই অবস্থা। উত্তর ২৪ পরগনার ডিআরএস (ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোর্স)-এ সম্প্রতি দেখা যায়, চিকিৎসা সামগ্রী খাতে প্রায় দু’কোটি টাকা ও ওষুধ খাতে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা বকেয়া। হুগলি ডিআরএসে ওষুধের প্রায় ২ কোটি টাকা মেটানো বাকি, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা সামগ্রী খাতে এখন তিন কোটি টাকা বকেয়া। যার বেশির ভাগটাই পেসমেকারের জন্য। তার পরেও পেসমেকার সরবরাহ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি। তবে আর বেশি দিন যে তা সম্ভব হবে না, সেটাও তারা জানিয়ে দিয়েছে। মেদিনীপুর ও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক-একটিতে চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য এক কোটি টাকার বেশি এবং বাঁকুড়া মেডিক্যালে ওষুধের জন্য চার কোটি ও চিকিৎসা সামগ্রীর প্রায় দু’কোটি টাকা বকেয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy