এ ভাবেই গাছতলায় বসে চলে পড়াশোনা। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
১ টাকার পাঠশালা!
এটাই এখন পড়াশোনার ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে কচিকাঁচাদের কাছে।
বছর দুয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার টুনিঘাটা এলাকার কয়েক জন তরুণ-তরুণী মিলে গাছতলায় এই পাঠশালা শুরু করেছিলেন। যত দিন যাচ্ছে, কলেবরে বাড়ছে সেই পাঠশালা। গাছতলায় পড়ুয়ার সংখ্যা ইতিমধ্যে ৬০ ছাড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে দিন তিনেক আগে অবশ্য গাছতলায় বসে পড়াশোনা বন্ধ রেখেছেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা জানান, আপাতত সাত দিনের জন্য এই সিদ্ধান্ত। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই ফের ক্লাস শুরু হবে পাঠশালায়। আপাতত ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়া দেওয়া হচ্ছে। তারা সে সব করছে কি না, তা-ও বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন সকলে।
করোনা পরিস্থিতিতে বছর দেড়েক আগে ২৬ জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। উদ্যোক্তারা জানালেন, একে স্কুল বন্ধ। অভিভাবকদের অনেকের কাজকর্ম নেই। এই পরিস্থিতিতে গৃহশিক্ষক রেখে ছেলেমেয়েদের পড়ানো অনেকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। পড়াশোনা না করলে কচিকাঁচাদের স্কুলছুট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। বাড়িতে থাকতে থাকতে মানসিক বৃদ্ধিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। সে সব ভেবেই এই প্রয়াস বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।
ছেলেমেয়েদের থেকে নেওয়া হয় মাত্র ১ টাকা। কিন্তু কেন? পাঠশালার অন্যতম উদ্যোক্তা সঞ্জীব কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘ওই টাকাটা হল গুরুদক্ষিণা।’’
তিনি জানান, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনা করানো হয় এই পাঠশালায়। পড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, আঁকা, তবলাও শেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া, জিমনাস্টিকও শেখানো হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত পড়াশোনা চলে। একটি মেহগনি গাছের বাগানে বসে পাঠশালা। ছেলেমেয়েরা বাড়ি থেকে বস্তা আনে পেতে বসার জন্য। দূরত্ববিধি মেনে, মাস্ক পরে বসে সকলে। সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও চট-মাদুর পেতে বসেন। ব্ল্যাকবোর্ড ঝোলে গাছের ডালে।
সঞ্জীব, উপল মজুমদার, রুমা মণ্ডল, সৌরভ মণ্ডল, বিশ্ব বাগচী, ব্লু বৈদ্যেরা কেউ কলেজপড়ুয়া, কেউ কিছু দিন আগে কলেজের পড়া শেষ করেছেন। সকলে বিনা পারিশ্রমিকেই পড়ানোর কাজ করছেন। পাঠশালা থেকে পড়ুয়াদের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়েছে। দুপুরে সামান্য টিফিনও দেওয়া হয়। রাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেন, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে কি না। এলাকার প্রবীণ মহিলা-পুরুষদেরও পড়াশোনা শেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন সঞ্জীবরা।
টুকটুকি বিশ্বাস, পিঙ্কি মণ্ডল, রাজ মণ্ডল, অনুপ সন্ন্যাসীর মতো ছেলেমেয়েরা ক্লাসে এসে খুশি। অভিভাবকেরাও নিশ্চিন্ত। শ্যামলী মণ্ডল, সুভাষ বিশ্বাসেরা জানান, কবে স্কুল খুলবে জানা নেই। পাঠশালায় পাঠিয়ে তাঁরা নিশ্চিন্ত, পড়াশোনাটা হচ্ছে। সুভাষের কথায়, ‘‘আগে আমার সন্তান স্কুলে যেতে চাইত না। এখন আর সাধাসাধি করতে হয় না। আবৃত্তি, তবলা, আঁকা শিখছে।’’
আপাতত কয়েক দিন বন্ধ ক্লাস। শ্যামলী বলেন, ‘‘দাদা-দিদিরা প্রায়ই এসে খোঁজ নিচ্ছেন, ক্লাস বন্ধ বলে ছেলেমেয়েরা পড়াও বন্ধ করে দেয়নি তো! বিনা পারিশ্রমিকেও এত যত্ন নিয়ে ওঁরা আমাদের ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব নেন, বিশ্বাসই করা যায় না।’’
সঞ্জীবরা জানালেন, স্থানীয় আরও অনেকে ছেলেমেয়েদের পাঠশালায় পাঠাতে চাইছেন। কিন্তু সকলকে সামলাতে যে আর্থিক সঙ্গতি দরকার, তা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy