গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বন আধিকারিক মনীষা সাউয়ের সঙ্গে কারামন্ত্রী অখিল গিরির দুর্ব্যবহার নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল তৃণমূল। সেই ঘটনা নিয়ে সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি খামবন্দি রিপোর্ট দিতে চলেছেন বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। রবিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। বিরবাহা বলেছেন, ‘‘ওই ঘটনা নিয়ে আগামী কাল বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি সরকারি রিপোর্ট দেব।’’ তবে ওই খামবন্দি রিপোর্টে কী থাকবে, তা জানাতে চাননি তিনি। বিষয়টি দফতরের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে মনে করা হচ্ছে, ওই আধিকারিকের সঙ্গে অখিলের করা দুর্ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট থাকতে পারে। ঘটনার কথা জানাজানি হতে ওই বন আধিকারিকের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছিলেন বিরবাহা। তখনই বোঝা গিয়েছিল ঘটনার বিরুদ্ধে কোনও বড়সড় পদক্ষেপ করতে চলেছে বন দফতর। আর রবিবার সকালেই সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী স্বয়ং। সোমবার বিধানসভায় বাংলা ভাগ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং বন মহোৎসবে অংশ নেবেন মমতা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অখিল মুখোমুখি হবেন।
ঘটনার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যম মারফত ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় জনমানসে। প্রশ্ন ওঠে, কী ভাবে এক জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তথা মন্ত্রী কোনও সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারেন। বিজেপির আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘বিধায়ক অখিল গিরি আগে আমাদের সম্মাননীয় রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি কোনও শাস্তির সম্মুখীন হননি। এখন মৌখিক ভাবে এক জন মহিলা সরকারি আধিকারিককে গালিগালাজ করেছেন এবং হেনস্থা করেছেন। তাঁর এমন আচরণ সত্ত্বেও সাহসী আধিকারিক ভয় পাননি। এ জন্য আমি তাঁকে স্যালুট করি। তাঁর নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন, কিন্তু অত্যন্ত গর্বিত যে আমাদের রাজ্যে এখনও এমন সাহসী ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের ইউনিফর্মের মর্যাদা বজায় রাখেন এবং কী ভাবে এর মর্যাদা রক্ষা করতে হয় তা জানেন।’’
এমন আক্রমণের পরেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে শাসকদল। মহিলা অফিসারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি মনীষাকে জানান, দল এই ঘটনাকে সমর্থন করে না। কথায় কথায় মহিলা বনাধিকারিক কুণালকে জানান, তিনি শুধু ডিউটি করছিলেন। নিজের দায়িত্ব পালন করছিলেন। উত্তরে কুণাল তাঁকে জানান যে, সেটা বন দফতরের নিজস্ব বিষয়। তিনি শুধু দলের কথাই বললেন। মুখ্যমন্ত্রীও ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলেই দলীয় সূত্রে দাবি। তাজপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশ মতো ‘বেআইনি দখলদার’ উচ্ছেদ করতে গিয়ে অখিলের বাধার মুখে পড়েছিলেন বনকর্মীরা। সেই সময় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মধ্যে ওই মহিলা অফিসারকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিতে শোনা যায় রামনগরের বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী অখিলকে। তিনি বলেন, ‘‘আপনার আয়ু ৭-৮ দিন, ১০ দিন!’’ ওই মহিলা অফিসারের উদ্দেশে ‘জানোয়ার’, ‘বেয়াদব’ জাতীয় শব্দও প্রয়োগ করতে শোনা যায়। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। সেই ঘটনায় এ বার মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই রিপোর্ট জমা পড়তে চলেছে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের রাজনীতিতে ইদানীং অখিল বেশ ‘চাপ’-এর মধ্যে রয়েছেন বলেই খবর। কারণ, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি লোকসভার অধীন তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র রামনগর থেকে বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী ৯১৬৮ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। যদিও, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অখিল জয় পেয়েছিলেন ১২৫১৭ ভোটে। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় আপাতত ঘরে-বাইরে বেজায় ‘চাপে’ রামনগরের এই প্রবীণ বিধায়ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy