ছবি: পিটিআই।
শান্তিপূর্ণ পথে প্রতিবাদের ডাক দিয়ে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় নামলেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে কবি জয় গোস্বামী বলেন, ‘‘ভারতে এখন ঘোর দুর্দিন। এই আইনকে প্রত্যাহার করতে সব ধরনের মানুষকে একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’’
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ‘‘বিভেদের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু মানুষ গন্ডগোলের সৃষ্টি করে। কিন্তু আমাদের সতর্ক হয়ে শান্তিপূর্ণ পথে প্রতিবাদ করতে হবে।’’ শিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের আবেদন, শান্তির পথে প্রতিবাদ করুন। নইলে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তারাই সুবিধা পেয়ে যাবে।’’ অসুস্থতার কারণে হাজির হতে না-পারলেও সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং গায়ক কবীর সুমন তাঁদের লেখা পাঠিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক আবুল বাশার, কবি সুবোধ সরকার, গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মতো নাগরিক সমাজের পরিচিত মুখও।
নয়া নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্ক দেশভাগের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মনে। তিনি বলেন, ‘‘দেশভাগের সময় ও-পার বাংলা থেকে আসার সময় নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে আসার যন্ত্রণা এখনও বুঝি। ১৯৫৬ সালে শিয়ালদহ স্টেশনে ইটে মাথা রেখে মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলাম। নতুন আইনে আবার সেই অবস্থা ফিরবে না তো!’’
আরও পড়ুন: অবরোধে ঠায় আটকে ট্রেন, ক্ষোভ উগরে দিলেন যাত্রীরা
তবে একই সঙ্গে সাধারণ নাগরিক সমাজের তরফে এনআরসি এবং নতুন নাগরিকত্ব আইনের শান্ত, যুক্তিপূর্ণ প্রতিবাদও দেখা যাচ্ছে। এ দিনই ঢাকুরিয়ায় মধুসূদন মঞ্চের সামনের জমায়েতে ‘আর্টিস্ট ইউনাইট’ ডাক দিয়ে সমাজের নানা স্তরের মানুষ প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। এর আগে পুলওয়ামা-কাণ্ডের পরেও দেশের সম্প্রীতিতে ফাটল ধরানো রুখতে তাঁরা অনেকেই পথে নামেন। গানে-গল্পে-অভিনয়ে নানা ভাষায় চলে নাগরিক প্রতিবাদ।
তবে শান্তির বার্তার মাঝেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অশান্তি নিয়ে নানান ভুয়ো পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে। গত লোকসভা ভোটের আগে বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙার পরে ‘আমি বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র’ বা ‘অমুক এলাকার বাসিন্দা’ পরিচয় দিয়ে এক ধরনের সাফাই পোস্টের ঢল নামে সে-বার। খানিকটা সেই ঢঙেই এ বার আমি অমুক এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী বলে কলকাতার কাছের একটি স্টেশনে আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ড করছেন। কিছু ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যের হিংসার ছবিও পশ্চিমবঙ্গের বলে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।
নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রাজ্যে নানা ধরনের প্রতিবাদের পটভূমিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারের চেষ্টা নিয়েও সতর্ক রাজ্য বা কলকাতা পুলিশ। সংহতি, সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করে গুজব ছড়ানো কিংবা উস্কানির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেই প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে ফের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনও ধরনের গোলমাল বাধানো বা সম্প্রীতি নষ্ট করার মতলবে কিছু প্রচার করা হলে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হবে। ফোন বা কম্পিউটারের মতো বৈদ্যুতিন মাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচারও মেনে নেওয়া হবে না।’’ অনেকেই বন্ধুদের কাছ থেকে ছবি বা ভিডিয়ো পেয়ে তা অন্যদের পাঠাচ্ছেন। তাঁদেরও সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে হিংসায় প্ররোচনা দেওয়াও আইনত অপরাধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy