লুচি, তরকারি, মাছ, মাংস, বিরিয়ানি— সব কিছুর আবদার মিটিয়েও ফল মিলল না! —প্রতীকী ছবি।
সকালে প্রাতরাশে ফুলকো লুচি আর তরকারি। দুপুরে মাছ বা মাংসের মধ্যাহ্নভোজ। রাতে ডাল-সবজি-রুটি, সঙ্গে মাখা সন্দেশ। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই! রাতে ইলিশ মাছ ভাজা আর খিচুড়ি। মাঝেমধ্যে হান্ডি বা কাচ্চি বিরিয়ানির আবদারও রাখতে হয়েছে। দিন পনেরো ধরে বিলাসবহুল হোটেল-রিসর্টে এ ভাবেই খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছিল ‘আত্মগোপন’ করা পঞ্চায়েতের জয়ী প্রার্থীদের জন্য। যাতে বোর্ড গঠনের দিন তাঁদের ‘মন’ পাওয়া যায়। বায়না মেটাতে হিমশিম খেলেও ‘না’ বলার উপায় নেই। পাছে তাঁরা বিগড়ে যান! এত আদর-আপ্যায়নের পরেও শেষমেশ উল্টো সুর গাইলেন তাঁদের অনেকেই। বোর্ড গঠনে সমর্থন দিয়ে এলেন বিরোধী পক্ষকে। চাপ়ড়া হোক কিংবা রানাঘাট, তেহট্ট হোক কিংবা কৃষ্ণনগর— গোটা নদিয়া জেলা জুড়েই এক চিত্র!
নদিয়ায় বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে ত্রিশঙ্কু অবস্থা। বিরোধীদের একটা অংশের দাবি ছিল, অনেক জায়গায় এক-দু’টি আসনে পিছিয়ে পড়েও বোর্ড গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসকদল। এই পরিস্থিতিতে দলের জয়ী সদস্যদের গোপন আস্তানায় ‘লুকিয়ে’ রাখতে বাধ্য হয়েছে তারা। জয়ী প্রার্থীদের বিভিন্ন হোটেল, রিসর্ট, লজে ঘর ভাড়া করে রাখতে হয়েছে। শুধু ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতেই নয়, যেখানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মিলেছে, সেখানেও জয়ী প্রার্থীদের একাংশকে রাখা হয়েছিল হোটেল, রিসর্টে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হল না। চাপড়া ব্লকের হাটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম-কংগ্রেস জোটের জয়ী পাঁচ সদস্যের ‘হদিস’ মিলছিল না গত ১০ দিন ধরে। জোট সূত্রে খবর, তাঁদের গোপন আস্তানায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু বোর্ড গঠনের দিন দেখা গেল, সেই পাঁচ সদস্যই তৃণমূলকে সমর্থন করলেন!
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে নির্দল হিসাবে ভোটে লড়ে জিতেন হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান গোপাল ঘোষ। কিন্তু বোর্ড গঠনের ঠিক দু’দিন আগে পুরনো মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বোর্ড গঠনে তাঁর সমর্থন মিলতে পারে, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে কলকাতা হাই কোর্টে গিয়ে গোপালের ভোটদানের ব্যবস্থা করে বিজেপি। সেই গোপালেরই ভোটে ত্রিশঙ্কু হবিবপুর পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল।
শুধু যে বিরোধীদের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে, তা নয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, রুইপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের তিন সদস্যকে গোপন আস্তানায় রাখা হয়েছিল। বোর্ড গঠনের ভোটাভুটিতে তাঁরা বাম-বিজেপির জোটকে সমর্থন জানান। গোটা জেলা জুড়ে এমন উদাহরণও ভূরি ভূরি রয়েছে। কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের কয়েক জন জয়ী সদস্যকে হোটেল, রিসর্টে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া শাসক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘যখন যেটা চাই, সেটাই ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাথাপিছু প্রতি দিন প্রায় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুধু আমাদের ব্লকেই কয়েক লক্ষ টাকা ঢেলেছি। এত কিছুর পরেও এই বেইমানি ভাবাই যাচ্ছে না!’’
এ সবের জন্য শাসকদলকেই বিঁধছেন বিরোধীরা। সিপিএম নেতা রঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সাধ্য মতো ব্যবস্থা করেছি। কেউ যদি লোভের বশে, বাড়তি কিছু পাওয়ার আশায় মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়, তা হলে আর কী করার আছে!’’ বিজেপির কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যদের অপহরণ করা হয়েছে। কোথাও পরিবারকে হুমকি দিয়ে, তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে যাঁরা দলের নুন খেয়ে তৃণমূলের গুনগান করলেন, তাঁরাও চিহ্নিত হয়ে রইলেন।’’ পাল্টা কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘কোথাও বিরোধী দলের প্রার্থীদের অপহরণ কিংবা হুমকি দেওয়ার সঙ্গে তৃণমূল যুক্ত নয়। বরং, উল্টে আমাদের দলের জয়ী প্রার্থীদেরই প্রলোভন দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy