নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে চলছে কাঠ জ্বালিয়ে রান্না। শনিবার, ময়দানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
শীতের গোড়া থেকেই বিষিয়ে রয়েছে মহানগরের বাতাস। এ বার পৌষ সংক্রান্তির আগে দূষণের হানা খোদ শহরের ‘ফুসফুসে’!
ময়দান চত্বর কলকাতার ফুসফুস বলেই পরিচিত। সেখানে কাঠ-কয়লা জ্বালানো বা জঞ্জাল পো়ড়ানো নিষিদ্ধ। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার জন্য আসা সাধু-পুণ্যার্থীরা সেই ময়দানেই দিব্যি কাঠ জ্বালাচ্ছেন এবং সেই আগুনে রান্নাও হচ্ছে! সন্ধ্যায় ময়দানের ইতিউতি পোড়ানো হচ্ছে শুকনো পাতা, জঞ্জাল। পায়ে পায়ে ধুলো উড়েও মিশছে বাতাসে।
শিবিরের মাঠে ঘেরাটোপের মধ্যে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি হয়েছে। কিন্তু পুণ্যার্থী ও সাধুদের অনেকেই ময়দানে বা কাছের রেললাইনের পাশে ‘কাজ’ সেরে ফেলছেন। ময়দান চত্বরে প্রকাশ্যে প্রস্রাব করতেও দেখা গিয়েছে। পরিবেশকর্মীদের দাবি, শুধু বায়ু নয়, এ ভাবেই ময়দানে বাড়ছে দূষণ। তার প্রভাব প়়ড়তে পারে শিবিরে আগত পুণ্যার্থীদের শরীরেও।
ময়দানের বাতাসের ছবিটা ধরা পড়ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বসানো বায়ুদূষণ মাপার যন্ত্রেও। ওই যন্ত্রের তথ্য বলছে, গত সাত দিনে ময়দান এলাকার বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার সর্বোচ্চ মাত্রা ৩৫০
থেকে ৪৫০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। বায়ুদূষণের গড় মাত্রাও স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি ছিল। যা দেখে এক পরিবেশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘এমন চলতে থাকলে কলকাতার ফুসফুসে ক্ষয় হতে বাধ্য।’’
ময়দানে গঙ্গাসাগর যাত্রীদের শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, একশোরও বেশি সাধু আখড়া খুলে বসেছেন। ক্রমাগত সেখানে কাঠ পুড়ছে, কেউ কেউ তো গোটা গাছই জ্বালিয়ে ফেলছেন। পায়ে পায়ে বালিও উড়ছে। ধুলো-ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে চারপাশ। কিছু ক্ষণ থাকলেই চোখ, নাক জ্বলছে। অনেকেই বলছেন, শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও ভিড় এড়াতে অনেকেই ময়দানের আনাচে-কানাচে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। তাতে আশপাশের পরিবেশ পূতিগন্ধময় ও দূষিত হয়ে উঠছে।
পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ওই কাঠের আগুন থেকে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রাস অক্সাইড তৈরি হয় এবং গঙ্গার কাছে হওয়ায় তা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশা তৈরি করে। সেই ধোঁয়াশা কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভিক্টোরিয়ায় দূষণ মাপক যন্ত্র বলছে, সপ্তাহখানেক ধরেই ময়দান এলাকায় নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। রাতের দিকে সর্বোচ্চ মাত্রা ২০০ পেরিয়ে যাচ্ছে। ওই মাত্রা বেশ খারাপ
বলেই চিহ্নিত।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ময়দানে এ ভাবে আগুন জ্বালানো নিষিদ্ধ। গ্যাস জ্বালিয়ে রান্নার ক্ষেত্রে অবশ্য আদালতের কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। প্রকাশ্যে জঞ্জাল পোড়ানো তো শহরের সর্বত্রই নিষিদ্ধ। কী ভাবে এই জঞ্জাল পোড়ানো চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর নিজেরও অভিজ্ঞতা বলছে, সাধু-পুণ্যার্থী সমাগমে ময়দানের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের সামনে এই বিষয়টি তুলব।’’
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলেও প্রশাসন কিছু বলছে না কেন? তা হলে কি ভোটের কথা মাথায় রেখেই পরিবেশের ক্ষতি করতে দেওয়া
হচ্ছে? অনেকে অবশ্য এ-ও বলছেন, রাজ্যে পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ময়দানে গঙ্গাসাগর শিবিরের পরিকাঠামো উন্নত করেছেন। মহিলা ও পুরুষদের জন্য পৃথক শৌচাগারের সংখ্যাও বেড়েছে। ময়দান নিয়মিত সাফসুতরোও করা হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, এত কিছু করেও পরিবেশ রক্ষা
করা যাচ্ছে না।
পরিবেশ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, গঙ্গাসাগর মেলার জন্য ওই সমাগম বহু বছর ধরেই হচ্ছে। এ বছর কলকাতা পুলিশের সঙ্গে পরিবেশ দফতরের বৈঠকে ময়দানে কয়লা বা কাঠ জ্বালিয়ে রান্নায় নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা হয়েছিল।
পরিবেশ দফতরের একাংশ মেনে নিচ্ছেন, ময়দানকে বাঁচাতে গেলে গঙ্গাসাগরের প্রস্তুতি শিবির সরানো প্রয়োজন। শহরের বাইরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও বড় মাঠে তা করা যেতে পারে। দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এই শিবিরের জায়গা বদল হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত একমাত্র প্রশাসনের শীর্ষ স্তরই নিতে পারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy