Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বিরোধীদের ঘর ভাঙছেই, চার বিধায়ক তৃণমূলে

কানাঘুষো শোনাই যাচ্ছিল। সোমবার ধর্মতলায় সেটা সত্যি হল। শহিদ দিবসের মঞ্চে শাসক দলে যোগ দিলেন বিরোধী দলের চার বিধায়ক। তিন জন কংগ্রেসের। এক জন সিপিএমের। শাসক দলে যোগ দেওয়া বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সচেতক তথা বীরভূমের হাসনের বিধায়ক অসিত মাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৫
Share: Save:

কানাঘুষো শোনাই যাচ্ছিল। সোমবার ধর্মতলায় সেটা সত্যি হল। শহিদ দিবসের মঞ্চে শাসক দলে যোগ দিলেন বিরোধী দলের চার বিধায়ক। তিন জন কংগ্রেসের। এক জন সিপিএমের।

শাসক দলে যোগ দেওয়া বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সচেতক তথা বীরভূমের হাসনের বিধায়ক অসিত মাল। তাঁর সঙ্গে এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের কংগ্রেস বিধায়ক মহম্মদ গোলাম রব্বানি, পুরুলিয়ার পারার বিধায়ক উমাপদ বাউড়ি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার সিপিএম বিধায়ক ছায়া দোলুই।

এখানেই শেষ নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই পুরসভার তিন কাউন্সিলরকে নিয়ে সিপিএম ছেড়ে শাসক দলে যোগ দিয়েছেন পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পান, উত্তরবঙ্গের কালচিনি ব্লক কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য মোহন শর্মা, আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা শহর কংগ্রেসের সভাপতি দীপ্ত চট্টোপাধ্যায়-সহ সেখানকার পুরসভার তিন কংগ্রেস কাউন্সিলর। রব্বানির সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন গোয়ালপোখর-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন সিংহও। সকলকে স্বাগত জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সভামঞ্চে বলেন, “আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার উন্নয়নে লড়াই করব।”

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে দিল্লির হাইকম্যান্ড প্রদীপ ভট্টাচার্যকে সরিয়ে অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করেছিল। ভোটে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা গত বারের তুলনায় কমলেও একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো হয়নি। অধীরের সভাপতিত্বে দল যখন কিছুটা উজ্জীবিত, সেই সময়েই আবার বড় রকমের ভাঙন লাগল দলে। এর আগে মুশির্দাবাদের সূতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস ও মালদহের গাজলের বিধায়ক সুশীল রায় কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। এ বার অসিতবাবু, রব্বানিরাও হাঁটলেন ইমানিদের পথেই। ফলে ২০১১ সালে বিধানসভায় কংগ্রেসের যে বিধায়কদের সংখ্যা ৪২ ছিল, তা কমে ৩৩ হল। যে জায়গাগুলিতে দলের অস্তিত্ব কিছুটা ছিল, সেই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও দল ভাঙনের মুখে পড়ল।

বিষয়টিকে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না অধীর বা কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা মহম্মদ সোহরাব। তাঁদের দাবি, এই ঘটনায় তাঁরা বিচলিত নন। কারণ, বিধায়করা দল ছাড়লেও কংগ্রেসের সাধারণ কর্মীরা কিন্তু ছাড়েননি। দলত্যাগী বিধায়কদের লক্ষ্য করে অধীরের তির্যক মন্তব্য, “তৃণমূলকে সুজলাসুফলা, শস্যশ্যামলা ভেবে যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে গেলেন, পরে তাঁরাই দেখবেন ওটা ফণিমনসার জঙ্গল।” অধীর ও সোহরাব দু’জনেরই দাবি, দলত্যাগী বিধায়কদের পদত্যাগ করে পুনরায় ভোটে দাঁড়ানো উচিত। দলত্যাগী বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজের ব্যাপারে আইনানুগ প্রক্রিয়াও শুরু হবে বলে সোহরাব জানান। ইমানি ও সুশীলবাবুর সদস্যপদ খারিজের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে কংগ্রেসের প্রবীণ বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “তৃণমূল আমাদের দল ভাঙাচ্ছে এটা যেমন ঠিক, তেমনই আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ কেন উৎসাহ হারাচ্ছেন, হাইকম্যান্ড ও রাজ্য নেতৃত্বের গভীর ভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।”

দল ছাড়লেন কেন? প্রশ্নটি এড়িয়ে অসিতবাবুর উত্তর, “মানুষের উন্নয়ন যজ্ঞে নিজেকে সামিল করতে চাই।” রব্বানি বললেন, “এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’

সিপিএম কিন্তু তাদের বিধায়ক ছায়াকে দল থেকে বহিষ্কার করছে না। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অভিযোগ করেন, “ওঁকে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এক জন মহিলা হয়ে গ্রামের মধ্যে উনি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন।” কী রকম? বিমানবাবুর দাবি, ছায়ার বাড়ি বধ্যভূমির মতো ঘিরে রাখা হত। বলা হতো, তৃণমূলে যোগ দিলে তবেই ছাড় পেতে পারেন। বিধায়ক হয়েও স্কুলে যেতে পারতেন না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy