বাঁকুড়ায় জলের তলায় সেতু। নিজস্ব চিত্র
একটু একটু করে উন্নতি হচ্ছে হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম বর্ধমান এই তিন জেলার কিছু অংশের বন্যা পরিস্থিতির। ওই তিন জেলার জলমগ্ন এলাকাগুলির অনেক জায়গা থেকেই জল নামতে শুরু করেছে। তবে প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ, দ্রুত স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনার।
হাওড়ার কোথাও কোথাও জল নামতে থাকায় ফের জাগছে রাস্তা। ত্রাণশিবির থেকেও ঘরে ফিরছেন অনেকে। আমতা দু'নম্বর ব্লকে নতুন করে জল ঢোকেনি। তবে জল নামার গতি স্লথ। এখনও অন্তত সাত থেকে আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। জমা জল সরাতে উদ্যোগী হয়েছে ব্লক প্রশাসন এবং সেচ দফতর। আমতা দু'নম্বর ব্লকের ১০ থেকে ১২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়েছিল। এক মাত্র ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া চিতনান গ্রাম ছাড়া বাকি সব পঞ্চায়েত এলাকারই জল নামছে খুবই ধীরে ধীরে। বিনোলা কৃষ্ণবাটি, থলিয়া, ঝামটিয়া, অমরাগড়ি, ঝিকিরা, তাজপুর এই সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চাষের জমি সবই এখনও প্লাবিত।
উদয়নারায়ণপুরের দশ খানা গ্রাম এখনও প্লাবিত। কোথাও রাস্তার উপর কোমর সমান জল, কোথাও আবার এক তলা বাড়ি এখনও জলের তলায়। উদয়নারায়ণপুর ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, কুরচি শিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গজা এলাকার পশ্চিমপাড়া, বাবুরবাগান-সহ কয়েকটি জায়গা এখনও জলমগ্ন। এ ছাড়া হরালি গ্রাম পঞ্চায়েতের পেয়ারাপুর, সুলতানপুরও জলমগ্ন। বিধিচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বরদা কুলটিকারি পাঁচারুল গ্রাম পঞ্চায়েতের ইটারাইও প্লাবিত।
হুগলির খানাকুল এক নম্বর ব্লকের প্লাবন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। খানাকুল দুই নম্বর ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও জলমগ্ন। মারোখানা,জগতপুর,পলাশপাই,ধান্যগড়ি এই চারটি পঞ্চায়েতের জল অবশ্য এখনও নামেনি। গ্রামবাসীদের অবশ্য দাবি, ‘২০১৭ সালের পর এত বড় প্লাবন আর হয়নি।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও ৬০টি শিবিরে আট হাজার মানুষকে রাখা হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। ৬০টি বাড়ি জলে ভেসে গিয়েছে। হুগলির জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে এক মাস লাগবে। খানাকুল এক নম্বর ব্লকের জল কমছে। তবে এই মুহুর্তে বড় চ্যালেঞ্জ, দুর্গতদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। জল নামার সময় পেটের রোগ ঠেকাতে আগে থাকতেই বিলি করা হচ্ছে ওষুধ। ব্লক হাসপাতালে বেশি পরিমাণ অ্যান্টি ভেনামও মজুত করা হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ঘাটাল যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘাটালের অনুকূল আশ্রমের মাঠে হেলিপ্যাড করা হচ্ছে। সেখানেই অবতরণ করার কথা তাঁর হেলিকপ্টারের। তবে সড়ক পথেও আসতে পারেন, তাই বিকল্প ব্যবস্থাও থাকছে। ঘাটাল পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকা এখনও জলমগ্ন। যদিও জল নামতে শুরু করেছে। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখনও জল রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘাটল পৌঁছনর কথা। সেখান থেকে বিবেকান্দ মোড় যাবেন গাড়িতে। সেখান থেকে নৌকায় করে পরিদর্শন করতে পারেন তিনি।
ঘাটালে ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে এনডিআরএফ-এর দল। ঘাটালের মনসুখার এক সন্তানসম্ভবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে এনডিআরএফ। পাশাপাশি ওই গ্রাম থেকেই এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শনিবার বিকেল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টির জেরে গন্ধেশ্বরী, দারকেশ্বর-সহ বাঁকুড়ার সব নদীরই জলস্তর বাড়ছে। তার জেরে জলমগ্ন গন্ধেশ্বরীর উপর ছাতনা এবং গঙ্গাজলঘাঁটি এই দুটি ব্লকের মধ্যে সংযোগকারী চামকরা সেতু। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই ভারী বৃষ্টিতে গন্ধেশ্বরী নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সেতু জলের তলায় চলে গিয়েছিল। পরে জল নেমে যাওয়ায়, বৃহস্পতিবার থেকে এই সেতু দিয়ে যাতায়াত শুরু হয়েছিল। কিন্তু ফের একই বিপত্তি। সেতুর তিন থেকে চার ফুট উপর দিয়ে বইছে গন্ধেশ্বরীর জল।
প্লাবিত এলাকাগুলিতে লাগাতার বর্ষণে চাষাবাদে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু এলাকাতেই ধান, পাট এবং নানা শাকসবজি চাষে ক্ষতি হয়েছে। সেই ছবি ধরা পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গাতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy