প্রতীকী চিত্র।
স্টেশনে ইতিউতি ঘুরছেন বৃদ্ধা। ঢুকে পড়ছেন অচেনা বাড়িতে। এলাকা থেকে খবর পেয়ে ওই বৃদ্ধাকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। কিন্তু ‘দিদিমণি’থানায় থাকবেন, তা কী করে হয়! সোমবার রাতে থানা থেকে দিদিমণিকে বাড়ি নিয়ে যান তাঁর প্রাক্তন ছাত্র, মেমারির ডিভিসিপাড়ার রাজেশ শর্মা। আপাতত ওটাই তাঁর ঠিকানা।
পুলিশের একাংশের দাবি, মানসিক ভাবে অসুস্থ ওই বৃদ্ধা। যদিও তাতে আমল দিতে রাজি নন রাজেশবাবু। বৃহস্পতিবার সকালে দিদিমণির সঙ্গে চা খেতে খেতে তিনি বলেন, ‘‘উনি আমাদের স্কুলের অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষিকা ছিলেন। আমার ছেলেও ওঁর কাছে পড়েছে। শীতের রাতে দিদিমণি থানায় রাত কাটাবেন, এটা কখনও হয়। তাই বাড়িতে নিয়ে এসেছি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধা মেমারি বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের (ইউনিট ২) প্রাক্তন শিক্ষিকা। রসায়ন নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। বর্তমানে একাই থাকতেন বর্ধমান শহরের শাঁখারিপুকুর এলাকার একটি বহুতল আবাসনে। তবে বেশির ভাগ সময়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে নানা জায়গায় চলে যান তিনি।
ওই স্কুলের বর্তমান শিক্ষিকাদের অভিযোগ, পরিজনেরা উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু কেউ ওই শিক্ষিকার ন্যূনতম দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। শহরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের দাবি, ‘‘ওঁর পরিজনেদের কাছে আবেদন, কেউ একজন এসে চিকিৎসা সংক্রান্ত ফর্মে সই করে দিন। বাকি দায়িত্ব আমরা সামলে নেব।’’ মেমারি থানার পুলিশও জানিয়েছে, পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁরা দায়িত্ব নিতে চাইছেন না, বুঝিয়ে দিয়েছেন। ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিজনদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রশাসনিক ভাবে কী করা যায়, সেটাও খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
রাজেশবাবু ও তাঁর পরিবার অবশ্য দিদিমণির জন্য নিজেদের ঘর ছেড়ে দিয়েছেন। পেশায় কাঠমিস্ত্রি ওই যুবক বলেন, ‘‘আমাদের ছোট বাড়ি। দিদিমণিকে ঘরের খাটে শুতে দিচ্ছি।’’ রাজেশবাবুর স্ত্রী মালতিদেবী বলেন, “দিদিমণি যখন যা বলছেন, তখনই সে খাবার করে দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও উনি হঠাৎ করে রেগে যাচ্ছেন। কখনও অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। তাতে একটু মুশকিল হচ্ছে।’’ সে কারণে গত তিন দিন ধরে কাজে যাননি রাজেশবাবু। দিদিমণিকে ‘নজরে’ রেখে দিয়েছেন। দিদিমণি বলেন, “ও (রাজেশ) খুব ভাল ছেলে। আমাকে খুব যত্নে রেখেছে। এখানে সবার সঙ্গে কত গল্প করছি। বাড়িতে গেলে সেই তো একা!’’
কলকাতায় থাকেন ওই শিক্ষিকাপ এক দিদি। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মোবাইল বেজে যায়। মেসেজ করলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। বাড়ি ফেরার কথা বলতেই তেড়ে উঠে ছুটতে শুরু করেন বৃদ্ধা। বলতে থাকেন, ‘‘এরা দেখছি, আমাকে পাগল করে দেবে! এখানেই তো বেশ আছি।’’
মেমারি-জামালপুর রোডের ধারে রাজেশবাবুর বাড়ি। ‘দিদিমণি’কে কোনও রকমে ধরে এনে তিনি বলেন, “রাস্তার ধারে বাড়ি। সব সময় গাড়ি চলে। এ ভাবে ছোটাছুটি করলে কখন কী ঘটে যায়!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy