Advertisement
E-Paper

নবগঠিত কোর কমিটি স্থগিত করে মমতা বার্তা দিলেন প্রবীণ নেতাদেরও! অভিষেক-বৈঠক ঘোষণার পদ্ধতিও আলোচিত

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশ ছিল, এই কমিটির সদস্যেরা প্রতি দিন পালা করে তৃণমূল ভবনে বসবেন। আট দিনের মাথায় ওই কমিটির প্রথম বৈঠক হয় বৃহস্পতিবার।

Formation of core committee postponed: Did Mamata Banerjee give a message to old leaders

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫ ১৫:৪৪
Share
Save

বৃহস্পতিবার দুপুরের বৈঠকে জেলায় জেলায় ভোটার তালিকা স্ক্রুটিনির জন্য কোর কমিটি গঠন করার পরে রাতের মধ্যেই তা স্থগিত করে দিতে হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। তার পরেই শাসক শিবিরের অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা। ওই ঘটনাকে কয়েক জন ‘প্রবীণ’ নেতার উদ্দেশে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বার্তা’ হিসাবেই দেখছেন অনেকে। পাশাপাশি, ১৫ মার্চ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের সূচি যে ভাবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়েও শাসকদলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশ ছিল, ওই কমিটির সদস্যেরা প্রতি দিন পালা করে তৃণমূল ভবনে বসবেন। আট দিনের মাথায় ওই কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছে বৃহস্পতিবার। সেখানেই ঘোষণা করা হয়, প্রতিটি জেলার স্ক্রুটিনির কাজ দেখভালের জন্য কোর কমিটি গড়ে দেওয়া হল। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই ধরনের কোনও কোর কমিটির কথা দলনেত্রীর জানা ছিল না। সন্ধ্যায় তিনি গোটা বিষয়টি জানতে পারেন। এবং তার পরেই কমিটি গঠন স্থগিত হয়ে যায়। জানিয়ে দেওয়া হয়, কোর কমিটি কী হবে, না হবে, তা দলনেত্রী পরে ঠিক করবেন।

কোর কমিটি গঠনের বিষয়টি যে হেতু রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ঘোষণা করেছিলেন, তাই তৃণমূলের অনেক প্রবীণ নেতার ধারণা ছিল, ওই তালিকায় মমতার ‘সিলমোহর’ রয়েছে। কারণ, বক্সী নেত্রীকে না-জানিয়ে কিছু করেন না। বস্তুত, প্রবীণদের একটা অংশ হতবাক যে, কী ভাবে সর্বময় নেত্রীকে না-জানিয়ে এত বড় একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হল! কেন কোর কমিটি গঠন স্থগিত করা হল, তার আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা তৃণমূলের তরফে মেলেনি। তবে বক্সী-ঘনিষ্ঠ এক নেতা একান্ত আলোচনায় বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছিলেন, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লোকসভা এবং বিধানসভার অধিবেশন রয়েছে। কোর কমিটিতে সাংসদ-বিধায়কদের রাখা হলে তাঁরা সে ভাবে সময় দিতে পারবেন না। ‘অগ্রাধিকার’ ঠিক করে কোর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। ওই নেতার বক্তব্য, ‘‘অনেক সাংসদ এবং বিধায়ক আছেন, যাঁদের অধিবেশনের চেয়ে সাংঠনিক এই কাজে মনোনিবেশ করা জরুরি। আবার পাশাপাশিই এমনও অনেকে আছেন, যাঁদের সংসদ বা বিধানসভার অধিবেশনে থাকা জরুরি। সেই সূচকেই কোর কমিটির পুনর্গঠন হবে।’’

এই যুক্তি আবার অনেকের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, তৃণমূল রাজ্যের শাসকদল। সংসদে তারা বিরোধী পরিসরে অন্যতম বড় শক্তি। রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে তৃণমূলের সাংসদসংখ্যা এখন ৪২। সেই দলে সংসদ এবং বিধানসভার অধিবেশনের সূচি না জেনে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন না।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের মুখপত্রের সান্ধ্য সংস্করণের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবারের প্রভাতী সংস্করণে লেখা হয়েছে ‘কোর কমিটি স্থগিত’। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই পট পরিবর্তনকে শাসকদলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জন্য অনেকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন। ‘তাৎপর্য’ হল বক্সীর গঠিত কোর কমিটি দলনেত্রী মমতার স্থগিত করে দেওয়া, যা থেকে অনেকে এই উপসংহারে আসতে চাইছেন যে, দলের ‘প্রবীণ’ নেতাদেরও বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা।

তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে অভিষেকের আহূত বৈঠকের সূচি ঘোষণার ‘পদ্ধতি’ নিয়ে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ছিলেন না অভিষেক। যদিও মমতার গড়ে দেওয়া কমিটির দ্বিতীয় নামটিই ছিল অভিষেকের। প্রথম নাম ছিল বক্সীর। তৃণমূল ভবনের বৈঠকের পরেই জানা যায়, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ১৫ মার্চ বিকাল ৪টায় জেলার নেতাদের সঙ্গে ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠক করবেন। কিন্তু অভিষেকের বৈঠকের কথা দলের নেতারা পরে জানতে পেরেছেন। অনেকেই জেনেছেন বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে গন্তব্যে যাওয়ার পথে মোবাইল ফোনে সংবাদমাধ্যমের খবর দেখে। আবার অনেকে জেনেছেন তৃণমূল ভবনের উপর থেকে নীচে নামতে নামতে। ‘পদ্ধতি’ নিয়ে আলোচনা সে কারণেই।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকের একেবারে শেষ পর্বে যখন সকলে এক এক করে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন এক জন নেতৃত্বের কানে কানে গিয়ে কিছু বলেন। তার পরেই অভিষেকের ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকের কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তত ক্ষণে অনেকে বেরিয়ে গিয়েছেন আবার অনেকে নীচে নামছেন সিঁড়ি বেয়ে।

কেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ভার্চুয়াল বৈঠকের কথা শুরুতেই ঘোষণা করা হল না, কেন একেবারে শেষে কার্যত ‘ভাঙা হাটে’ বলা হল, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে শাসকদলের অন্দরে। অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের অনেকের বক্তব্য, ‘‘সাধারণ সম্পাদকের বৈঠকের সূচি ঘোষণার প্রক্রিয়া দায়সারা ভাবে করা হয়েছে।’’ অনেকে আবার ওই ঘটনার সঙ্গে কোর কমিটি স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকেও জুড়ে দেখতে চাইছেন। অনেকের বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পরে অভিষেকের পৃথক বৈঠকের ‘প্রয়োজনীয়তা’ খুঁজতে শুরু করেছেন।

তবে আলোচনা যা-ই হোক, বক্তব্য সকলেরই এক— গত কয়েক মাস ধরে মমতা বারংবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দল এবং সংগঠনে তিনিই শেষ কথা বলবেন। অন্য কেউ নন। সেই বার্তাকে প্রবীণ নেতাদের একাংশ তাঁদের ‘জয়’ হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে তাঁরা সম্ভবত খানিক আগ বাড়িয়ে পদক্ষেপ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু রাত পোহানোর আগেই মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দলের সুতো এখনও পর্যন্ত তাঁর হাতেই। ধরলে তিনি ধরবেন। ছাড়লেও তিনিই সুতো ছাড়বেন। সে ‘প্রবীণ’ হোক বা ‘নবীন’।

CM Mamata Banerjee Abhisek Banerjee Voter List Correction

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}