ক্ষিতি গোস্বামী
স্বরযন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন চেন্নাইয়ে। সেখানেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে অকস্মাৎ প্রয়াণ ঘটল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর (৭৬)। সন্ধ্যার উড়ানে কলকাতা নিয়ে এসে রবিবার রাতে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘পিস ওয়ার্ল্ড’-এ। শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা কাল, মঙ্গলবার।
বাম জমানার পূর্তমন্ত্রী এবং আরএসপি নেতা ক্ষিতিবাবুর আগে বাইপাস সার্জারি হয়েছিল, তার পরে অল্প-বিস্তর অসুস্থতা ছিলই। ফুসফুসের সমস্যার চিকিৎসাও চলছিল। সম্প্রতি তাঁর স্বরনালীতে পলিপ ধরা পড়ে। চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার ছোট অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। হাসপাতাল ছেড়ে দেওয়া হয় শুক্রবার। তার পরের ঘটনাবলি নিয়েই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। প্রাক্তন মন্ত্রীর পরিবার ও পরিজনেদের অভিযোগ, শেষ ২৪ ঘণ্টা কার্যত চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যু হয়েছে সদাহাস্যময় মানুষটির।
ক্ষিতিবাবুর স্ত্রী সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ও সর্বক্ষণের সঙ্গী তথা নিরপত্তারক্ষী মৃত্যুঞ্জয় চেলের বক্তব্য, শুক্রবার থেকেই বমি ও কথা বলতে গেলে দমবন্ধ হয়ে আসছিল ক্ষিতিবাবুর। যিনি অস্ত্রোপচার করেছিলেন, সেই চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে জেনারেল মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। সেইমতো শনিবার সকালে ফের ভর্তি করানো হয় তাঁকে। মৃত্যুঞ্জয়ের দাবি, ভর্তি করার পরে বমি এবং দমবন্ধ হয়ে আসার কষ্ট বাড়তে থাকে। চেষ্টা করেও ডাক্তার পাওয়া যায়নি। নার্সেরা ছিলেন। শনিবার রাত থেকে বাড়াবাড়ি হওয়ার পরে ভোররাতে চেস্ট পাম্প করা হয়। সেই সময় মুখ দিয়ে রক্ত উঠে ক্ষিতিবাবুর লড়াই থেমে যায় বলে পরিজনেরা জানাচ্ছেন। হাসপাতালে অবশ্য লিখিত কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। সুনন্দাদেবীর বক্তব্য, তিনি আরএসপি নেতৃত্বকেই গোটা ঘটনা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন ফোনে কথা বলেছেন সুনন্দাদেবীর সঙ্গে।
আরএসপি নেতাদের অধিকাংশই দলীয় কর্মসূচিতে জেলায় জেলায় থাকায় ক্ষিতিবাবুর শেষকৃত্য এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য মনোজ ভট্টাচার্য ও অশোক ঘোষ বলেন, শেষ কয়েক ঘণ্টার বিবরণ জেনে তাঁরা স্তম্ভিত। বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কি না, সেই ব্যাপারে দলে আলোচনা হবে। রাতে বিমানবন্দরে আরএসপি নেতা-কর্মীদের পাশাপাশিই উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও সুজিত বসু। ছিলেন ক্ষিতিবাবুর দুই মেয়েও।
প্রয়াত নেতার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে শোক-বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও ইতিবাচক উদ্যোগের পথে তা কখনও অন্তরায় হয়ে ওঠেনি। বালুরঘাটে ছাত্র আন্দোলন থেকে ক্ষিতিবাবুর উঠে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। উত্তরবঙ্গে একসঙ্গে যাওয়া, বন্যায় আটকে পড়ে ঘুরপথে ফেরার স্মৃতিচারণ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁদের পলিটব্যুরো বলেছে, ক্ষিতিবাবুর মৃত্যু সামগ্রিক ভাবে বাম আন্দোলনের ক্ষতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy