সুকান্ত সিংহ রায়
জিটি রোডে বিদ্যুতের তারের উপরে ভেঙে পড়েছিল গাছের ডাল। আর তা কাটতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল সুকান্ত সিংহ রায় (২৭) নামে এক দমকলকর্মীর। বুধবার দুপুরে বেলুড়ে এই ঘটনায় সিইএসসি-র বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করার পাশাপাশি কামাল আখতার, শান্তনু মাহাতো এবং রাজনারায়ণ রায় নামে তিন জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার পর সিইএসসি-র ভূমিকা প্রসঙ্গে কড়া মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, ঝড়ের পর বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে আগেই কড়া মনোভাব নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনও সিইএসসি-র ‘বিকল্প’ প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যান তিনি।
দমকল সূত্রের খবর, তারকেশ্বরের নারায়ণপুরের বাসিন্দা সুকান্ত কয়েক বছর আগে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে দমকলের চাকরিতে যোগ দেন। দক্ষিণ কলকাতা দমকল কেন্দ্র থেকে তিনি বালিতে ডেপুটেশনে ছিলেন। এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ অন্যদের সঙ্গে গিয়েছিলেন গাছ কাটতে।
বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিইএসসি-র মিসলিডিং তথ্য ছিল। বলেছিল, ওখানে কারেন্ট নেই, উঠতে পারেন। কিন্তু কারেন্টেই ছেলেটি মারা গেল। নেগলিজেন্স ইজ অলসো এ ক্রাইম। পুলিশকে বলব, এটা ক্রিমিনাল অফেন্স, ক্রাইম। যার অবহেলার জন্য এটা হল, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অর্থে এর বিকল্প হয় না। তা সত্ত্বেও ডিজ়াস্টারে, কোভিডে সামনে থেকে যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা এবং একটা সরকারি চাকরি তাঁর পরিবারের জন্য। যদি গ্রহণ করেন..।’’
আরও পড়ুন: শ্রমিক ট্রেন নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ মমতার
জিটি রোডে বেলুড় শ্রমিক মঙ্গল কেন্দ্রের ভিতরে কদম গাছের একটি অংশ বিপজ্জনক ভাবে ভেঙে পড়েছিল বিদ্যুতের তারের উপর। বালি দমকল কেন্দ্রের ওসি রামকৃষ্ণ সাহা জানান, সিইএসসি-র থেকে বাঁশের মই নিয়ে রাস্তার পাশের বাতিস্তম্ভে ঠেসান দিয়ে উপরে উঠে গাছের ডালটি কাটার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সিইএসসি-র কর্মীরা জানান, ওই জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তা জানার পরেই মই বেয়ে উপরে উঠেছিলেন সুকান্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাছ কাটার করাত নিয়ে বাতিস্তম্ভের একেবারে উপরে তারের সংযোগস্থলের সামনে উঠতেই সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে স্থির হয়ে যান সুকান্ত। রামকৃষ্ণবাবুরা মই নাড়াতেই নীচে পড়েন ওই যুবক। তাঁকে কোলে নিতে গিয়ে করাতের আঘাতে পায়ে চোট পান রামকৃষ্ণবাবু। তিনি বলেন, ‘‘তখন আর কোনও সিইএসসি কর্মীর দেখা মেলেনি।’’ খবর পেয়ে যায় বেলুড় থানার পুলিশ। সুকান্তকে ঘুসুড়ির জয়সওয়াল হাসপাতাল থেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। সেখানে যান দমকলের ডিজি জগমোহন ও হাওড়ার পুর কমিশনার ধবল জৈন। এলাকায় গিয়ে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘এটা পুরোপুরি সিইএসসি-র ব্যর্থতা। সব জায়গাতেই ওঁদের আগাম জানিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: বাড়ি মেরামতে ২০ হাজার টাকা, তৈরি ২ টাস্কফোর্স
অভিযোগ অস্বীকার করে সিইএসসি-র হাওড়া ডিভিশনের এক আধিকারিক জানান, তাঁদের একটি গাড়ি জয়সওয়াল হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল। তা থেকে মই কেড়ে নিয়ে দমকলকর্মীরা দাবি করেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সেটাও করা হয় বলে জানিয়ে ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের দেখানো জায়গা ছেড়ে ওঁরা অন্য জায়গায় কাজ করতে যাওয়ায় বিপত্তি ঘটেছে। মই দিয়ে কর্মীরা চলে গিয়েছিলেন। পরে ফিরে জানতে পারেন ঘটনাটি।’’ প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই বিদ্যুতের স্তম্ভে দু’টি ফেজ় রয়েছে। একটি ফেজ়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হলেও একটি চালু ছিল। আর হাতের করাত তা ছুঁতেই সুকান্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
খবর পেয়ে বালিতে যান সুকান্তের বাবা সুশান্ত ও দাদা সুদীপ্ত। তাঁরা জানান, তারকেশ্বর থেকে বাইকে বালিতে যেতেন সুকান্ত। এ দিন ভোরে বৌদির কাছে আলুর তরকারি খেতে চান। টিফিনবক্সে তা নিয়েই অফিসে রওনা দিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরলেন বটে, তবে শববাহী গাড়িতে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy