প্রতীকী ছবি।
নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি চলছেই। তাতে অবশ্য ফুলের বাজারের ‘আগুন’ নেভেনি! বরং দুর্গাপুজোর থেকে কালীপুজোর ফুলের বাজারে আগুনের তাপ আরও বেড়েছে। আর তাই দীপাবলির উৎসবে ফুল কিনতে গিয়ে হাত পোড়াতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ব্যবসায়ীরাও অবশ্য দাম বাড়ার অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘দুর্গাপুজোর থেকেও কালীপুজোয় ফুলের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।’’
ফুল চাষিদের দাবি, দুর্গাপুজোর আগে টানা ভারী বৃষ্টিতে ফুলের বাগানে জল জমে গিয়ে গোড়া পচে ফলন নষ্ট হয়েছিল। ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেটা পুষিয়ে নিতেই এর পরের কয়েক দিন শুকনো মরসুমে ‘জলদি’ ধরনের ফুল অর্থাৎ গাঁদা, দোপাটি, অপরাজিতার চাষ করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু সেখানেও সব নষ্টের মূলে নিম্নচাপের বৃষ্টিকেই দায়ী করছেন মেদিনীপুর, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ অন্যান্য জায়গার ফুল চাষিরা। তাঁদের দাবি ফের দু’-তিন দিনের বৃষ্টিতে ফুলের বাগানে জল জমেছে। পাপড়ির মধ্যে জল ঢুকে তাতে পচন ধরেছে। গাঁদা, অপরাজিতা, দোপাটি ফুলে দাগ এসেছে। ফলে অনেক ফুলই নষ্ট হয়েছে।
চাষিদের আরও দাবি, দুর্গাপুজোর থেকে কালীপুজোর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু উৎপাদনের সময়ে ক্ষতি হওয়ায় জোগান বেশ কম। আর সে তুলনায় চাহিদা অত্যধিক বেশি হওয়ায় ফুলের দামও এখন আকাশছোঁয়া। মল্লিকঘাটের এক ফুল ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘কত আর লোকসান করে বেচব। তাই অগত্যা দাম বাড়িয়ে যতটা সম্ভব লোকসান মেটানো যায় তারই চেষ্টা।’’
পুজোর উদ্যোক্তা থেকে ফুল চাষি প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, কালীপুজোয় প্রধান ফুল জবা হলেও অনেক পুজো কমিটিই প্রতিমার সজ্জায় বিভিন্ন ফুল ব্যবহার করেন। কিন্তু রাজ্য জুড়ে ফুলের দাম বৃদ্ধিতে মাথায় হাত পুজো কমিটিগুলির। অনেকেই বাধ্য হয়ে সাজসজ্জার বাজেটে কাটছাঁট করেছেন। যেমন, হাওড়ার এক পুজো কমিটির সদস্য আশিস চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ফুলের যা দাম তাতে হাত দেওয়াই দায়। দুর্গাপুজোর পরেও দাম তো কমলই না, উল্টে বেড়ে গেল।’’
বুধবার ভোর থেকেই মল্লিকঘাটে জড়ো হতে শুরু করেন ফুল চাষিরা। চড়া দামে পসরা সাজান জবা, পদ্ম, অপরাজিতা, গোলাপ, গাঁদা ফুলের। হাজারটি জবা ফুলের কুঁড়ির দাম ৪০০-৪৫০টাকা।
বছরের অন্য সময়ে খুব বেশি হলে ওই ফুলের দাম থাকে ৭০ থেকে ১০০টাকা। অগত্যা তাই অনেকেই জবার কুঁড়ির বদলে বেছে নিচ্ছেন ফোটা জবাকে। তাতে কিছুটা সাশ্রয় হলেও, টাটকা ফুল মিলছে না।
কেজি প্রতি রজনীগন্ধা ৩৫০টাকা, বেলফুল ৫৫০ টাকা, জুঁই ৩৫০টাকা, এক একটি গোলাপ ৭-৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুর্গাপুজোর সময়ে যে গাঁদা ফুল এক কেজির দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা, সেটিই এখন বিকোচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকায়। আবার কমলা রঙের তিন ফুট গাঁদার মালা ৩০টাকা করে ও হলুদ রঙের গাঁদার মালা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। পাশাপাশি শিশির পড়তে শুরু করায় পদ্মের ফলনও কমেছে। ফলে দুর্গা পুজোর সময় ৭-৮টাকায় পদ্ম বিক্রি হলেও এখন তার দাম ২০ টাকা করে।
সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে অতি বৃষ্টি আর কালীপুজোর আগে নিম্নচাপেই এ বারে আগুন লেগে গিয়েছে ফুলের বাজারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy