বাগনানের মুগকল্যাণ গার্লস হাইস্কুল থেকে কিছুটা দূরের একটি মাঠে পড়ুয়াদের নিয়ে চলছে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’। সোমবার । নিজস্ব চিত্র।
ঠিক সেই বছর দুয়েক আগেকার স্কুল নয়। নয় ঠিক সেই ক্লাসঘর। তবু দীর্ঘ গৃহবন্দিদশা থেকে সটান মুক্তির মাঠে। উপরি পাওনা সেই রান্না করা মিড-ডে মিল। আর সব থেকে বড় প্রাপ্তি সহপাঠী-বন্ধুদের হাসিমুখ। সোমবার বাংলাজোড়া ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’-এ অতিমারির খবরদারি ভেসে গেল কচিকাঁচাদের বাঁধভাঙা হাসির প্লাবনে।
বাড়ির বাঁধন পেরিয়ে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়ারা এ দিন আবার ফিরল শিক্ষাঙ্গনে। অনেকেই ক্লাস করল মাঠে। শহর ও গ্রামের যে-সব স্কুলের মাঠ নেই, সেখানে বিদ্যালয়-চত্বরেই পড়তে বসল ছাত্রছাত্রীরা। মজা তাদের বেশি, পাড়ায় শিক্ষালয়ে বা পাড়ার স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও যারা ফিরতে পেরেছে নিজেদের স্কুলেই। বিকাশ ভবন জানিয়েছে, রাজ্য জুড়ে প্রায় ৭৮ হাজার কেন্দ্রে ৩২ লক্ষ পড়ুয়া এ দিন পাড়ায় শিক্ষালয়ে ক্লাস করেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা অন্তত তিন লক্ষ। হাজিরা ছিল বেশ ভালই।
পাড়ার মাঠে ছাড়াও এ দিন পাঠশালা বসেছিল দুর্গামণ্ডপের দালানে বা পার্কে, এমনকি স্কুলবাড়ির ছাদেও। চেতলা অগ্রণী ও বাগবাজার সর্বজনীন পুজোর মাঠে শিক্ষালয় বসেছে, পড়াশোনা হয়েছে যোধপুর পার্ক স্কুলের মাঠে। জায়গার অভাবে কোথাও কোথাও স্কুলের উঠোনে বা ডাইনিং হলে কিংবা স্কুলের ছাদে বসাতে হয়েছে পড়ুয়াদের। অভিনবত্ব ছাপিয়ে দিনশেষে এই প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে যে, পড়ুয়াদের যদি স্কুলের মাঠে বা উঠোনে-ছাদে ক্লাস করতে হয়, তা হলে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে অসুবিধা কোথায়? প্রশ্নটা অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার, অভিভাবকদেরও।
ভিআইপি রোড সংলগ্ন কেষ্টপুরে দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যামন্দিরের ছাদে ও ডাইনিং হলে এ দিন স্কুল বসেছিল। এক অভিভাবক বলেন, “স্কুলের ভিতরে ক্লাস হওয়ায় অনেক নিশ্চিন্ত বোধ করছি।” মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখায় পড়াশোনা হয়েছে স্কুলের উঠোনে। স্কুলের পাশেই হরিশ পার্ক। কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবকই সেখানে ছেলেমেয়েদের নিয়ে যেতে রাজি হননি। স্কুল-চত্বরকেই নিরাপদ জায়গা বলে মনে করেছেন তাঁরা।
এ দিন বহু স্কুলে পাড়ায় শিক্ষালয়ের সঙ্গে চলেছে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস। হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের টিকাকরণ। কিছু ক্লাসে বইও বিতরণ করা হয়েছে। করোনার দরুন ভিড় কমানোর কথা বলা হলেও অনেক স্কুলেই পড়ুয়াদের উপচে পড়েছে ভিড়।
শিলিগুড়িতে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তিন-চারটে হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পঠনপাঠন হয়েছে। শুরুর দিকে চড়া রোদ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। মালদহ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় বেশির ভাগ স্কুলের লাগোয়া এলাকাতেই এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, খোলা মাঠে রোদের মধ্যে বসে পড়াশোনা করতে গিয়ে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
প্রয়োজনে ক্লাসের সংখ্যা কমিয়ে, স্কুলেই পড়ানোর ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। দুর্গাপুরের সারদা হিন্দি প্রাথমিক স্কুলের জন্য একটি মাঠে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে মাঠ পরিচ্ছন্ন না-থাকায় স্কুলের কাছে শতরঞ্চি পেতে ক্লাস হয় গাছতলায়। বর্ধমান শহরের বহু স্কুলে বা তার কাছাকাছি মাঠ না-মেলায় ভবনের ছাদে বা বারান্দায় পড়ুয়াদের নিয়ে বসতে হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন স্কুলে একসঙ্গে সব পড়ুয়া চলে আসায় সমস্যা তৈরি হয়। অনেক স্কুলে মিড-ডে মিলের রান্নাও হয়নি।
তবে সব সমস্যাকে ছাপিয়ে এ দিন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চোখে পড়েছে পড়ুয়াদের উচ্ছ্বাস। স্কুল, অথচ ঠিক যেন স্কুল নয়— এই অভিনব অনুভূতি তাদের যে খুব আকর্ষণ করেছে, তা উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়ছিল ছাত্রছাত্রীদের চোখেমুখে। উপস্থিতি বেশ ভাল। নদিয়ার শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে কথা ছিল, শুধু সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা আসবে। তবে উৎসাহের আধিক্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারাও হাজির হয়। মুর্শিদাবাদে উপস্থিতি ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ। দুই ২৪ পরগনাতেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। তবে বেশ কিছু স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা কম থাকায় কর্মসূচি পালনে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
কোথাও কোথাও বেলুনে, ফুলে সেজেছিল ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’। পশ্চিম মেদিনীপুরে গড়বেতা-১ ব্লকের বিডিও শেখ ওয়াসিম রেজা পাড়ায় শিক্ষালয় কর্মসূচি পরিদর্শনে গিয়ে একটি স্কুলে পড়ুয়াদের ক্লাসও নেন। বীরভূমের সিউড়িতে খুদেদের সঙ্গে খেলায় মাতেন জেলাশাসক বিধান রায় এবং প্রাথমিক সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক। হলদিয়ার গান্ধীনগরের দেভোগ পূর্ব প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিলের পরেও স্কুলের খেলা ছেড়ে ঘরে ফিরতে মন সরছিল না পড়ুয়াদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy