Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
RG kar Incident

আরজি করের সুহৃতা নতুন কলেজেও যোগ দিলেন না, অন্য অধ্যাপককে ঢুকতে দেবে না মালদহ মেডিক্যাল!

বুধবার রাতে আরজি করের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল, সুপার বুলবুল মুখোপাধ্যায়-সহ চার আধিকারিককে সরিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। পড়ুয়াদের দাবি মেনেই এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যসচিব।

সুহৃতা পাল।

সুহৃতা পাল। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বারাসত ও মালদহ শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ২০:৪৫
Share: Save:

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি মেনে সন্দীপ ঘোষের উত্তরসূরি সুহৃতা পালকে বুধবার আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবারেই তাঁর বারাসত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন কলেজে কাজে যোগ দেননি সুহৃতা। এই পরিস্থিতিতে ধোঁয়াশায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন: নতুন অধ্যক্ষ কবে কাজে যোগ দেবেন। আরজি করের বক্ষরোগ বিভাগের (চেস্ট মেডিসিন) প্রধান অরুণাভ দত্ত চৌধুরীকেও বদলি করা হয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। তিনিও বৃহস্পতিবার নতুন কাজে যোগ দেননি। তবে মালদহ মেডিক্যালের পড়ুয়াদের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন, আরজি কর থেকে বদলি হয়ে আসা ওই অধ্যাপককে কলেজে ঢুকতে দেবেন না তাঁরা।

বুধবার রাতে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, আরজি করের অধ্যক্ষ সুহৃতা, সুপার তথা উপাধ্যক্ষ বুলবুল মুখোপাধ্যায়, সহকারী সুপার সুচরিতা সরকার এবং অরুণাভকে সরানো হয়েছে। পড়ুয়াদের দাবি মেনেই যে ওই সিদ্ধান্ত, সে কথা নিজেই জানিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। পরে বদলির নির্দেশিকা বেরোলে দেখা যায়, আরজি করের নতুন অধ্যক্ষ করা হয়েছে বারাসত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সুহৃতাকে তাঁর জায়গায় পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই নির্দেশ কার্যকর করার কথা বলেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো বৃহস্পতিবারেই বারাসত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সুহৃতার। কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি যোগ না দেওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের প্রশ্ন, নতুন অধ্যক্ষ আদৌ কাজে যোগ দিতে চান তো? এ বিষয়ে প্রশ্নও করা হয় বারাসত মেডিক্যালের সুপার অভিজিৎ সাহাকে। তিনিই আপাতত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় তিনি বলেন, ‘‘যাঁর আসার কথা, তিনিই এসে যোগ দেবেন। আপাতত সুপার হিসাবে আমিই দায়িত্ব পালন করছি।’’

প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের জেরে ‘চাপের মুখে’ অধ্যক্ষের পর থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সন্দীপ। যদিও তিনি দাবি করেছিলেন, ‘স্বেচ্ছায়’ ইস্তফা দিয়েছেন। তার পরেই সুহৃতাকে আরজি করের অধ্যক্ষ করা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে যোগ দিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। বিক্ষোভ-আন্দোলনে ঘেরাও হয়েছিলেন সুহৃতা। পরে রাতে তাঁকে বার করে নিয়ে যায় সিবিআই। সূত্রের দাবি, তার পর থেকে আর হাসপাতালে যাননি অধ্যক্ষ। সেই কারণে ‘কোথায় তিনি’ পোস্টারও পড়েছিল আরজি করের আন্দোলন মঞ্চে। কানাঘুষোয় খবর ছিল, সুহৃতা স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে বসে থাকছেন। বুধবার সিজিও কমপ্লেক্স থেকে মিছিল করে স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছেও সুহৃতার খোঁজ করেছিলেন। যদিও সরকারি ভাবে এ সব দাবির সত্যতা মেলেনি। ঘটনাচক্রে, তার পরেই সুহৃতা-সহ আরজি করের চার আধিকারিককে বদলি করা হয়।

অরুণাভকেও আরজি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসকের পদ থেকে সরিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, অরুণাভেরও শিক্ষক-চিকিৎসক হিসাবে নতুন কলেজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনিও কলেজমুখো হননি। মালদহ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিভাগীয় ওয়েবসাইটে রয়েছে, বদলির অর্ডার কপি বেরিয়েছে। আমরা সেখান থেকেই ডাউনলোড করে থাকি। অর্ডার বেরিয়েছে যখন, দেখা যাক কী হয়।’’

এই বদলিতে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মালদহ মেডিক্যালের পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর যাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ উঠেছে নানাবিধ, তাঁকে কেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হবে? জুনিয়র চিকিৎসক সুহানি সাইতি বলেন, ‘‘মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ডাস্টবিন নয়। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আরজি করে, তিনি এসে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করুন, এটা আমরা চাই না। উনি চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধান ছিলেন। আর সেই বিভাগের একটি মেয়ের সঙ্গে এ রকম ঘটনা ঘটে গেল। ওঁকে ওখান থেকে সরানো হয়েছে মানে উনি নিশ্চয়ই খারাপ কিছু করেছেন। এখানে ওঁকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমরা একজোট হয়ে লড়াই করব। এখানে উনি স্বাগত নন।’’ রবি নামে আর এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘‘এখানে ওঁকে (অরুণাভকে) ঢুকতে দেব না। তালা লাগিয়ে দেব গেটে। যদি উনি নির্দোষ হন, তা হলে ওঁকে বদলি কেন করা হল? মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ছোট জায়গা। সেই কারণেই এখানে পাঠানো হচ্ছে। যাতে কেউ জানতে না পারেন।’’

একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল সন্দীপকেও। আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার চার ঘন্টার মধ্যে তাঁকে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই সময় ন্যাশনাল মেডিক্যালের পড়ুয়া-চিকিৎসকেরাও জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা সন্দীপকে কলেজে ঢুকতে দেবেন না। তাঁরাও অধ্যক্ষের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা এবং মন্ত্রী জাভেদ খান। তাঁদেরও ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনতে হয়। সন্দীপের ওই বদলি নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্যকে। তার পর আদালতের নির্দেশেই ছুটি চলে গিয়েছিলেন সন্দীপ। বুধবার তাঁকে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদ থেকেও সরিয়ে দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। তাঁর ‘বিশেষ ছুটি’ও বাতিল হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Medical College and Hospital Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE