গত জুনে রাজ্যের তৎকালীন অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী-সহ চার আমলার বক্তব্য জানতে নোটিস পাঠায় ইডি। ফাইল চিত্র
মেট্রো ডেয়ারি বিক্রির তদন্তে বেসরকারি সংস্থা কেভেন্টার্সের দফতরে তল্লাশি চালাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সূত্রের দাবি, দিল্লির বিশেষ টিম এই তল্লাশির জন্য উড়ে এসেছে। এর আগেও কেভেন্টার্সের অন্যতম মালিক মায়াঙ্ক জালানকে জেরার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি।
বৃহস্পতিবার তল্লাশিতে কেভেন্টার্সের কৃষি পণ্য রফতানি সংক্রান্ত একগুচ্ছ গরমিল পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর। সৌদি আরবে কেভেন্টার্স যে কৃষি পণ্য রফতানি করেছে তার ইনভয়েসের মোট টাকার পরিমাণের সঙ্গে সৌদি আরবের আমদানিকারী সংস্থার পাঠানো টাকার বিস্তর ফারাক তারা পেয়েছে বলে ইডি-র দাবি। মেট্রোর শেয়ার হস্তান্তরের গরমিলের পাশাপাশি এখন কৃষি পণ্যের কারবার নিয়েও তদন্ত শুরু করছে তদন্তকারী সংস্থা।
গত জুনে রাজ্যের তৎকালীন অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী-সহ চার আমলার বক্তব্য জানতে নোটিস পাঠায় ইডি। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এঁরা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সচিব ছিলেন। ইডির তদন্তকারীদের দাবি, মেট্রোর শেয়ার বিক্রির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক কর্তা, এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধারেরও সরাসরি যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে। নবান্ন সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মেট্রোর ফাইল অনুমোদন করেছিলেন। সরকারি স্তরে সমস্ত প্রক্রিয়া মানা হয়েছিল বলেই তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন। এই শেয়ার হস্তান্তরে তাঁর উপর কোনও মহলের চাপ ছিল কি না তাও যাচাই করতে চান ইডি’র তদন্তকারীরা।
প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, মেট্রোতে কেভেন্টার্সের শেয়ার ছিল ৫৩ শতাংশ। রাজ্য দুগ্ধ ফেডারেশনের হাতে ছিল ৪৭ শতাংশ। বছর তিনেক আগে কেভেন্টার্স মেট্রো ডেয়ারির সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণে ২০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দেয়। ফেডারেশনেরও ১০০ কোটি টাকা লগ্নির কথা ছিল। ফেডারেশনের চেয়ারম্যান, তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্ত এ প্রসঙ্গে গত বছর অক্টোবরে আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, ‘‘সেই টাকা না থাকাতেই নিয়ম মেনে, স্বচ্ছতার সঙ্গে শেয়ার বিক্রি হয়েছে। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
প্রাশাসনের একাংশের দাবি, প্রক্রিয়া মেনে ফেডারেশনের ৪৭% শেয়ার ৮৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয় কেভেন্টার্সকে। তার কিছু দিনের মধ্যেই মেট্রোর ১৫% শেয়ার ১৭০ কোটি টাকায় সিঙ্গাপুরের একটি প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডকে বিক্রি করে কেভেন্টার্স। কেভেন্টার্স যে দরে শেয়ার বেচেছে, রাজ্য তা পেলে কোষাগারে ৫০০ কোটি টাকা আসত— এই দাবি করে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী। ওই মামলায় ইডিকে পক্ষ করা হয় এবং সেই সূত্রে তারা তদন্ত শুরু করে। ইডি জানিয়েছিল, যেহেতু সিঙ্গাপুরের সংস্থা লগ্নি করেছে, তাই ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ (ফেমা)-র আওতায় অভিযোগের তদন্ত করা হবে। রাজ্যের তরফে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় নথি দেওয়াও হয় ইডিকে।
প্রাণিসম্পদ দফতরের দাবি, ৪৭ শতাংশ শেয়ারের মূল্য ঠিক করার জন্য দরপত্র ডেকে ভ্যালুয়ার নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই সংস্থা খতিয়ান (বুক ভ্যালু) অনুযায়ী ৭০ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছিল। তখন একটি নামী অডিট সংস্থাকে ফের বাজারমূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। সর্বশেষ দাম ঠিক হয় ৮৪.৪৩ কোটি। পর পর দু’বার দরপত্র চেয়ে কেভেন্টার্সকেই একমাত্র ক্রেতা হিসেবে পাওয়া যায়। দফতরের বক্তব্য, কেভেন্টার্স পরে কাকে শেয়ার বিক্রি করেছে, তার দায় সরকারের নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy