ফাইল চিত্র।
তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা (টেট) নেওয়া হয়েছে তিন বার। নিয়োগ তদন্তে সেই সব টেট-কেই পাখির চোখ করছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাদের অনুমান, প্রাথমিক টেট ঘিরে চাকরি বিক্রির খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছে। তৃতীয় টেটের ভিত্তিতে এখনও কোনও নিয়োগ না-হলেও টাকা নিয়ে সেই নিয়োগের তালিকা করা হয়েছিল বলে জেনেছে ইডি।
ইডি সূত্রের খবর, ২০১২ সালের নির্ধারিত প্রাথমিক টেট ওই বছরেই নেওয়া হয়েছিল। ২০১৪-র প্রাথমিক টেট হয় ২০১৫ সালে। আর ২০১৭-র প্রাথমিক টেট ২০২১ সালে হয়েছে। তবে সেই পরীক্ষার প্রেক্ষিতে এখনও নিয়োগ হয়নি। ২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে বেআইনি নিয়োগের মামলা হয়েছে। কিন্তু টাকার খেলা ২০১২-র টেটের ভিত্তিতে নিয়োগের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের। ২০১২ ও ২০১৫ সালের টেটের ভিত্তিতে ৯০ শতাংশ নিয়োগই টাকা নিয়ে করা হয়েছে বলে ইডি-র প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণি আর ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ এবং উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগে টাকার খেলার চেয়ে প্রাথমিক টেটের ভিত্তিতে বেআইনি নিয়োগে দুর্নীতির মাত্রা অনেক বেশি বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁরা তদন্তে জেনেছেন, প্রাথমিক টেটে চাকরি-পিছু ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। সে-ক্ষেত্রে কত নিয়োগ হয়েছিল, তা দেখা হচ্ছে।
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ এবং আটক নথির ভিত্তিতে তদন্তকারীদের দাবি, শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন অফিস, অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট এবং পার্থের ঘনিষ্ঠ একটি ক্লাবের অফিস ছিল চাকরি বিক্রির আঁতুড়ঘর।
তদন্তকারীদের দাবি, সুনিপুণ ভাবে অভিনব কৌশলে মোটা টাকায় চাকরি বিক্রি করা হয়। বিধায়ক, পুরসভার কাউন্সিলর ও পঞ্চায়েত-কর্তাদের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের সুপারিশের তালিকা তলব করা হয়েছিল। দুর্নীতির প্রথম ধাপ ওই সুপারিশপত্রের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা। সুপারিশ অনুযায়ী প্রার্থীদের সঙ্গে টাকার বিষয়ে রফা করা হত। প্রথম দিকে সুপারিশ অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। পরে দল এবং শিক্ষা দফতরের অন্দরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, টাকা ফেললে চাকরির সুযোগ আছে। শুরু হয় লক্ষ লক্ষ টাকায় সরকারি চাকরি বিক্রি। পার্থই দুর্নীতির সেই চক্রের মূল চক্রী ছিলেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।
ইডি-র খবর: পার্থ নিজে কোনও সুপারিশপত্র গ্রহণ করতেন না। তাঁর কাছে কেউ সুপারিশপত্র নিয়ে হাজির হলে তাঁকে অর্পিতার কাছে বা শিক্ষা দফতরে ঘনিষ্ঠ কোনও আমলার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত। নইলে নাকতলায় তাঁর ঘনিষ্ঠ ক্লাবের কারও কাছে সেই সুপারিশপত্র নিয়ে যেতে বলতেন পার্থ। তদন্তকারীরা জেনেছেন, গোটা রাজ্য থেকে সুপারিশ গ্রহণ করতেন পার্থ-ঘনিষ্ঠেরা। প্রার্থীর সঙ্গে রফা হয়ে গেলে অগ্রিম নেওয়া হত। পরে নাম তালিকাভুক্ত হলে দিতে হত পুরোটা।
আদালতের নির্দেশে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশন, প্রাথমিক টেট ও উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের দায়িত্বে থাকা কিছু কর্তা-আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। পার্থ-ঘনিষ্ঠ এক আমলা দুর্নীতি চক্রের অন্যতম প্রধান চক্রী বলে জেনেছে তারা।
ইডি-র দাবি, নিয়োগ-দুর্নীতিতে লভ্যাংশের টাকার বৃহৎ অংশ পার্থ ছাড়াও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে গিয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘প্রভাবশালী বিভিন্ন ব্যক্তি ছাড়াও পার্থ-ঘনিষ্ঠ এক আমলা ও অর্পিতার কাছে চাকরি বিক্রির অধিকাংশ টাকা গিয়েছে। দুর্নীতি চক্রে জড়িত কিছু বিধায়ক, কাউন্সিলর ও পঞ্চায়েত-কর্তা, শিক্ষা দফতরের এক শ্রেণির অফিসার ও কর্মী ‘দানাপানি’ (চাকরি-পিছু অল্পস্বল্প কমিশন) পেয়েই সন্তুষ্ট থেকেছেন। নিয়োগ কাণ্ডে শিক্ষা দফতরের কিছু কর্তা অবশ্য ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন। তাঁদের সম্পত্তিরও হিসেব নেওয়া হচ্ছে।’’ অধিকাংশেরই আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির সঙ্গতিহীন নথি হাতে এসেছে, দাবি তদন্তকারীদের। পার্থের ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্য-সহ বিভিন্ন আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে বহু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সব নথি যাচাই করা হচ্ছে।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, অর্পিতার বাড়িতে পাওয়া নগদ, গয়না, সম্পত্তির দলিল অনুযায়ী অর্থের পরিমাণ দেড়শো কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy