Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Force Majeure Clause

পণ্য সরবরাহে ধাক্কা, রেহাই জরিমানায়

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০৩:৫১
Share: Save:

মারণ ভাইরাস করোনা বিশ্ব জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তার ধাক্কা লেগেছে কেন্দ্রের কেনাকাটাতেও। প্রশাসন যন্ত্র সচল রাখতে বহু জিনিসের বরাত দেওয়ার পরেও হাতে পাচ্ছে না বিভিন্ন মন্ত্রক। কারণ, করোনা-আতঙ্কে সমুদ্রপথে চিন থেকে পণ্য আসার পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। মাসখানেক ধরে গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস (জেম)-এর মাধ্যমে সরকারি জিনিসপত্র পেতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রের বিভিন্ন বিভাগ। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না-পেরে গুনাগার দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সরবরাহকারী সংস্থায়।

ঝিমিয়ে পড়া আর্থিক পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা দেশের কারবারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা। সেই জন্য করোনা সংক্রমণকে আপৎকালীন পরিস্থিতির তালিকায় এনে বিশেষ নির্দেশিকা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বিভাগ। আগামী ৯০ দিনের জন্য ‘ফোর্স মেজিওর ক্লজ়’-এ করোনাকে যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে সরকারি দফতরের সরবরাহকারী বা ঠিকাদারেরা যদি চুক্তি লঙ্ঘন করেন, সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না-পারেন বা অন্য কোনও অসুবিধায় পড়েন, তা হলে তাঁদের গুনাগার দিতে হবে না। সরকার তাঁদের চুক্তি বাতিল করতে পারবে না, জরিমানাও করতে পারবে না। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করে সমুদ্রপথে জোগান স্বাভাবিক হওয়ার আগে পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। সরকার ফোর্স মেজিওর ক্লজ়ের সময়সীমা বাড়াতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রকের নিয়ম মেনেই বরাত দেয় বিভিন্ন মন্ত্রক। কোনও সংস্থা সময়ে সামগ্রী দিতে না-পারলে বরাত বাতিল করা বা জরিমানা করার অধিকার থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ, দাঙ্গা, ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মতো জরুরি পরিস্থিতিতে এই চুক্তি-বিধি বলবৎ হয় না। ফোর্স মেজিওর ক্লজ়েই তা বলা থাকে। করোনা-বিপর্যয়কে সেই ধারায় যুক্ত করেছে কেন্দ্র।

দেশে বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদকদের শীর্ষ সংগঠন ‘মেট’-এর সিইও জর্জ পল ই-মার্কেট প্লেসের প্রধান তল্লিন কুমারকে চিঠি দিয়ে সরবরাহকারীদের জন্য সুরাহা চেয়েছিলেন। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। শুধু ইলেকট্রনিক্স নয়, সামগ্রিক ভাবে উৎপাদন শিল্প ধাক্কা খাচ্ছে। কারণ, গাড়ি, এলইডি আলো, স্মার্ট ফোন, টিভি ইত্যাদি তৈরির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চিন কোনও না-কোনও পণ্যাংশ উৎপাদন করে। ফলে চিনে তৈরি একটি বোল্টের জন্য জাপানের গাড়ি উৎপাদন আটকে যাচ্ছে। এ দেশের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের অধিকাংশ আসে চিন থেকে।’’ শিল্পকর্তার ব্যাখ্যা, কোনও সংস্থারই গুদামে ৪৫ দিনের বেশি সরঞ্জাম থাকে না। করোনা সংক্রমণ ছ’সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, চিনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ১২-১৪ সপ্তাহ লেগে যাবে। এই সময়ের মধ্যে উৎপাদক বা সরবরাহকারীরা কোনও চুক্তি মেনে সরকারকে পণ্য দিতে পারবে না। সেই জন্যই সুরাহা চাওয়া হয়েছিল।

অর্থ মন্ত্রকের হিসেব, চিন থেকে বছরে পাঁচ লক্ষ কোটিরও বেশি টাকার পণ্য আসে ভারতে। তার অনেকটাই বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম। চিনের সমুদ্রবন্দরে বছরে সাত লক্ষের বেশি কন্টেনার ওঠানামা করে। যা বিশ্বের মোট কন্টেনারের প্রায় ৩০%। করোনার জন্য চিনের বন্দরে প্রায় ১৭% বাক্সবন্দি পণ্যের যাতায়াত কমছে।

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বল্প মেয়াদে আমদানি এবং উৎপাদন, দু’টিই ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমদানি-নির্ভর না-হয়ে ভারতীয় উৎপাদকেরা নিজেরা যদি আরও বেশি উৎপাদন করেন, তা হলে স্বনির্ভরতা বাড়বে। অযথা চিনের উপরে নির্ভর করতে হবে না। সেই জন্য বেশ কিছু চিনা পণ্যের উপরে শুল্ক বসানোর কথা ভাবছে কেন্দ্র।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy