Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

মাটির উপরে-নীচে জলের বিষমুক্তির ডাক

পরিবেশবিদেরা বলেন, ভূগর্ভের জল নিয়ে নীতির দৃঢ়তা নেই। গঙ্গা বাঁচাতে গড়া সাত আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশও মানা হয়নি। ‘‘সুপারিশের মূল ভিত্তি ছিল ‘অবিরল ও নির্মল ধারা’। কিন্তু তা কার্যকর হল কোথায়,’’ আক্ষেপ কমিটির এক সদস্যের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবদূত ঘোষঠাকুর ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৭
Share: Save:

তার অপর নাম জীবন। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে এবং ভূগর্ভে সেই জীবন, সেই জলই এখন বিষময়। আর তার অধিকাংশ দায় মানুষের। আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্ব জল দিবসে মানুষকে সেই বিষয়ে সচেতন হতে, জীবনকে বিষমুক্ত করার জন্য উদ্যোগী হতে আহ্বান জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা।

কেন্দ্রীয় সরকার বছর বছর টাকা ঢালছে। কিন্তু রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক আর ফ্লুয়োরাইডের বিপদ বাড়ছেই। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, রাজ্যের ১৭৪টি ব্লকে বছরে গড়ে ২০ সেন্টিমিটার করে জলস্তর নামছে। আর যেখানে জলস্তর দ্রুত নামছে, সেখানেই আর্সেনিক ও ফ্লুয়োরাইডের দূষণ আরও চেপে বসছে বসছে। রাজ্যের ৩৮% ব্লক ইতিমধ্যেই আর্সেনিক-প্রবণ এবং ফ্লুয়োরাইড-প্রবণ হয়ে উঠেছে। এক পর্ষদ-কর্তা জানাচ্ছেন, রাজ্যের মোট ৩৪১টি ব্লকের মধ্যে ৮১টি ব্লক আর্সেনিক-প্রবণ এবং ৪৯টি ব্লক ফ্লুয়োরাইড-প্রবণ। ‘‘ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবনমন অবিলম্বে বন্ধ করতে না-পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে,’’ মন্তব্য ওই পর্ষদ-কর্তার।

পর্ষদের বিজ্ঞানী-গবেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ২০০৫ সালে তখনকার রাজ্য সরকার ভূগর্ভের জল তোলায় নিয়ন্ত্রণ আনতে কড়া আইন প্রণয়ন করেছিল। তাতে ভূগর্ভ থেকে জল তোলার প্রবণতা কমতে শুরু করেছিল। তৃণমূল সরকার এসে সেই আইন সংশোধন করে জল তোলার নিয়ন্ত্রণ শিথিল করায় ফের ভূগর্ভস্থ জলের উপরে চাপ বাড়ছে। বিশ্ব জল দিবসে রাজ্যের জলস্তর নামা এবং তার সঙ্গে জড়িত দূষণের ব্যাপারে মানুষকে আরও এক বার সচেতন করতে চাইছেন পরিবেশবিদেরা।

বিপদ ভূপৃষ্ঠের জলেও। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের মতে, সেচনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ক্রমাগত ভূগর্ভের জল তোলা হয়েছে, হচ্ছে। আবার একের পর এক বাঁধ দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ। ফলে নদীতে জল কমেছে, তার পলি বহনের ক্ষমতাও কমেছে। এর ফলে নদীর দূষণ বেড়েছে ও বাড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব জলোন্নয়ন রিপোর্টেও বলা হয়েছে, এ দেশে নদীতে বাঁধ দিয়ে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই বাঁধের জন্যই বন্যা হচ্ছে!’’ পরিবেশকর্মীরা বলছেন, অশোধিত বর্জ্য এসে নদীতে মেশায় জল দূষিত হচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্রও।

ভূগর্ভে বিষ মেশার কারণ অনেকটাই প্রাকৃতিক। তবে সেখানেও পরোক্ষ ভাবে মানুষই দায়ী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ’-এর অধিকর্তা তড়িৎ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে ভূগর্ভের জল ব্যবহারের নীতি থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। নির্বিচারে মাটির তলা থেকে জল তোলার ফলে ভূ-রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিক-ফ্লুয়োরাইডের মতো বিষ মিশছে জলে।’’ তাঁর মতে, ভূগর্ভের জল প্রকৃতির দান। তাকে নষ্ট করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে।

পরিবেশবিদেরা বলেন, ভূগর্ভের জল নিয়ে নীতির দৃঢ়তা নেই। গঙ্গা বাঁচাতে গড়া সাত আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশও মানা হয়নি। ‘‘সুপারিশের মূল ভিত্তি ছিল ‘অবিরল ও নির্মল ধারা’। কিন্তু তা কার্যকর হল কোথায়,’’ আক্ষেপ কমিটির এক সদস্যের।

পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট অব ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস’-এর আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রেও জলদূষণের কথা ওঠে। সংস্থার সভাপতি বাদল ভট্টাচার্য জানান, টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির সঙ্গে যৌথ সমীক্ষায় তাঁরা নদীর জলে ‘পলিঅ্যারোমাটিক হাইড্রোকার্বন’-এর দূষণ পেয়েছেন। ‘‘মানুষকে বাঁচাতে পরিস্রুত জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কিছু গ্রামীণ এলাকায় নিজেদের উদ্যোগে জল পরিশোধনের যন্ত্র বসিয়েছি,’’ বলেন বাদলবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Water Pollution Arsenic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy