Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

তলব করেও মূল ফাইল পায়নি ইডি 

ইডি সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, বার কয়েক চাওয়ার পরও যদি সরকার ফাইল না-দেয়, তা হলে তাদের কাছে আসা অভিযোগের সারবত্তা আছে ধরে নিতে হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

সরকারের বক্তব্য, মেট্রো ডেয়ারির শেয়ার বিক্রি হয়েছিল নিয়মকানুন মেনেই। তার পরেও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে মূল ফাইলটি দেওয়ার দায়িত্ব নিতে চাইছে না সংশ্লিষ্ট কোনও দফতরই। ফাইলটি ইডি-কে দেওয়া নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিল্ক ফেডারেশন, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর, অর্থ দফতর আর মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের মধ্যে টানাপড়েন চলেছে বলে সূত্রের দাবি। ইতিমধ্যেই বদলি হয়ে গিয়েছেন প্রাণিসম্পদ দফতরের সচিব অনিল বর্মা।

ইডি সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, বার কয়েক চাওয়ার পরও যদি সরকার ফাইল না-দেয়, তা হলে তাদের কাছে আসা অভিযোগের সারবত্তা আছে ধরে নিতে হবে। তখন সংশ্লিষ্ট দফতরে হানা দেওয়া ছাড়া উপায় না-ও থাকতে পারে।

নবান্ন সূত্রের খবর, ২০১৭-এর অগস্টে রাজ্য মন্ত্রিসভা মেট্রো ডেয়ারির ৪৭% শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্তে সায় দেয়। সরকার ৮৪.৫ কোটি টাকায় কেভেন্টার্স অ্যাগ্রোকে ওই শেয়ার বিক্রি করে। কেভেন্টার্সের হাতেই মেট্রোর ৫৩% শেয়ার ছিল। সরকারের ৪৭% শেয়ার কেনার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিঙ্গাপুরের একটি প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডকে মেট্রোর ১৫% শেয়ার ১৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করে কেভেন্টার্স। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।

জনস্বার্থ মামলার সূত্রেই প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, সিঙ্গাপুরের সংস্থা যে দরে শেয়ার কিনেছে, সেই দর রাজ্য পেলে কোষাগারে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা আসত। তা হলে রাজ্য কী ভাবে ৮৪.৫ কোটিতে মেট্রোর শেয়ার বিক্রি করল? অর্থ দফতর কোন সূত্রে মেট্রোর দাম ঠিক করেছিল? তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে শেয়ারের মূল্যায়ন করানো কেন হয়নি? সিঙ্গাপুরের যে সংস্থা মেট্রোর শেয়ার কিনতে ১৭০ কোটি ঢেলেছে, তা কার টাকা? কোনও শীর্ষ কর্তার সঙ্গে কি এই ‘ডিলের’ যোগসূত্র রয়েছে?

এ সব চর্চার মাঝেই ইডি মিল্ক ফেডারেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে মেট্রো হস্তান্তরের মূল ফাইলটি চায়। সিঙ্গাপুরের সংস্থার বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তারা ‘ফেমা’য় মেট্রো ডেয়ারির শেয়ার বিক্রির তদন্ত করতে চায়। নবান্নের খবর, মেট্রোর এক সময়ের নিয়ন্ত্রক মিল্ক ফেডারেশন মূল ফাইলটি প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কাছে চেয়ে পাঠায়। তারা ইডি-কে ফাইলটি দেওয়ার পক্ষে। সংস্থার এমডি অরবিন্দ ঘোষ এ নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তবে সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ফলে ফেডারেশন দায় নেবে না। সেই কারণেই সরকারের কাছে ফাইল চাওয়া হয়েছে।’’

ইডি-কে ফাইল দেওয়ার সিদ্ধান্ত অর্থ দফতরের নেওয়া উচিত বলে তৎকালীন সচিব অনিল বর্মা নবান্নে প্রস্তাব দেন। কিন্তু অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী প্রথম বার তা পত্রপাঠ খারিজ করেন। প্রাণিসম্পদ দফতর ফের অর্থ দফতরকে জানায়, যে হেতু মেট্রো সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় অর্থ দফতর আদালতে হলফনামা দিয়েছে, তাই ইডির তলবে তাদেরই সাড়া দেওয়া উচিত। দ্বিতীয় বারও অর্থ দফতর জানিয়ে দেয়, এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রাণিসম্পদ দফতরকেই নিতে হবে। যে দিন এই ফাইল অর্থ থেকে প্রাণিসম্পদে পৌঁছায়, ঘটনাচক্রে সে রাতেই বদলি হন সচিব অনিল বর্মা। নবান্নের একটি সূত্রের দাবি, মেট্রোর শেয়ার বিক্রিতে প্রশ্ন তোলার পর ঘটনাচক্রে এক সচিব এবং এক বিশেষ সচিব বদলি হন।

সূত্রের খবর, অনিল বর্মা নতুন সচিব বি পি গোপালিকাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সময় মেট্রোর ফাইলটি যে রইল, তা জানিয়ে এসেছেন। দফতর সূত্রের খবর, ই-ফাইল ট্র্যাকিংয়েও ফাইলটি সর্বশেষ কার হাতে রয়েছে, তা রেকর্ডে রাখা হয়েছে।

প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, আদালতে হলফনামায় রাজ্য জানিয়েছে, নিলামের মাধ্যমে দাম ও ক্রেতা নির্ধারণ হয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ। তা হলে ইডির হাতে ফাইল তুলে দিতে দ্বিধা কেন? অর্থ সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে এ বিষয়ে শনিবার ফোন করা হলে তিনি রাত পর্যন্ত ফোন ধরেননি, মেসেজেরও উত্তর দেননি। তবে দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ই-নিলাম করে ক্রেতা খোঁজা হয়েছিল। শেয়ার মূল্য ঠিক করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের দিয়ে, স্বচ্ছতা রেখেই মেট্রো ডেয়ারি বিক্রি হয়েছে। এখন প্রাণিসম্পদ দফতর ইডি-কে ফাইল দেবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

ED Metro Dairy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy