মশালডাঙা সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের নেই পরিচয় পত্র। —নিজস্ব চিত্র।
একটা দেশ পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যাতে নাগরিক পরিচয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচা যায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে জবেদা বেওয়ার। বাড়ির পাশের মানুষগুলি সবাই দেশ পেয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দে মেতে ওঠার প্রস্তুতিও নিতেও শুরু করেছেন তাঁরা। আর জবেদা তাকিয়ে আছেন সে দিকে। চোখ বেয়ে নেমে আসছে জল। কাপড়ের আঁচলে ঘন ঘন চোখের কোণ মুচছেন তিনি। বলেন, “আমাগো আর দ্যাশ হইল না। জানি না আর কোনও দিন দ্যাশ পাইব কি না?’’
কোচবিহারের সাবেক ছিটমহল দক্ষিণ মশালডাঙার বাসিন্দা জবেদা। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। ছিটমহল বিনিময় হলেও জবেদা বেওয়ার মতো দশটি পরিবারের ৪৮ জন কোনও দেশের নাগরিকত্ব পাননি। তাঁরা বার বার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। প্রশাসনের তরফে তাঁদের জানানো হয়েছে, ২০১১ সালের গণনায় তাঁদের নাম না থাকায় এ বারে বিনিময়ের আগে তাঁদের নাম সমীক্ষার সময় বাদ চলে যায়। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। আমরা ঢাকাতে বৈঠকের সময় বিষয়টি তুলেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও ওই তালিকা দেওয়া হয়েছে।”
মানবাধিকার সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “২০১৫ সালে জনসমীক্ষার সময় বার বার ওই পরিবারগুলি প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায়। তাতে কোনও কাজ হয়নি। প্রশাসনিক স্তরে একটু উদ্যোগ নিলেই এই সমস্যা মেটানো যায় বলে আমাদের মনে হয়। সেক্ষেত্রে ২০১১ সালের জনগণনার মূল কাগজপত্র এবং বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে নিতে হবে।”
জবেদা বেওয়া জানান, ছেলে নুর নবী শেখকে নিয়ে তিনি থাকেন দক্ষিণ মশালডাঙায়। তাঁর এক মেয়ে আছে। তার বিয়ে হয়েছে। তাঁদের কাউকেই নাগরিক হিসেবে ধরা হচ্ছে না। সে জন্য ভোটার কার্ড, আধার কার্ড পাননি তাঁরা। হয়নি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট। তাই আতঙ্কে রয়েছেন, যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তাহলে তাঁরা যে দক্ষিণ মশালডাঙার বাসিন্দা তার কোনও প্রমাণ দেখাতে পারবেন না।
বাসিন্দাদের অনেকে জানান, একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশি ছিটমহল থেকে কেউ বাইরে বেরোতে পারত না। বাজার করতে গিয়েও অনেকে বাংলাদেশি হিসেবে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এ বারে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। এখন আর ওই ভয় কারও নেই। শুধু ওই দশটি পরিবার এখনও আতঙ্কে। জবেদার আর্জি, এ বার তাঁদের দিকে প্রশাসন
নজর দিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy