ইডির চার্জশিটে শান্তনু এবং অয়নের নাম। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অয়ন শীলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করতে চলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গত ১০ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছিল হুগলির বলাগড়ের তৃণমূল যুবনেতা (অধুনা বহিষ্কৃত) শান্তনুকে। ২০ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হন শান্তনু ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন। শান্তনুর গ্রেফতারির ৫৯ দিন পর এবং অয়নের গ্রেফতারির ৪৯ দিন পর চার্জশিট পেশ করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। সোমবারই আলিপুরের নগর দায়রা আদালতে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মোট সাত জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মোট ১১৩ পাতার চার্জশিট পেশ করল ইডি। এই মামলার সাক্ষী হিসাবে ৩৪ জনের নাম উল্লিখিত হয়েছে চার্জশিটে।
গত জানুয়ারি মাসেই শান্তনুর বলাগড়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে বলা হয়, শান্তনুর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৩০০ চাকরিপ্রার্থীর তালিকা। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে আরও জানা যায়, এই বিষয় নিয়েও গোয়েন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়েন শান্তনু। কিন্তু শান্তনুর বয়ানে একাধিক ‘অসঙ্গতি’ খুঁজে পায় ইডি। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ৩ মে আদালতে ইডির আইনজীবী জানান, ৩০০ জনের তালিকার পাশাপাশি, ২৬ জন চাকরিপ্রার্থীর একটি তালিকা শান্তনুকে দেওয়া হয়েছিল। ওই তালিকাভুক্ত ২৬ জনকে চাকরি পাইয়ে দিতে বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল যুবনেতা শান্তনুকে প্রায় ১কোটি ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বলেও আদালতে দাবি করেন ইডির আইনজীবী। ইডির তরফে আদালতে এ-ও জানানো হয়, মূলত স্কুলের প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকে অবৈধ উপায়ে নিয়োগের জন্যই ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। ইডির আরও অভিযোগ, ‘লোটাস কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি সংস্থাকে প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার এবং কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন শান্তনু। পরে সেই কোম্পানি থেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর অভিযোগও তোলা হয়েছে শান্তনুর বিরুদ্ধে। আদালতে ইডির কৌঁসুলি জানান, আয়ের উৎস লুকোতে, দিনমজুরদের মজুরি দেওয়ার জন্য একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে চেকবুকে মজুরিপ্রাপকদের দিয়ে সই করিয়ে নিয়ে রেখেছিলেন শান্তনু। তদন্তকারীরা মনে করছেন এর মাধ্যমেও টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। তদন্তে শেষ ১৪ দিনে কী অগ্রগতি হয়েছে, বিচারক তা জানতে চাইলে তদন্তকারী আধিকারিক গিয়ে সবটা ব্যাখ্যা করেন।
অন্য দিকে ইডি সূত্রে জানা যায়, অয়নের সল্টলেকের অফিস থেকে রাজ্যের একাধিক পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত নথি পাওয়া গিয়েছে। অয়নের অফিসে থাকা কয়েকটি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করে দেখা যায়, রাজ্যের একাধিক পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে কম্পিউটারে। কিছু ফোল্ডারে রয়েছে চাকরিপ্রার্থী এবং প্রাপকদের নামও। ইডি সূত্রে খবর, নিয়োগ সংক্রান্ত হাতে লেখা কিছু ‘নোট’ও পাওয়া গিয়েছে। ইডি সূত্রে জানা যায়, তার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে থেকে যে সমস্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, শুধু নিয়োগ দুর্নীতি নয়, একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শান্তনু এবং তাঁর সহযোগীরা।
অয়নের গ্রেফতারির পরেই তাঁর বেশ কয়েক জন ‘ঘনিষ্ঠে’র ভূমিকা তদন্তকারীদের আতশকাচের তলায় আসে। এর পরই অয়নের পুত্র অভিষেকের ভূমিকাও নজরে আসে তদন্তকারীদের। অভিষেক এবং তাঁর বান্ধবী ইমন যৌথ মালিকানায় একটি পেট্রল পাম্প কিনেছিলেন বলে হলফনামায় জানিয়েছিল ইডি। শুধু তাই নয়, কলকাতায় বন্ডেল রোডের উপরে অভিষেক এবং ইমন যৌথ মালিকানায় একটি ফার্ম খুলেছিলেন। তার নাম দিয়েছিলেন ‘ফসিল্স’। এখনও পর্যন্ত অয়নের নামে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি, প্রায় ২ লক্ষ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি, ৬৩ লক্ষ টাকার গাড়ির হদিস পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy