Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Teesta River

জোশীমঠের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো তিস্তার উপর প্রকল্প কি প্রভাব ফেলবে দার্জিলিং, কালিম্পঙে?

সরকারি তথ্য বলছে, ২০০০ সালে সিকিমের রঙ্গিত বিদ্যুৎ প্রকল্প দিয়ে তিস্তায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির প্রচলন হয়েছিল। এখন সেখানে নতুন করে রঙ্গিতে তিস্তা-৬ প্রকল্প তৈরি হচ্ছে।

তিস্তা নদী।

তিস্তা নদী। ফাইল চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
  শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৪৫
Share: Save:

উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়ালের পাহাড়ে টানা নগরায়ণ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কী বিপদ ডেকে এনেছে, জোশীমঠ-কাণ্ডের পরে, তা বুঝেছেন অনেকে। এখন সিকিম জুড়ে তিস্তা নদীতে একের পরে এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের ‘কুপ্রভাব’ এ রাজ্যের দার্জিলিং এবং কালিম্পং পাহাড়ে পড়বে কি না, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।

সরকারি তথ্য বলছে, ২০০০ সালে সিকিমের রঙ্গিত বিদ্যুৎ প্রকল্প দিয়ে তিস্তায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির প্রচলন হয়েছিল। এখন সেখানে নতুন করে রঙ্গিতে তিস্তা-৬ প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২১টি প্রকল্প শুধু সিকিমেই করা যেতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক। আর এ রাজ্যেও তিস্তায় কালীঝোরা এবং রিয়াংয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হয়েছে। ভারতে প্রায় ৩০৫ কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তার গতিপথে গড়া বহু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্বিচারে পাহাড়-জঙ্গল কাটা, নদীর গতিপথ বদল করা হয়েছে। যার পরিণাম কী হতে পারে, জোশীমঠের পরিস্থিতি দেখে সে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করেছেন।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা বিশেষজ্ঞ সুবীর সরকারের দাবি, ‘‘তিস্তাকে ঘিরে যা করার, তা হয়ে গিয়েছে। ভয়ানক আশঙ্কা করা যেতেই পারে। এমনকি, তা ন’-দশ বছরের মধ্যে সামনে আসতে পারে।’’ তিনি জানান, প্রতিটি বড় প্রকল্প তৈরির আগে, পরিবেশ-সমীক্ষা, পরিবেশগত ব্যবস্থার দিকগুলি চিহ্নিত হয়। কিন্তু এক বার প্রকল্প শুরু হতেই, সে সব পিছনে চলে যায়।

বি‌শেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, একাধিক বাঁধ, ব্যারাজের জন্য নদীখাত ক্রমশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। সামান্য বর্ষার জলও তিস্তা ধরে রাখতে পারছে না। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার সময় গাছ কাটার প্রভাবে নদীবক্ষে প্রবল ভাঙন হচ্ছে, দু’পাড়ের পাহাড়ে ধস নামছে। তার উপরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকায় বিধি ভেঙে নির্মাণের অভিযোগ। জিটিএ-র চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত থাপা বলেন, ‘‘কার্শিয়াং, মিরিকের তুলনায় দার্জিলিঙে নির্মাণের উচ্চতা, বৈধতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আমরা পুরসভায় ক্ষমতায় আসছি। নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পাশাপাশি, এনএইচপিসি-র মতো নির্মাণকারী সংস্থার দাবি, পরিবেশ নিয়ে আইন মোতাবেক যা-যা বলা হয়, গাছ লাগানো থেকে শুরু করে, পাহাড়ের ধসপ্রবণ অংশের সুরক্ষা বাড়ানো-সহ সে সব কাজ করা হয় সরকারি নজরদারিতে।

এই দাবি নিয়ে সন্দিহান পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘ন্যাফ’-এর আহ্বায়ক অনিমেষ বসু। তাঁর মতো একাধিক পরিবেশপ্রেমীর দাবি, নদীর গতিপথে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে গিয়ে প্রকৃতির ক্ষতি করার ফল হামেশাই দেখা যাচ্ছে। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, তিস্তার জল উপচে জাতীয় সড়কে উঠে আসা, হুট করে বর্ষায় জল বেড়ে কালীঝোরায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ট্রাক থেকে যন্ত্র তলিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। অনিমেষ বলেন, ‘‘তিস্তার এই পরিস্থিতি নিয়ে পাহাড়ি মানুষেরা সরব হয়েছেন। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল সাড়া দেয়নি। তাই তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন সফল হয়নি। পাহাড়ে ঘেরা তিস্তা কত দিন আর ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে তা জানি না। বিপদের ঘণ্টা বেজেই চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Teesta River Joshimath Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE