ফাইল চিত্র।
চট শিল্পের শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে তদ্বির করতে তখন ফি দিন দিল্লি যাতায়াত করছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। প্রতি বারই দিল্লি এসে তিনি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাইলেও তা এড়িয়ে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ রাজ্য বিজেপি এক নেতার দাবি, ‘‘এক বছর আগেই অমিত শাহ বুঝে গিয়েছিলেন, অর্জুন দলে থাকার পাত্র নন। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, তৃতীয় পাণ্ডবের দল ছাড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পরেই দলত্যাগ শুরু হতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা বুঝে গিয়েছিলেন।’
প্রশ্ন উঠেছে, মুখ পুড়েছে দেখেই কি এখন এই ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে দল থেকে? শীর্ষ নেতৃত্ব যদি এতই বুঝবেন, তা হলে সাম্প্রতিক সফরে স্বয়ং দলের সভাপতি জে পি নড্ডা অর্জুনের সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন? অর্জুন স্রেফ সময় নিচ্ছেন বুঝতে পেরেও কেনই বা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল তাঁকে ডেকে এনে কথা বললেন?
গত বছর ভোটের আগে যে গতিতে তৃণমূল থেকে নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন, তেমনই বিধানসভায় প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে দল ছাড়তে থাকেন মূলত নব্য বিজেপিরা। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ অর্জুন সিংহ। জল্পনা, বিজেপি ছেড়ে যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। যদিও আজ দলত্যাগের সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। বিজেপি শিবিরের একাংশের আশঙ্কা রয়েছে, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরেও। আত্মসমালোচনায় বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, নির্বাচনের আগে দলের শক্তিবৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের তড়িঘড়ি দলে নেওয়া হয়েছিল। প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘শুরুতে দলে যোগদানের প্রশ্নে কিছুটা বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পরে এত লোক বিজেপিতে ঢুকতে শুরু করল যে দরজাই ভেঙে গেল।’’
রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মতে, তৃণমূল থেকে সরাসরি দলে নেওয়া ও তাঁদের টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফল এখন ভুগছে দল। বিজেপি শিবিরের মতে, সে সময়ে দল ক্ষমতায় আসছে ধরে নিয়ে সুযোগসন্ধানীরা দলে ভিড় করতে শুরু করেছিল। যাদের বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের আদর্শ সম্পর্কে ধারণাই ছিল না। শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে পথে নেমে লড়াই করারও কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘এঁদের লক্ষ্যই ছিল ক্ষমতা দখল। তাই বিজেপি হেরে যেতেই প্রত্যাশিত ভাবে এঁরাও দল ছাড়তে শুরু করেন।’’ ফের প্রশ্ন উঠছে, এই ভাবনা তখন কোথায় ছিল?
ভোটের ঠিক আগে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া, রুদ্রনীল ঘোষদের বিশেষ বিমানে দিল্লি উড়িয়ে এনে অমিত শাহের উপস্থিতিতে দলে যোগদান করানোর ঘটনাও এখন স্বভাবতই প্রশ্নের মুখে। রাজ্য বিজেপির ওই নেতার কথায়, ‘‘এক জন বাদে ওই নেতাদের অবস্থান আজ কোথায়, তা সকলের কাছে স্পষ্ট।’’ তাঁর উপস্থিতিতে যাঁদের দলে আনা হয়েছিল, পরবর্তীকালে তাঁদেরই কেউ কেউ তৃণমূলে ফিরে যাওয়ায় শাহ রাজ্য নেতৃত্বের উপর ক্ষুব্ধও। এ বার অর্জুনের সঙ্গে দেখা করে সেই বিড়ম্বনা তিনি বাড়াতে চাননি বলেই দলের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy