প্রতীকী ছবি।
শীত পড়তেই খোঁজ পড়ে নলেন গুড়ের। নতুন নলেন গুড় যেন উৎসবের বার্তা বয়ে আনে। কিন্তু এ বার সেই নলেন গুড় চেখে আগের মতো স্বাদ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, নওদা এলাকার অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, আগে এই এলাকার নলেন গুড়ের যে মান ছিল, তা অনেকটাই কমেছে।
এলাকার বাসিন্দাদের মতে, তার প্রধান কারণ, শিউলির বা গাছে উঠে রস সংগ্রহ করার মানুষের অভাব। খেজুর গাছ কেটে তার গায়ে নলি বসিয়ে এই গুড় সংগ্রহ করা হয় বলেই একে নলেন গুড় বলা হয় বলে অনেকের মত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গাছের গায়ে এই নলি কাটার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। একেবারে পাকা হাত ছাড়া তা সম্ভব নয়। কিন্তু খেজুর গাছ বেয়ে উঠে তেমন পাকা হাতের কাজ করবেন, এমন শিউলির আজকাল আর
দেখা পাওয়া যায় না। তাঁদের অনেকেই অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। এখন নলেন গুড়ের মরসুমে যাঁরা গাছ কেটে কিছু রোজগার করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের অনেকের হাতই তেমন প্রশিক্ষিত নয়। তাই মিষ্টি রসও তেমন মিলছে না।
আবার অনেকের বক্তব্য, নলেন গুড়ে যা হওয়া উচিত, তার থেকে বেশি মিষ্টি চান ক্রেতারা। তাই গুড়ে চিনি মেশানো হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের এই প্রান্তে স্থানীয় বাজারে তিন ধরনের গুড় মিলছে। একটির দাম প্রতি কিলোগ্রাম ৮০-৯০ টাকা। পরেরটার দাম ১২০-১৩০ টাকা। এর পর যে গুড় বাজারে মিলছে তার দাম ১৮০-২০০ টাকা। এর মধ্যে ৮০-৯০ টাকার যে গুড় বাজারে সব থেকে বেশি বিকোচ্ছে, সেই গুড়ে চিনি মেশানো হচ্ছে বলে গ্রাহকদের দাবি। গুঁড়ো লাল মিহি সেই সস্তার চিনির বাজার দর ২৫-৩০ টাকা।
ভাল মানের নলেন গুড় না আসায় আক্ষেপ করছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, অতীতে নওদার আমতলায় ভাল মানের গুড় মিলত, এখন সেখানেও ভেজাল গুড় বিক্রি হচ্ছে। বেলডাঙার মিষ্টান্ন কারবারি চন্দন সাহা বলেন, “ভাল গুড় একেবারে মিলছে না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সেই গুড় রোজ মুম্বই পাড়ি দেয়। সেই মানের গুড় আমাদের কাছে আসে না।” যে টুকু আসে, তা দিয়েই তৈরি হচ্ছে রসগোল্লা, চমচম, দুধপুলি, ক্ষীরপুলি, রসমালাই, তৃপ্তিভোগ, নলেন গুড়ের সন্দেশ, কালাকাঁদ, মাখা সন্দেশ। মিষ্টান্ন বিক্রেতা সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভাল খেজুর গুড়ের দাম প্রায় দু’শো টাকা। সেই গুড় দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি করায় দামও একটু বেশিই হচ্ছে। তবে পৌষ ও মাঘে নলেন গুড়ের মিষ্টির যথেষ্ট চাহিদা থাকে।’’ আর এক মিষ্টি ব্যবসায়ী খুরমান শেখ বলেন, ‘‘ভাল মিষ্টির কদর এখনও রয়েছে। নলেন গুড়ের সন্দেশের চাহিদা সর্বত্র।’’ এলাকার বাসিন্দা রাধেশ্যাম সামন্ত বলেন, ‘‘আগের মতো নলেন গুড়ের স্বাদ না থাকলেও এই কনকনে শীতে নলেন গুড়ের মন্ডা, মিঠাই ছাড়া ভাবা যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy