জল থই থই। নিজস্ব চিত্র।
কোথাও হাঁটু জল, তো কোথাও আবার বুক সমান। যে দিকেই চোখ যায় শুধু জল আর জল। গত কয়েক দিনে এই ছবিই উঠে আসছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া এবং হুগলির বিভিন্ন এলাকা থেকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই এই জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। শুক্রবার ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। ঘাটাল এবং দাসপুর এলাকায় নৌকা করে বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের আরও দুই মন্ত্রী হুমায়ুন কবির এবং শিউলি শাহা। বন্যায় মৃতদের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্যও তুলে দেওয়া হয়। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলার বিডিও, এসডিওদের নিয়ে বৈঠক করেছেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। রবিবার ঘাটালে পরিদর্শনে যেতে পারেন মমতা।
পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের অবস্থাও শোচনীয়। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির জমা জলে প্রতি দিন আতঙ্কে কাটাতে হচ্ছে ওই এলাকার মানুষকে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ঘরের মধ্যে সাপ ঘুরে বেড়াতেও দেখা গিয়েছে কোথাও কোথাও। জলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন অথচ প্রশাসনের কারও টিকি পর্যন্ত মেলেনি এখনও, এমনই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে দুর্গত মানুষগুলির মধ্যে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হলদিয়া পুরসভার ২২, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শতাধিক মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়ে আছেন। প্রায় ৯ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও জল নামার কোনও লক্ষণ নেই। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিবেড়িয়া পশ্চিম এলাকার গৃহবধূ অর্চনা জানা বলেন, “এত দিন ধরে জলের মধ্যে আটকে রয়েছি আমরা। বাড়িতে রান্নাবান্না হচ্ছে না। কিন্তু কোনও জনপ্রতিনিধির দেখাই মিলছে না। কী ভাবে মানুষগুলো বেঁচে আছেন তার খোঁজ নেননি কেউই।” আরও এক গৃহবধূ স্বপ্না মাইতি বলেন, “মাটির চালার বাড়িতে রয়েছি আমরা। ঘরের ভেতর এক হাঁটু জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাছ, বিষধর সাপ। কোনওক্রমে প্রাণ হাতে নিয়েই বাড়ির খাটের ওপর উঠে বসে রয়েছি পরিবারের সবাই। রান্না করতে পারছি না, খাবার নেই। এই জমা জলের দুর্ভোগ কবে মিটবে, সে বিষয়ে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। গত ৩০ বছরে এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।”
হাওড়া এবং হুগলিতেও বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জল না কমায় এখনও হুগলির খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তার ধারে ত্রিপল ও প্লাস্টিক টাঙিয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই দিন কাটাচ্ছেন। বহু কাঁচা বাড়ি বন্যার জলে ভেঙে গিয়েছে। বন্যায় ডুবেছে রাস্তাঘাট। বন্ধ যান চলাচল। খানাকুলবাসীদের কাছে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে নৌকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না। খাবার নেই। ডুবে গিয়েছে টিউবওয়েল। ফলে পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। খানাকুলের বেশ কিছু এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা নৌকা ও স্পিড বোট নিয়ে টহলদারি চালাচ্ছেন। নদীর জল কমতে শুরু করলেও এখনও আতঙ্ক কাটছে না। তার মধ্যে ফের বৃষ্টির ভ্রুকুটিতে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
অন্য দিকে, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে অধিকাংশ গ্রামে জলস্তর কমতে শুরু করেছে। সেখান থেকে জল আমতার দিকে নামতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ফলে বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আমতায়। উদয়নারায়ণপুরের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কমপক্ষে ৮৫টি গ্রাম জলমগ্ন ছিল। এখন প্রায় ৩০টি গ্রামে জল নেমে গিয়েছে।
টানা কয়েক দিনের নাগাড়ে বৃষ্টিতে জল বেড়েছে বর্ধমানের খড়ি নদীতে। প্রবল জলের চাপে শুক্রবার মন্তেশ্বর ব্লকের শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে বর্ধমান ১ নম্বর ব্লকের যোগাযোগাকারী একমাত্র সেতু ভেঙে যায়। ফলে ২০টি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খবর পেয়ে মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে দুই ব্লকের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দু’টি নৌকার আবেদন করেছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কয়েক দশক ধরে এই কাঠের সেতুটি কংক্রিটের করার জন্য তাঁরা আবেদন করে আসছেন। কেউ শোনেনি তাঁদের কথা। শুধু তাই নয়, জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকরা কেবলই শুকনো প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গিয়েছেন। সেতু ভেঙে যাওয়ায় এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে।
এক দিকে যখন বৃষ্টির ভ্রুকুটি, অন্য দিকে গঙ্গার জল বাড়তে থাকায় নদিয়ার শান্তিপুর চরসারাগড় এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সারা রাত ধরে ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে তিনটি পরিবারের ঘরবাড়ি, চাষের জমি। বছরখানেক আগেই এই এলাকায় বিঘার পর বিঘা চাষের জমি-সহ বেশ কয়েকটি বাড়ি গঙ্গার গর্ভে চলে যায়। বছর ঘুরতে চললেও অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy