Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫

‘চাঁদেরও কলঙ্ক আছে’, চিন চেনাচ্ছেন বুদ্ধ

চিনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নের মডেল নিয়ে বিতর্ক গোটা বিশ্ব জুড়েই। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিকতম বই দেখিয়ে দিচ্ছে, তিনি অন্তত চিনের সব বিষয়েই গুণমুগ্ধ নন!

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৯
Share: Save:

সাবেক সোভিয়েত বহু দিন অবলুপ্ত। কমিউনিস্টদের কাছে এ যুগে সমাজতন্ত্রের ‘স্বর্গ’ বলতে চিন। সেই চিনকে নিয়েই কলম ধরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এ বার সামনে আনছেন ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’!

চিনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নের মডেল নিয়ে বিতর্ক গোটা বিশ্ব জুড়েই। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিকতম বই দেখিয়ে দিচ্ছে, তিনি অন্তত চিনের সব বিষয়েই গুণমুগ্ধ নন! বরং, নিজের অভিজ্ঞতায় দেখা এবং সাধারণ মানুষের মনে ওঠা নানা প্রশ্নকে তিনি চিনের সাফল্যের মাঝেই সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বইয়ের একটি অনুচ্ছেদের নাম ‘চাঁদেরও কলঙ্ক আছে’। যেখানে চিনে দুর্নীতির সমস্যা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পশ্চিমী ধারণার সঙ্গে সেখানকার বাস্তব না মেলার প্রসঙ্গ আলোচনায় রেখেছেন বুদ্ধবাবু।

স্ত্রী জিয়াং কিঙকে লেখা মাও জে দঙের একটি চিঠি থেকে নেওয়া হয়েছে ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’ শিরোনাম। আর এ বারের বই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উৎসর্গ করেছেন সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তকে। প্রশাসনিক কাজ প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু হাতে ধরে শিখিয়েছেন, নিজেই আগে বলেছেন বুদ্ধবাবু। রাজনৈতিক জীবনে অবশ্য প্রমোদবাবুরই প্রভাব তাঁর উপরে বেশি। প্রমোদবাবুর সঙ্গে প্রথম বার চিনে যাওয়া এবং চিনেই তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর কথা স্মরণে রেখে প্রয়াত নেতাকে বই উৎসর্গ, এমনই ব্যাখ্যা বুদ্ধবাবুর।

‘অভাবনীয় সাফল্যে’র কথা লিখলেও বুদ্ধবাবু তাঁর নতুন বইয়ে উল্লেখ করতে ভোলেননি যে, দুর্নীতি, উন্নয়নের জন্য বহুসংখ্যক মানুষের উচ্ছেদ, সকল নাগরিকের জন্য বিচারব্যবস্থার নাগাল পাওয়ার সমান সুযোগ না থাকা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আধুনিক চিন বিদ্ধ। চিনের সরকার তাদের মতো করে এ সব অভিযোগের জবাবও দিয়েছে। চিনের ব্যাখ্যার উল্লেখ করেও বুদ্ধবাবু বলেছেন, অনেক প্রশ্নের জবাব তাঁর কাছে নেই। যেমন, সাংস্কৃতিক বিপ্লবে যে ভাবে মানবিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সেই দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর কোনও রক্ষাকবচ কি চিনের আছে? বুদ্ধবাবু লিখেছেন, ‘চিনের নেতারা আমাকে বলেছিলেন, পার্টিই শেষ পর্যন্ত রক্ষা করবে, যদি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বজায় থাকে। আর যদি না থাকে? ব্যক্তিপুজোয় বিলীন হয়ে যায়? এখনও উত্তর মেলেনি’।

সাধারণ মানুষের মনের প্রশ্নগুলির কাছাকাছি আসার চেষ্টাই তিনি করেছেন বলে জানাচ্ছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কোনও চরিত্রের পক্ষে বা বিপক্ষে আমি দাঁড়াইনি। যে বিষয়টি বাস্তবে প্রমাণিত, সেটিই সত্য, শুধু তত্ত্বে নয়— এই মার্ক্সীয় ধারণাকেই আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছি।’’

অসুস্থতা নিয়ে কিছু দিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দিনই প্রকাশক অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী এবং লেখায় সহায়ক প্রদোষ বাগচির সঙ্গে বসে বইয়ের কাজ চূড়ান্ত করেছেন বুদ্ধবাবু। শারীরিক অসুবিধার জন্য টানা বসে থাকতে কষ্ট হয় এখন। অনিরুদ্ধবাবু বলছেন, ‘‘বছরখানেক ধরে ওঁর কথা শুনে শুনে বইটা তৈরি করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Buddhadeb Bhattacharya CPM China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy