এ বছর ইলিশ উঠবে আরও বেশি, আরও সুস্বাদু। আশায় মৎস্যজীবীরা।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে এ বছর ইলিশ খেতেনই। কারণ, এ বার স্বাদে-গন্ধে-আকারে অতুলনীয় ইলিশ বাজারে আসতে চলেছে। সৌজন্যে, লকডাউন।
বাঙালি এত দিন ইলিশের বাজারে বলিউডের তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দাপট দেখত। সেই বাজারেই এ বছর প্রতিযোগিতায় নামছেন দীপিকা পাডুকোন-প্রিয়ঙ্কা চোপড়া-রণবীর কপূর-রণবীর সিংহদের মতো প্রথম সারির সকলে। এ বলবে আমায় দেখ তো ও বলবে আমায়... এমন ইলিশেই বাজার ভরে যেতে চলেছে এ বার। বিক্রেতাকে আর বলতে হবে না, ‘খোকা এসেছে’। বরং ইলিশের বাজারে ‘খোকা’দের দিন শেষ। তলোয়ারের মতো শানিত শরীর, ছিলার মতো টান টান স্বাদ-গন্ধের রুপোলি শস্যের আগমন ঘটবে এ বার বাজারে। আর বাঙালির পাত সেজে উঠবে সেই ইলিশের নানা পদের বাহারে।
কিন্তু এ বছর আচমকা কী এমন হল যে, ইলিশ তার নামের প্রতি এতটা সুবিচার করবে? এর একটা বড় কারণ লকডাউন। বিষয়টি ঠিক কী রকম?
ডিম পাড়ার সময় ইলিশ গভীর সমুদ্রের নোনা জল থেকে নদীতে এসে ঢোকে। পোনার মাপ ৩-৪ ইঞ্চি হওয়ার পর তারা ফের সমুদ্রের দিকে ফিরতে শুরু করে। এ বঙ্গে বর্ষায় ও শীতে মোহনা থেকে গঙ্গা বেয়ে ফরাক্কা পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ যায় ইলিশের ঝাঁক। এই যাত্রাকে পরিযান বলে। পরিযান শ্রেষ্ঠ হয় যখন নদী থাকে স্বচ্ছতোয়া। জল থাকে পরিষ্কার। আর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এক প্রান্ত থেকে দৌড়ে বেড়ায় অন্য প্রান্তে। লকডাউনের কারণে এই পরিযানই এ বার ইলিশের জন্য এতটাই সুখকর হবে যে, তার প্রভাব পড়বে স্বাদে-গন্ধে-আকারে। সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিআইএফআরআই)-এর নদী-মৎস্য বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা ইলিশ-বিশেষজ্ঞ উৎপল ভৌমিক তেমনটাই বলছেন। তাঁর কথায়: ‘‘জলের মান এবং ভাল খাবার সব সময়েই মাছের জন্য অত্যন্ত ভাল। পরিযানের পথে এ বার গঙ্গার ইলিশ সেটাই পাবে। যার নিট ফল, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হয়ে ওঠা।’’
মার্চের শেষ থেকে লকডাউনে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা দেশ। বন্ধ হয়ে যায় বহু কলকারখানা। একই সঙ্গে নদী ও সমুদ্রে ধীবরদের বল্গাহীন নৌকা-ট্রলার চলাচলও অনেকটা কমে যায় লকডাউন এবং করোনা-আতঙ্কে। আমপানও কিছু দিনের জন্য ধীবরদের মাছ ধরতে যাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এ সব কারণে, গঙ্গায় দূষণের পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বছরভর ভালই বৃষ্টি হয়েছে এ বার। ফলে, নদীতে জলের পরিমাণও কখনও কমে যায়নি। সব মিলিয়ে গঙ্গার জলের মান এখন ভীষণ রকমের ভাল। আর এই প্রায় দূষণহীন, পরিষ্কার জলের কারণেই ইলিশের পরিযানের পথ অত্যন্ত সুখকর হয়ে উঠবে এ বছর। শুধু পরিযানের পথ নয়, পরিষ্কার জলের কারণে এ বার গঙ্গায় মাছের খাবারের পরিমাণও বেড়েছে অনেক গুণ।
অনুকূল পরিবেশ ও খাদ্যের তারতম্যে ইলিশের স্বাদ বদলায়।
আরও পড়ুন: ভারত শান্তি চায়, কিন্তু প্ররোচনা এলে জবাব দিতেও তৈরি: প্রধানমন্ত্রী
কিন্তু তার সঙ্গে স্বাদ ও গন্ধের কী সম্পর্ক? আছে, গভীর সম্পর্ক আছে। সমুদ্রের নোনা জল থেকে ইলিশ যত নদীর উজানে যেতে থাকে, ততই তার শরীর থেকে ঝরতে থাকে আয়োডিন, লবণের মতো খনিজ পদার্থ। পরিযানের সময়ে ইলিশ কিছু খায়ও না। তাই ইলিশ যত বেশি মিষ্টি জলে থাকতে পারবে, তত তার দেহ থেকে কমবে লবণ-সহ বিভিন্ন খনিজ। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তার স্বাদও। উৎপল ভৌমিকের কথায়, ‘‘ইলিশের অনন্য স্বাদের একটা কারণ কিন্তু স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট অর্থাৎ আমরা যেটাকে তেল বলি। অন্য মাছের ক্ষেত্রে এই তেল তাদের পেটের অঙ্কীয়দেশে জমা হয়। কিন্তু ইলিশের ক্ষেত্রে সেটাই তার সারা দেহে, পেশী-কলা-কোষের পরতে পরতে সুষম ভাবে বিন্যস্ত থাকে। সে কারণেই এত স্বাদু ইলিশ।’’ দূষণের সঙ্গে ইলিশের স্বাদের সম্পর্ক সরাসরি না থাকলেও, রয়েছে তো বটেই। এ বছর নদীর জল পরিষ্কার বলে ইলিশ গঙ্গা বক্ষ ধরে দৌড়বে অনেকটা। মিষ্টি-পরিষ্কার-দূষণহীন জলে তার শরীর থেকে আয়োডিন-লবণের মতো খনিজ পদার্থ দ্রুত ঝরতে থাকবে। সামুদ্রিক উপাদান যত তার শরীর থেকে ঝরবে, ততই ইলিশের স্বাদের মান বাড়বে। আবার পরিযানের সময় ইলিশ যে হেতু কোনও খাবার খায় না, তাই গোটা যাত্রাতেই সে তার শরীরে জমানো স্নেহপদার্থ খাবারের বিকল্প হিসেবে খরচ করতে থাকে। ইলিশদের পরিযানের এই হাইওয়েতে এত দিন নানা বাধাবিপত্তি ছিল। এ বছর সে সব কেটে গিয়ে একেবারে ফাঁকা ময়দান। উৎপলবাবু বলছেন, ‘‘ইলিশ আসলে পরিযায়ী মাছ। জলে যত দৌড়বে ইলিশ, ততই তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ওই স্নেহপদার্থ পৌঁছবে। আর সেই তেলের কারণেই স্বাদ খুলে যাবে ইলিশের।’’
এ পারের গঙ্গা, বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের পাশাপাশি মায়ানমারের ইরাবতী নদীর মোহনাতেও ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ইলিশ আকারে বড় হলেও স্বাদের নিরিখে তা গঙ্গার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। উৎপলবাবুর মতে, ইলিশের পরিযানের জন্য তার চলার পথ অন্তত চল্লিশ ফুট গভীর হতে হয়। জলের প্রবাহ কমে যাওয়ায় ইলিশের স্বাভাবিক বিচরণ বাধা পায়। তাই ইলিশ হামেশাই বাধ্য হচ্ছিল মোহনায় ডিম পাড়তে। এটা কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী। এতে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হয়। আর স্বাদও কমে। তাঁর কথায়, ‘‘অনুকূল পরিবেশ ও খাদ্যের তারতম্যে তো ইলিশের স্বাদ বদলায়। সে কারণেই ইরাবতীর থেকে গঙ্গার ইলিশ অনেক এগিয়ে। সব মিলিয়ে এ বছর যে ইলিশ বাজারে আসবে, তা কিন্তু স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়ই হবে।’’ একই কথা বলছেন নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার। নদীর জলের মান, নদীতে মাছেদের খাবার এবং তাদের স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করতে হয় তাঁকে। তিনি বলছেন, ‘‘ইলিশের স্বাদ মূলত দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। মাছের খাবার আর জলের গুণগত মান। এ বছর গঙ্গায় দুটোই ইলিশের জন্য অনুকূল। কাজেই এ বার কিন্তু ইলিশের স্বাস্থ্য ও স্বাদ ভাল হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’’
আরও পড়ুন: কথাবার্তা চলছে, আমরা আর কোনও সংঘর্ষ চাই না, বলল বেজিং
স্বাদওয়ালা ইলিশ মেলার এ বার আরও একটা কারণ রয়েছে। এত দিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাড়ে তিন ইঞ্চির ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে দেদার ‘খোকা ইলিশ’ ধরা হত। বুদ্ধদেব বসু যে ইলিশকে নিয়ে তাঁর রোম্যান্টিসিজমের চর্চা করেছেন, রাত্রিশেষে গোয়ালন্দে কালো মালগাড়ি ভরা জলের উজ্জ্বল যে শস্যের কথা উল্লেখ করেছেন, তা কিন্তু এই ‘খোকা ইলিশ’কে নিয়ে নয়। রাশি-রাশি ইলিশের শব, নদীর নিবিড়তম উল্লাসের মৃত্যুর পাহাড়— সে সব ইলিশ কিন্তু আকারে বেশ বড়ই ছিল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আনন্দবাজার পত্রিকায় ২০১১ সালে লিখেছিলেন, আসল ইলিশের স্বাদ দেড় কিলো থেকে পৌনে দু’কিলোতে। ছোট ইলিশ তিনি কখনওই খেতেন না। আর বরফের ইলিশ তো ছুঁয়ে দেখার প্রশ্নও ছিল না। সুনীল মনে করতেন, দুধের স্বাদ যেমন ঘোলে মেটে না, তেমনই খাঁটি ইলিশের স্বাদের সঙ্গে অন্য কিছুর সমঝোতা চলে না। বরং না খাওয়াই ভাল।
আসলে ছোট অবস্থায় ইলিশ ধরে ফেললে ভবিষ্যতে বড় মাছ মেলার সম্ভাবনা নষ্ট হয়। পাশাপাশি বাধাপ্রাপ্ত হয় ইলিশের বংশবৃদ্ধিও। এ বার করোনা-আতঙ্ক এবং লকডাউনের জেরে অনেক মৎস্যজীবীই তেমন ভাবে কাজে বেরোননি। তার উপর ছিল আমপান। সব মিলিয়ে ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্রে তেমন ভাবে বাধা পড়েনি। পঞ্চায়েতের ফিশারি দফতরে কর্মরত মৎস্যবিশেষজ্ঞ বিজনকুমার মণ্ডল যেমন বলছেন, “নোনা জল থেকে মিষ্টি জলে ঢুকলে মাছের স্বাদ বেড়ে যায়। আমাদের এখানে একটাই বড় নদী। তা-ও দূষণে ভরা। এ বার কিন্তু দূষণের মাত্রা একেবারেই কম। তাই সুস্বাদু ইলিশ ভালই মিলবে বলে মনে হচ্ছে।”
শুধু স্বাদে-গন্ধে নয়, এ বার যে বড় আকারের এবং বেশি পরিমাণে ইলিশ মিলবে তা নিয়েও নিঃসন্দেহ মৎস্যজীবীরা। কারণ, বৃষ্টি আর পুবালি বাতাসের যুগলবন্দিতে সাধারণত ইলিশ ওঠে। মৌসুমী বায়ু সময় মতো সক্রিয় হওয়ায় এ বার কিন্তু বৃষ্টি-পুবালি বাতাস, একেবারেই ইলিশের অনুকূলে। রাজ্য প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিপুলকুমার দাসের মতেও, “সমুদ্র থেকে ইলিশ নদীতে ডিম পাড়ার জন্য আসে। আমরা তখনই ওদের ধরে নিই। এটা ঠিক না। যখন ওরা ডিম পেড়ে ফিরে যায়, সেই সময় ধরা উচিত। নজরদারির অভাব রয়েছে। আকাশ মেঘলা থাকবে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি হবে। পুবালি হাওয়া বইবে। এটাই তো ইলিশের জন্য অনুকূল পরিবেশ। আর বঙ্গে এখন তো তেমনই আবহাওয়া।”
ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে রাজ্য মৎস্য দফতরের নানা নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। অন্যান্য বার বর্ষা শুরুর আগেই ‘খোকা ইলিশ’-এ ছেয়ে যায় বাজার। এ বার কিন্তু তেমনটা দেখা যায়নি। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিজন মাইতি বলছেন, “গত বছর তেমন ইলিশ পাওয়া যায়নি। যত বৃষ্টি হবে, ততই ভাল। সাগরদ্বীপ, কলস দ্বীপ, কেঁদো দ্বীপের কাছে বেশি মাছ ধরা পড়ে। ৯০ মিলিমিটার (সাড়ে তিন ইঞ্চি)-এর কম ফাঁসের জাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছি আমরা। ফলে খোকা ইলিশ নয়, ভাল মানের বড় ইলিশই এ বার বাজারে আসবে।”
এ বার রুপোলি শস্য উঠবে ঝাঁকে ঝাঁকে, আশায় বাঙালি।
ইলিশ নিয়ে আশাবাদী রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও। তাঁর কথায়: “ইলিশ মিলবে কি না, তা নির্ভর করে প্রকৃতির উপরে। প্রকৃতি, পরিবেশ, আবহাওয়া সবই এ বার ইলিশের অনুকূলে। দেখা যাক বাঙালির ভাগ্যে কী আছে!’’ চন্দ্রনাথ ঠিকই বলছেন। সোমবার এই মরসুমে প্রথম ট্রলার নিয়ে ইলিশ অভিযানে বেরিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ট্রলার নিয়ে ফিরবেন ওই ধীবররা। সপ্তাহান্ত থেকেই বাজারে টাটকা ইলিশ মিলতে পারে। আর কয়েক দিনের মধ্যেই বোঝা যাবে এ বছরের ইলিশের বাজার কেমন হতে চলেছে।
সুস্বাদু ইলিশ নিয়ে আশায় রয়েছে বেনফিশ-ও। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিধান রায় বলেন, “গত দু’বছর ধরে সে ভাবে ইলিশের দেখা মেলেনি। এ বার আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। লকডাউনের সময় জলের দূষণ অনেক কম। পুবালি হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে। ফলে গত বারের থেকে এ বার স্বাদে-গুণে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ইলিশের স্বাদ যাতে চেখে দেখতে পারেন মানুষ, তার জন্য সংরক্ষণের পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের। এমনকি আমাদের ভ্রাম্যমান গাড়িতে খিচুড়ি-ইলিশও পাওয়া যাবে।”
সুনীল তাঁর ওই লেখায় লিখেছিলেন, ‘‘আমার পরিচিত মাছওয়ালাটি বলল, দাঁড়ান স্যার, আপনার জন্য আমি কাঁচা মাছ এনে দিচ্ছি। কাঁচা মাছ কাকে বলে তা আমি জানি। বরফ ছাড়া। টাটকা। কোনও কারণে এই মাছ এরা আড়ালে লুকিয়ে রাখে। সে যে দু-তিনটে মাছ নিয়ে এল, তাদেরও ওজন এক একটি এক কিলো একশো মাত্র। তবে গড়ন ও গায়ের রং দেখে বোঝা যায়, ভাল জাতের। কাঁচা মাছের দাম বেশি। সাতশো টাকা কিলো। শুনে পিলে চমকে যাওয়ার কথাটা অনেক দিন পর মনে পড়ল।’’
সব মিলিয়ে এ বার রুপোলি শস্যের ফলন ভালই হবে। কাজেই মধ্যবিত্তের পিলে না-ও চমকাতে পারে। পকেটের ভাঁড়ারে টানও হয়তো পড়বে না। বাঙালির রসনা তৃপ্ত হবে তার প্রিয় সুস্বাদু ইলিশে।
অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
ছবি: সংগৃহীত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy