Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Maoist

মাওবাদী ভয় অতীত, রাতেও স্বছন্দ পর্যটকেরা

২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বন দফতরের দু’টি বাংলো উড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা।

কলাবনির কাছে লাউখাপড়ায় গড়ে উঠেছে গ্রামীণ হোম-স্টে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

কলাবনির কাছে লাউখাপড়ায় গড়ে উঠেছে গ্রামীণ হোম-স্টে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩৪
Share: Save:

এক সময়ের মাওবাদী মুক্তাঞ্চল। এখন সেখানে দলে-দলে যাচ্ছেন পর্যটক!

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম জেলায় পর্যটনের পালে হাওয়া লেগেছে। করোনা আবহেও প্রতি ‘উইক এন্ডে’ ঠাঁই নাই অবস্থা। এখন ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় তৈরি হয়েছে একাধিক হোম স্টে। বছর এগারো আগে যে সব এলাকায় দিনের বেলাতেও কেউ যাওয়ার সাহস পেতেন না, যেখানে প্রায়ই রাস্তায় পড়ে থাকত মাওবাদী হানায় নিহতদের দেহ, সেই সব এলাকাতেই এখন রাতেও ঘুরছেন পর্যটকেরা। কলকাতা ও বাইরের কিছু সংস্থাও অর্থ লগ্নি করছে হোম স্টে ব্যবসায়। স্থানীয়রাও হোম স্টে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখছেন। এতদিন ঝাড়গ্রামে থাকার জায়গা বলতে হাতে গোনা কিছু সরকারি অতিথিশালা কিংবা বেসকারি লজ-হোটেলই ভরসা ছিল। গত দু’বছরে ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। এখন প্রকৃতির মাঝে দেখার জায়গাতেই হয়ে গিয়েছে হোম স্টে।

২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বন দফতরের দু’টি বাংলো উড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। এখন কাঁকড়াঝোরের স্থানীয় যুবক প্রদীপ মাহাতো, ঠাকুরদাস মাহাতোরা হোম স্টে ব্যবসা শুরু করেছেন। প্রদীপ জানালেন, এখন রাতে থাকার পরিকাঠামো হওয়ায় অনেক পর্যটকই থাকছেন। কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থাও কাঁকড়াঝোরে অর্থলগ্নি করে একটি হোম স্টে বানিয়েছেন। কলকাতার এন্টালির বাসিন্দা মল্লিকা গোমস মণ্ডল বলেন, ‘‘সপরিবারে ওই হোম স্টেতে দু’রাত কাটিয়েছি। অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই এলাকা যে একসময়ে সন্ত্রাসভূমি ছিল সেটা এখন বোঝার ঝো নেই।’’ এছাড়াও বেলপাহাড়ির গাডরাসিনি পাহাড়ের কোলেও হোম স্টে হয়েছে।

বছর দশেক আগেও ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে লাউখাপরা, গড়শালবনি, সাপধরার মতো এলাকাগুলিতে যাওয়ার পথে গাছের গুঁড়ি দিয়ে অবরুদ্ধ থাকত রাস্তা। প্রায় ওই সব রাস্তায় মৃতদেহ আর মাওবাদী পোস্টার পড়ে থাকতে দেখে সন্ত্রস্ত হতেন এলাকাবাসী। পুলিশও উপযুক্ত সতর্কতা ছাড়া সেই সময়ে এলাকায় ঢুকত না। এখন সেই লাউখাপড়ায় আদিবাসী প্রথার গ্রামের বাড়ির আদলে হোম স্টেতে থাকছেন পর্যটকেরা। আবার গড়শালবনির হোমস্টে-র পাশাপাশি, সেখানে বিলাসবহুল তাঁবুতেও থাকছেন পর্যটকেরা। সাপধরার নকাট গ্রামে বছর তিনেক ধরে রমরমিয়ে চলছে গ্রামীণ পরিবেশের একটি হোম স্টে। ঝাড়গ্রাম জেলায় সেটিই প্রথম গ্রামীণ আদলের হোম স্টে। নকাট গ্রামের ওই হোম স্টে-র মালিক শুভাশিস দেবসিংহ বলেন, ‘‘ডিসেম্বর পর্যন্ত সব অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে। এখন ২০২১ সালের অগ্রিম বুকিং নিচ্ছি।’’

পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘প্রকৃতির মাঝে গ্রামীণ মাটির বাড়ির আদলে সব রকমের সুবিধা যুক্ত বাড়িতে পর্যটকেরা থাকছেন। একেবারে টাটকা শাকসব্জির খাবার, স্থানীয় ছাগল ও মুরগির মাংসের ব্যবহার পর্যটকেরা নিজের চোখে দেখছেন। রাতে ক্যাম্প ফায়ার সহযোগে লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান বাড়তি পাওনা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist Jhargram Jhargram Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy