প্রাক্তন ও বর্তমান। সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং ওমপ্রকাশ মিশ্র। ফাইল চিত্র।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে। নয়া উপাচার্য হচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র। ওমপ্রকাশের একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। তিনি অতীতে কংগ্রেস করলেও বর্তমানে শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। গত বিধানসভাতেও তিনি তৃণমূলের প্রতীকে শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অবশ্য শিক্ষাবিদের তুলনায় রাজনীতিক হিসাবেই ওমপ্রকাশ বেশি পরিচিত। সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতে বিশ্বাসী অনেকেই বিভিন্ন রাজ্যের উপাচার্য হয়েছেন। কিন্তু সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কেউ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদে বসছেন, এমনটা অতীতে কখনও হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না প্রায় কেউই।
দীর্ঘদিন কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ২০১৯ সালে তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন ওমপ্রকাশ। ওই দিন বিধানসভায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের তরফে যখন লোকসভার দলনেতা মনোনীত হওয়ায় অধীর চৌধুরীকে সংবর্ধিত করছিলেন সোমেন মিত্র-আব্দুল মান্নানরা, ঠিক সেই সময় শুভেন্দুর হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে তার আগে ভোটে দাঁড়িয়ে একাধিকবার হারের ইতিহাস রয়েছে তাঁর। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে যাদবপুর লোকসভা কংগ্রেসের প্রার্থী হন তিনি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণা বসুর লড়াইয়ের কাছে জামানত হারিয়ে শোচনীয় পরাজয় হয় তাঁর। আবার ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হন ওমপ্রকাশ। জামানত হারিয়ে তৃতীয় স্থানে শেষ করেন তিনি। ২০১৪ সালে নিজের জেলা বালুরঘাট থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ওমপ্রকাশ। সে বারও বালুরঘাটে জামানত হারিয়ে চতুর্থ স্থানে শেষ করেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও এআইসিসি নেতৃত্বের কাছে। বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হিসাবে ভবানীপুরে তাঁর নামে দেওয়াল লিখনও হয়ে গিয়েছিল। এমনকি, একদিন প্রচারেও বেরিয়েছিলেন ওমপ্রকাশ। শেষ পর্যন্ত ওই আসনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হন দীপা দাশমুন্সী। তাই সে বারের নির্বাচনে আর ভোটে দাঁড়ানো হয়নি এই অধ্যাপকের। ২০১৯ সালের দলবদলের পর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের তরফে লড়াই করতে তাঁকে পাঠানো হয় শিলিগুড়িতে। সে যাত্রায় অবশ্য জামানত হারাতে হয়নি তাঁকে। ৪৫ হাজার ভোটে বিজেপির শঙ্কর ঘোষের কাছে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছিলেন ওমপ্রকাশ। নির্বাচনে বার বার পরাজিত হলেও, কখনও রাজনীতির ময়দান থেকে সরে যাননি এই অধ্যাপক-রাজনীতিক। এ বার সেই ওমপ্রকাশকেই করা হল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। নিজের নতুন ভূমিকা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ওমপ্রকাশ জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন প্রাক্তনী হিসাবে সেখানকার উপাচার্য হওয়া তাঁর কাছে ভীষণ সম্মানের। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, তিনি কখনও তাঁর রাজনৈতিক সত্তার সঙ্গে অধ্যাপক সত্তাকে এক করে দেখেননি।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে কিছু দিন আগেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন উপাচার্য সুবীরেশকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছিল। এসএসসি সংক্রান্ত বাগ কমিটির রিপোর্টেও নাম ছিল এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানের। বস্তুত, যে সময়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়ে এসএসসির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সুবীরেশ।
সিবিআই আদালতকে বলেছিল, ৩৮১টি ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়ার ঘটনায় হেফাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার সুবীরেশকে। নিজাম প্যালেসে গত এক সপ্তাহ ধরে চলেছে সেই জিজ্ঞাসাবাদ। সোমবার সেই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হতে সুবীরেশকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। শুনানি চলাকালীন সিবিআই আবার সুবীরেশকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে আদালতের কাছে। এসএসসি দুর্নীতিতে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই বলে প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছিলেন সুবীরেশ। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য ছিল, সুবীরেশ এখনও প্রভাবশালী। এসএসসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার পরও সুবীরেশের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা না দেওয়ায় তাঁকে প্রভাবশালী বলেই আদালতে দাবি করেছিল সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy