সিঙ্গুরের মিছিলে পুলিশের সামনেই সুমিত (চিহ্নিত)। — নিজস্ব চিত্র।
সপ্তাহখানেক আগেই তাঁর বিরুদ্ধে একটি জলসত্র শিবিরে হাঙ্গামা এবং মহিলা পুণ্যার্থীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল।
পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। কারণ, পুলিশের খাতায় তিনি ‘পলাতক’।
তিনি— হরিপাল মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতা সুমিত সরকার। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ দেখানোর প্রতিবাদে রবিবার বিকেলে পুলিশের সামনেই সংগঠনের কর্মী-সদস্যদের নিয়ে মিছিল করলেন সিঙ্গুরে।
কিন্তু পুলিশ তাঁকে ধরল না। হরিপাল থানা দাবি করল, অভিযুক্ত তাদের কাছে এখনও ফেরার। তাঁর মিছিলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গুর থানার দাবি, সুমিতকে তারা চেনে না। আর জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী দাবি করেন, ‘‘ওই মিছিলের বিষয়ে আমার কাছে কোনও খবর ছিল না। স্থানীয় থানাকে খোঁজ নিতে নির্দেশ দেব।’’
তবে, মিছিলের ছবি তোলার সময়ে আনন্দবাজারকে সুমিত বলে দিলেন, ‘‘ছবি তুললে তুলুন। আমার কিছু হবে না।’’
এ দিনের ঘটনায় এই জেলারই চাঁপদানি-কাণ্ডের ছায়া দেখছে বিরোধীরা। চলতি বছরেই পুরভোটের আগে পুলিশের একটি মোটরবাইক ধরাকে কেন্দ্র করে চাঁপদানি পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম গুপ্তের বিরুদ্ধে দলবল নিয়ে চাঁপদানি ফাঁড়িতে ভাঙচুর ও পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। তার পরের দিনই বিক্রমকে এলাকায় মিছিল করতেও দেখা যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও পুলিশ বিক্রমকে ধরেনি। পরে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। সেই সময়ে পুলিশের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা বলেছিলেন, অভিযুক্ত শাসক দলের হওয়াতেই পার পেয়ে যায়। সুমিতের ক্ষেত্রেও একই সুর শোনা যাচ্ছে বিরোধীদের গলায়।
গত ৯ অগস্ট পশ্চিম নালিকুলের বাগানবাটি এলাকায় একটি ক্লাবের পক্ষ থেকে শ্রাবণী মেলার জলযাত্রীদের জন্য একটি জলসত্র শিবির করা হয়। অভিযোগ, সুমিতের নেতৃত্বে টিএমসিপি-র ছেলেরা সেখানে হাঙ্গামা করে। মহিলা জলযাত্রীদের শ্লীলতাহানি করে। হরিপাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মিলন দে পুলিশের কাছে সুমিত-সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে হরিপাল থানা তিন জনকে ধরলেও সুমিত অধরা থেকে যান।
রবিবার বিকেলে সুমিতের নেতৃত্বেই সিঙ্গুর থানার সামনে থেকে মিছিল হয় সিঙ্গুর হাসপাতাল পর্যন্ত। মিছিলে ছিলেন হরিপাল ও সিঙ্গুর কলেজের পড়ুয়ারাও। ওই রাস্তা দিয়েই তারকেশ্বরে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাচ্ছিলেন পুণ্যার্থীরা। সে জন্য রাস্তাটির একাংশ ‘নো এন্ট্রি’ থাকলেও মিছিলে বাধা দেয়নি পুলিশ। বরং তারা মিছিলটিকে ঘিরে রেখেছিল। মিছিল শেষে সুমিত সিঙ্গুর-১ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে মন্ত্রী বেচারাম মান্নার স্ত্রী, জেলা পরিষদ সদস্য করবীদেবীর সঙ্গে দেখাও করেন। তবু, সুমিত এ দিনও পুলিশের কাছে ‘পলাতক’ থেকে যান।
করবীদেবীর দাবি, সুমিত যে ‘ফেরার’ সেটা তিনি জানেন না। টিএমসিপির জেলা সভাপতি শুভজিৎ সাউয়ের দাবি, ‘‘প্রেসিডেন্সি কলেজের ঘটনার প্রতিবাদে সিঙ্গুর কলেজের ছাত্রেরা মিছিল করেছে। সেখানে হরিপাল কলেজের ছাত্রদের থাকার কথা আমার জানা নেই।’’
তবে, জেলা তৃণমূলের একটা অংশ হরিপালের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্নার ‘স্নেহভাজন’ বলে পরিচিত সুমিতের আচরণে ক্ষুব্ধ। কেননা, শুধু ওই শ্লীলতাহানির ঘটনাই নয়, সুমিত অনেকবার নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। মাস পাঁচেক আগে দলবল নিয়ে হরিপালের একটি পানশালায় ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। জেলা টিএমসিপি-র এক নেতা বলেন, ‘‘দলের নেতাদের নজরে থাকার জন্যই সুমিতের এতো দাপট।’’ বেচারামবাবু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পুলিশ অভিযুক্তদের নিশ্চয়ই ধরবে। আইন আইনের পথেই চলবে।’’
কিন্তু বিরোধীরা এ কথায় আস্থা রাখতে পারছে না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ার থাকলে সে যতই দোষ করুক, সাত খুন মাফ হয়ে যাবে। শাসক দলের মন্ত্রীরাই তাদের পুলিশের থেকে আড়াল করে থাকবে।’’ কংগ্রেসের জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রীতম ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ তো শাসকদলের তাঁবেদারি করে চলেছে। এতে মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে গোটা বাহিনী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy