Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

সন্দেশখালিতে বাড়ছে ভাঙন, আতঙ্কিত গ্রাম

দুপুরে সবে ভাতের থালা নিয়ে বসেছিলেন বাবুলাল সর্দার ও কল্পনা সর্দার। এমন সময় হঠাৎ জোরে বারী কিছু পড়ার শব্দ। সব ফেলে তড়িঘড়ি বাড়ির থেকে বেরিয়েই তাঁর দেখলেন বাঁধের মাটি ধসে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে।

ভাঙনের হাঁ-মুখ। —নিজস্ব চিত্র।

ভাঙনের হাঁ-মুখ। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

দুপুরে সবে ভাতের থালা নিয়ে বসেছিলেন বাবুলাল সর্দার ও কল্পনা সর্দার। এমন সময় হঠাৎ জোরে বারী কিছু পড়ার শব্দ। সব ফেলে তড়িঘড়ি বাড়ির থেকে বেরিয়েই তাঁর দেখলেন বাঁধের মাটি ধসে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে আশেপাশের বাড়ির লোককে ডেকে নিয়ে আশ্রয় নিলেন ইট পাতা একটি রাস্তায়।

সন্দেশখালি ২ ব্লকের মণিপুর গ্রামের মানুষের এখন সাকিন, রাস্তা। সেখানেই কাটছে দিনরাত। অমাবস্যার ভরা কোটালে জল বাড়ায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢোকা শুরু হয়েছে। ভাঙন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক। কিন্তু এখনও বাঁধ বাঁধার উদ্যোগ নেই। ভাঙনের পরে তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও সরকারি উদ্যোগে গ্রামের মানুষের কাছে ত্রাণ না পৌঁছনোয় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। বসিরহাটের মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে ত্রাণ এবং ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জল কমলেই বাঁধ বাঁধার কাজ হবে।’’

ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুরে ওই এলাকার তালতলার কাছে বড় কলাগাছি নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামের মধ্যে নোনা জল ঢোকে। নোনা জলে প্রায় ৩ হাজার একর বিঘা মেছোভেড়ির বাগদা চিংড়ি মাছ ভেসে গিয়েছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।

আতাপুর, মণিপুর, ধুচনেখালি, পূর্ব আতাপুর এলাকার প্রায় হাজারখানেক বাড়ি জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। গবাদি পশুর খাবারে টান পড়েছে। প্রশাসনের কর্তারা এলাকা ঘুরে দেখেছেন ঠিকই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল ভাঙনের মুখ বড় হয়ে দু’শো ফুট ছাড়িয়েছে। সেখান দিয়ে গ্রামের মধ্যে বেগে জল ঢুকছে। আয়লার তাণ্ডবে এই এলাকা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছিল। বাড়ি, ঘর, গাছ-গাছালি সব ভেঙে পড়েছিল। তছনছ হয়ে গিয়েছিল বহু গ্রাম। সেই একই এলাকায় ফের বাঁধ ভাঙায় মানুষ আতঙ্কিত।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুনীল পড়ুয়া বলেন, ‘‘বাঁধ মেরামত না হওয়ার কারণেই বছর বছর ভাঙন হয়। এখানকার মানুষদের নাজেহাল হতে হয়।’’ প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই অবস্থা বলে তিনি জানান। স্বপন সর্দার, শ্যামলী সর্দার, দিলীপ দাসরা বলেন, ‘‘আমাদের এখানের মানুষ খুবই গরিব। নোনা জলে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। এ বারের প্লাবনে সব শেষ হয়ে গেল।’’ তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় আয়লা বাঁধের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাঁধের জন্য যে সব জমি সরকারি ভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তা-ও গত কয়েক বছর ধরে বারে বারে ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গিয়েছে।

সেচ দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘ভোটের আগে তালতলায় দুর্বল বাঁধের পাশে রিভার গার্ড ভেড়ি দেওয়ার কাজ হচ্ছিল। এ বারের ভাঙনে সব ধুয়ে গেল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Embankment erosion villagers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy