মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সোমবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কেবল আকচাআকাচি চলেছে দুই শিবিরের নেতাদের মধ্যে। তার পর সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনের মধ্যে একান্তে দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক হয়। দু’জনের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা স্পষ্ট না হলেও শাসকদলের দুই শিবিরের নেতারাই বলছেন, বৈঠক ইতিবাচক। এটাই আগে হওয়া উচিত ছিল।
অভিষেক ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেনাপতি। দু’জনের যৌথ নেতৃত্বেই দল চলবে। কেউ কেউ বয়সের কারণে কাউকে খাটো করতে চাইছেন। কিন্তু তা দলের পক্ষে ভাল হবে না। তবে দু’জনের বৈঠকের পর জটিলতা কাটবে বলেই মনে হয়।’’
সোমবার দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর একটি মন্তব্য ঘিরে তৃণমূলে কার্যত তোলপাড় শুরু হয়। বক্সীর বাক্যগঠন নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বক্সী বলেছিলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্ব স্তরের ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করেন, নিশ্চিত ভাবে আমাদের ধারণা, উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়াই করবেন উনি।’’ তারই পাল্টা কুণাল বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতিকে সম্মান করি। কিন্তু তাঁর বাক্যগঠন নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এটা কখনওই কাঙ্ক্ষিত নয়। অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানেই রয়েছেন। আর তিনি যে কথা বলতে চান, তা শুনলে দলেরই মঙ্গল।’’ যদিও মমতা-ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, বক্সী অভিষেককে খাটো করতে ওই কথা বলেননি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার কুণাল, ব্রাত্য বসু, তাপস রায়, নারায়ণ গোস্বামী, পার্থ ভৌমিকদের মতো নেতারা অভিষেকের সঙ্গে তাঁর কালীঘাটের অফিসে দেখা করে তাঁকে ‘সক্রিয়’ হওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু জানা গিয়েছিল, অভিষেক বিনয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠদের আর্জি ফিরিয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন, লোকসভায় তিনি নিজেকে ডায়মন্ড হারবারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখতে চান। নীতিনির্ধারণ বা সংগঠন পরিচালনার ভার তিনি নেবেন না। তার কারণ হিসেবে যেমন তাঁর আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার কথা অভিষেক ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছিল, পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কয়েক জন আমলার প্রতিও তাঁর ক্ষোভ রয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, অভিষেকের সেই ক্ষোভ অমূলক নয়।
তৃণমূলের অভ্যন্তরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে গত দেড় মাস ধরে টানা চাপানউতর চলছে। সেই আবহে প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ যেন কুস্তির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল সোমবার। ফিরহাদ হাকিম থেকে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা যখন অভিষেকের কথা ‘বাদ’ রেখেই মমতার স্তুতি গাইতে ব্যস্ত, তখন তাঁদের উদ্দেশে দিনভর একের পর এক বাক্যবাণ ছুড়ে গিয়েছেন কুণাল ঘোষ। কখনও তা দলীয় কর্মসূচির মঞ্চ থেকে, কখনও সংবাদমাধ্যমের সামনে। যা স্পষ্ট করে দিয়েছিল, তৃণমূলের অভ্যন্তরে বিবাদমান দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব কার্যত সংঘাতের আকার নিয়ে নিয়েছে। তার পরেই মমতার বাড়িতে অভিষেকের সঙ্গে বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দুই শিবিরের নেতারা। প্রসঙ্গত, রবিবারও মমতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অভিষেক। তবে সোমবার মমতা অভিষেককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন, নাকি তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ নিজেই গিয়েছিলেন তা স্পষ্ট হয়নি। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত বা নির্যাস কী তা দিনের শেষে স্পষ্ট না হলেও তা আগামী কয়েক দিনে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy