আরজি করে নির্যাতিতার বাবা-মা ফেসবুকে কন্যার স্মরণে একটি পেজ খুলেছেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর হাসপাতালে নিহত মহিলা চিকিৎসকের বাবা এবং মা একটি নতুন ফেসবুক পেজ খুলেছেন। বিচারের দাবি জানিয়ে সেই পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে একটি ভিডিয়ো বার্তাও। রাজ্য তথা সমগ্র দেশের মানুষকে পাশে থাকার অনুরোধ করেছেন কন্যাহারা দম্পতি। নতুন করে বিচারের দাবিতে আওয়াজ তোলার কথা বলেছেন।
ফেসবুকে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের পেজটির নাম ‘ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস: ভয়েস অফ আরজি কর ভিক্টিম’। এই পেজের ভূমিকায় তাঁরা লিখেছেন, ‘‘আমাদের মেয়ের জন্য বিচার চেয়ে, সত্য জানতে চেয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আর কোনও পরিবার যাতে এ ভাবে কষ্ট না পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন।’’ ওই পেজেই একটি ভিডিয়োবার্তাও দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, ‘‘চার মাস হয়ে গেল, আমাদের মেয়ের সঙ্গে গত ৯ অগস্ট রাতে কী হয়েছিল, এখনও আমরা জানি না। প্রথমে কলকাতা পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছিল। ওদের তদন্তে আমাদের আস্থা ছিল না। তাই আমরা হাই কোর্টে অন্য এজেন্সির তদন্তের জন্য আবেদন জানাই। এখন এই ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু তার পরেও চার মাসে কিছু জানা গেল না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন।’’
নির্যাতিতার বাবা-মা আরও বলেছেন, ‘‘আমরা খুব যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছি। আমাদের মেয়ে এত দিন ধরে যা কিছু করেছিল, নিজের দমে করেছিল। ৯ অগস্ট ওর সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদেরও সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা বিচার পাচ্ছি না। সারা দেশের মানুষকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের পাশে থাকুন। সারা দেশে আবার আওয়াজ উঠুক, আমরা যেন বিচার পাই। এটাই সকলের কাছে আমাদের নিবেদন। আপনারা সঙ্গে থাকলে নিশ্চয়ই আমরা বিচার পাব।’’
মূল ঘটনার চার মাস পরে কেন ফেসবুক পেজ খুলে বিচার চাইতে হচ্ছে? তবে কি কারও উপরেই ভরসা রাখতে পারছেন না নির্যাতিতার বাবা-মা? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন তাঁদের হতাশা এবং অসহায়তার কথা। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধেও উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকলকে আহ্বান জানানোর জন্য এই ফেসবুক পেজ খুলেছি। সিবিআইয়ের উপর তো ভরসা রাখতেই হচ্ছে, ভরসা না রেখে কী করব? কোথায় যাব আমরা?’’
হারানো কন্যার স্মৃতি হিসাবে এই ফেসবুক পেজ রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন দম্পতি। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘আমার মেয়ের স্মৃতি থেকে যাবে এই পেজে। সিবিআই-ই আমাদের শেষ ভরসা, তাদের উপর ভরসা না রেখে উপায় নেই। আমাদের আর কোথাও যাওয়ার নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে সিবিআইকে চাপে রেখে যদি বিচার পাওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করছি।’’
রাজ্যের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন নির্যাতিতার বাবা-মা। আরজি কর আন্দোলন চলাকালীন সাসপেন্ড হওয়া অভীক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবরে তাঁরা ক্ষুব্ধ। নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে ভাবে বিরোধিতা করছে, যে ভাবে অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে আবার ফিরিয়ে আনা হল মেডিক্যাল কাউন্সিলে, তা খুবই অন্যায়। সন্দীপ ঘোষ এত দিন ধরে জেল খাটছেন, তবু তো তাঁর চাকরি যাচ্ছে না!’’ উল্লেখ্য, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য অভীক এবং পেনাল অ্যান্ড এথিক্যাল কমিটির মনোনীত সদস্য বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। কী ভাবে আরজি করের সেমিনার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে হুমকি প্রথা-সহ একাধিক দুর্নীতিতে তাঁরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময়ে তাঁদের দু’জনকে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের সাসপেন্ডও করে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এখন আরজি কর আন্দোলন কিছুটা ‘স্তিমিত’। অভিযোগ, অভীককে আবার কাউন্সিলের বৈঠকে দেখা গিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে বিরূপাক্ষের উপর থেকেও। যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স’ এবং ‘জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট’-এর সদস্যেরা।
প্রতিবাদী চিকিৎসকদের তরফে আগামী ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার একটি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যভবন পর্যন্ত ওই মিছিল যাবে। তাতে নির্যাতিতার বাবা এবং মা-ও হাজির থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy