নিগৃহীত: ঝামেলার পরে প্রধান হাইতুন্নেসা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের মহিলা প্রধানকে হেনস্থা ও তাঁর তিন ভাইকে মারধর করে জখম করার অভিযোগ উঠল সদাইপুর থানার রেঙ্গুনি গ্রামে। বুধবার সকালের ঘটনা। তবে বিপক্ষ রাজনৈতিক দলে বিরুদ্ধে নয়, অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীর একাংশ এবং তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুর ব্লকের সাহাপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হাইতুন্নেসা খাতুন ও তাঁর মায়ের সঙ্গে গ্রামের মহিলাদের মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত। সেটাই এ দিন বিশাল আকার নেয়। অভিযোগ, পুরুষদের সমর্থনে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গ্রামের কিছু মহিলা হাইতুন্নেসা ও তাঁর মাকে মারধর করে। টানাহেঁচড়ায় প্রধানের জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়। সেই সময় গ্রামের এক দিকের মাঠে বীজতলা করে ফেরার পথে প্রধানের তিন ভাইয়ের উপরে চড়াও হন গ্রামের পুরুষদের বড় অংশ। হাইতুন্নেসার দাবি, তাঁর নিজের নিজের ভাই শেখ কবিরুল, জ্যাঠতুতো দুই ভাই শেখ আজিজুল ও শেখ আনিসুরকে রড, লাঠি, টাঙ্গি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে হামলাকারীরা। আঘাত বেশি দুই তুতো ভাইয়ের। পুলিশ পৌঁছে তিন জনকেই সিউড়ি হাসপাতালে পাঠায়। হামলাকারীদের মধ্যে হাইতুন্নেসার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কিছু লোকও রয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি।
বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘মারধরের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে আমাদের কাছে এখনও লিখিত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, প্রধানকে হেনস্থার ঘটনায় রেঙ্গুনি গ্রামের চার মহিলাকে পুলিশ আটকও করেছে। তৃণমূলের দাবি, একটি জমি সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্রে করেই ঝামেলা। তবে, দলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র বলেন, ‘‘দু’পক্ষই আমাদের দলের লোক। তবে প্রধান ও তাঁর পরিবারের উপর হামলা হয়েছে জেনেছি। প্রশাসন নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নিক।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, এটাই প্রথমবার নয়, আগেও মহিলা প্রধানের বাড়ি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। দিন কয়েক আগেই তাঁর বাড়ি ঘিরে বোমাবাজি হয়। নিশানায় ছিলেন হাইতুন্নেসা খাতুনের বাবা শেখ বদরুদ্দোজা। তিনি কিছুদিন আগে পর্যন্ত শাসকদলের বুথ সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও গ্রামবাসীর দাবি, দলের পদে থাকার সুবাদে বদরুদ্দোজা মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন চালিয়েছেন, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন। সেই ক্ষোভেই ওই দিন তাঁর বাড়িতে বোমাবাজি হয়।
বুধবার হাইতুন্নেসা ও তাঁর ভাইদের উপরে মারধরের ঘটনাও সেই ক্ষোভের পরিণাম বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘গোটা গ্রামটাই ওই পরিবারের বিপক্ষে চলে গিয়েছে।’’
বদরুদ্দোজার দাবি, চলতি মে মাসে প্রতিবেশী শেখ ফিরোজ ও শেখ সালিমদের সঙ্গে জমি নিয়ে তাঁদের ঝামেলা হয়েছিল। পুলিশে অভিযোগ করলেও এলাকায় শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে মীংমাসা হয়েছে কিছুদিন আগে। তার পরেও ফিরোজ, সালিমরা লোকজন জুটিয়ে গত সপ্তাহে বোমা ফাটায় বলে তাঁর অভিযোগ। দু’পক্ষই এক অপরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আরও একটি মামলা করেছিল। গ্রামের ৫০ জন অভিযুক্তের তালিকায়। গ্রামের পুরুষেরা বাড়ি ছেড়ে এদিক ওদিক রয়েছেন। এ সব নিয়ে ওই পরিবারের উপরে রাগ ছিলই গ্রামের লোকেদের।
বদরুদ্দোজা বলেন, ‘‘ফিরোজের লোকেরাই গ্রামের মহিলাদের লেলিয়ে দিয়েছে আমাদের উপরে। ওরা প্রথমে আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে মারধর করে। পর আমার ছেলে ও ভাইপোদের উপরে সশস্ত্র হামলা চালায়।’’ এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, প্রধানের বাড়ির সামনের রাস্তায় এবং বাড়ির ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র ইটের টুকরো। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাইতুন্নেসা। তাঁর বক্তব্য,‘‘আমরা কোনও অন্যায় করিনি। আমাদের গ্রাম ছাড়া করার মতলবে রয়েছে ওরা। আজ আমাকে মারধরের পাশাপাশি আমার মাথার চুল ছিঁড়ে নিয়েছে। আছড়ে ফেলেছে। মাকেও খুব বাজে ভাবে মারধর করা হয়েছে।’’
যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শেখ ফিরোজের দাবি, ‘‘গোটা ঘটনায় আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। প্রতিনিয়ত হাইতুন্নেসা ও তাঁর মা পাড়ার লোকেদের গালিগালাজ করেছেন। দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সেটা নিয়েই অশান্তির শুরু। দু’পক্ষই মার খেয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy