Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Duttapukur Blast

দত্তপুকুর কাঁপিয়ে দিয়েছে বাজিশিল্পকে, ক্রিকেট বিশ্বকাপের চাহিদা নিয়ে চাপে বেগমপুর-নুঙ্গি

হুগলির বেগমপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গির দুই বাজি-ঘর থেকে জানা গেল, এখন সারা বছরই বাজির চাহিদা থাকে। তা উৎসবের অংশ হয়ে গিয়েছে। দেদার বিক্রি হয়েছে চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছোঁয়ার দিনও।

Duttapukur Blast

উৎসবের সরসুমের আগে কপালে চিন্তার ভাঁজ বাজি ব্যবসায়ীদের। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ১৩:৩৬
Share: Save:

দত্তপুকুর বিষ্ফোরণের পর কার্যত কেঁপে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে সমগ্র বাজিশিল্প। উৎসবের ভরা মরসুমের আগে যখন দিনরাত এক করে বরাত শেষ করার কথা, তখন কাঁচামাল থেকে তৈরি বাজি— সমস্ত সরিয়ে ফেলতে হচ্ছে রাজ্যের দুই জনপদ থেকে অন্যত্র। এর মধ্যে প্রথমটি হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গি। দ্বিতীয়টি হুগলির বেগমপুর। বাজি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, চলতি বছর তাঁদের কাছে বাড়তি রোজগারের বছর। দুর্গাপুজো থেকে দীপাবলি পর্যন্ত বাজির চাহিদা এমনিতেই বিপুল। তার সঙ্গে এ বার যুক্ত হয়েছে দেশের মাটিতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ফলে ‘বিশেষ’ চাহিদা আরও বেড়েছে।

হুগলির বেগমপুরের বাজি এক প্রস্তুতকারকের কথায়, ‘‘দত্তপুকুরের ঘটনার পরেই আমরা মাল সরাতে শুরু করেছি। আমাদের এখানে ছোট চকলেট বোমা ছাড়া কোনও শব্দবাজি তৈরি করা হয় না। কিন্তু সে সব রাখার ঝুঁকি নিচ্ছি না। রংমশাল, তুবড়ি, শেল, উড়ন তুবড়ি— সবই সাইড করে দিতে হচ্ছে।’’ এ-ও জানা গেল, ‘বিশেষ সঙ্কেত’ পেয়েই তাঁরা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়া বাজি এবং বাজি তৈরির কাঁচামাল সরিয়ে দিচ্ছেন। কোথায়, সেই ঠিকানা বলতে অবশ্য রাজি হলেন না মধ্যবয়সি বাজি ব্যবসায়ী। চার পুরুষ ধরে বাজির ব্যবসা করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গির একটি পরিবার। ফোনে সেই বাজি-ঘর থেকে এক তরুণ বললেন, ‘‘ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য এ বার বিশেষ বাজি তৈরি করেছিলাম। মূলত জাতীয় পতাকার তিনটি রঙের শেলই বেশি ছিল তার মধ্যে। সে সব নিয়েই এখন নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে।’’

বেগমপুর এবং নুঙ্গির দুই বাজি-ঘর থেকে জানা গেল, এখন সারা বছরই বাজির চাহিদা থাকে। বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন— বাজি কার্যত উৎসবের অংশ হয়ে গিয়েছে। বেগমপুরের বাজি ব্যবসায়ী এ-ও জানালেন, যে দিন চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছুঁয়েছিল, সেদিনও তাঁদের বিস্তর বাজি বিক্রি হয়েছে। উল্লেখ্য, তার চার দিন পর দত্তপুকুরে বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার দিনও বেশ বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন বাজি ব্যবসায়ীরা।

নুঙ্গির বাজি প্রস্তুতকারক পরিবারের এক তরুণ মাঝে কয়েক বছর সোনার গয়না তৈরির কাজে মুম্বইয়ে ছিলেন। কিন্তু লকডাউনের সময়ে তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। সেই যে এসেছিলেন, তারপর আর ফেরেননি। তিনিও এখন বংশানুক্রমে চলে-আসা বাজির ব্যবসাতেই মন দিয়েছেন। সেই তরুণের কথায়, ‘‘এগরার ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের পাশে বজবজে একটি বিষ্ফোরণ হয়েছিল। সেই সময়ে কিছু দিন আমরা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো ভরা বাজারের সময়! সব পুঁজি ঢেলে দিয়েছি। কী করব বুঝতে পারছি না।’’ ওই দু’টি পরিবারেরই দাবি, যে ভাবে ‘গ্রিনবাজি’র কথা বলা হচ্ছে, তা-ও তাঁদের পক্ষে বানানো সম্ভব নয়। কারণ, তার জন্য যে কাঁচামাল লাগে, তাতে পড়তায় পোষাতে পারবেন না তাঁরা। আপাতত বাজি-ঘরগুলিতে উৎপাদনের সেই তৎপরতা আর নেই। বরং সেখানে এখন ইতিমধ্যেই তৈরি হওয়া বাজিগুলি সরিয়ে ফেলার ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তাঁদের তাড়া করছে উৎসবের মরশুম শুরুর আগেই আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE