চার্জশিটে ইডির দাবি, কুন্তল বেআইনি নিয়োগে পার্থ এবং মানিকের হাজতবাসের অজুহাত টেনেছেন। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষের চার্জশিট আদালতে পেশ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেখানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু অভিযোগ। ইডি জানিয়েছে, বেআইনি নিয়োগে ঢিলেমির জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারির অজুহাত দিয়েছিলেন কুন্তল।
কুন্তলের চার্জশিটে দিব্যেন্দু বাগ নামের এক এজেন্টের কথা উল্লেখ করেছে ইডি। দিব্যেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছে, একাধিক বার কুন্তলকে তিনিই বেআইনি নিয়োগে ইচ্ছুক চাকরিপ্রার্থীদের সন্ধান দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ওই প্রার্থীদের কাছ থেকে তোলা হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকাও।
দিব্যেন্দু ইডিকে জানান, তাঁর নিজস্ব একটি সংস্থা রয়েছে যার অধীনে ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিএড, ডিএলএড-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কুন্তলের সঙ্গে ২০১২ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রথম বার আলাপ হয়েছিল। তার পর ২০১৭ সালে কুন্তল নিজেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দিব্যেন্দুর কাছে কুন্তল সরকারি পরীক্ষায় ফেল করা কিছু চাকরিপ্রার্থীর সন্ধান করেন, যাঁরা টাকার বিনিময়ে নিয়োগে ইচ্ছুক।
এমন ১২ জন চাকরিপ্রার্থীর সন্ধান কুন্তলকে দিয়েছিলেন দিব্যেন্দু। প্রত্যেকের জন্য ৬ লক্ষ টাকা করে চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। দিব্যেন্দুকে কুন্তল এ-ও আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, আদালতে মামলার মাধ্যমে তাঁর এই প্রার্থীদের চাকরি নিশ্চিত করা হবে। এর পর বিকাশ ভবন থেকে এই প্রার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য ডাকা হয়। ২০১৭ সালেই চাকরির নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।
১২ জন প্রার্থীর জন্য ৬ লক্ষ করে মোট ৭২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৫৮ লক্ষ টাকা কুন্তলকে দিয়েছিলেন বলে ইডিকে জানিয়েছেন দিব্যেন্দু। তাঁর প্রার্থীরা হুগলিতেই প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট তাঁদের চাকরি বাতিল করে দিয়েছে।
দিব্যেন্দু আরও জানান, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে নিজের ভাইয়ের চাকরির জন্য তিনি কুন্তলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কুন্তল তাঁকে আরও কিছু চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করতে বলেন। মোট ৩০ জন চাকরিপ্রার্থীকে কুন্তলের কাছে পাঠিয়েছিলেন দিব্যেন্দু। ২০২১ সালে হাই কোর্ট প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে চাকরিপ্রার্থীদের নথিপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পর পর্ষদ থেকে ওই ৩০ জন প্রার্থীর কাছে ফোন যায়। তাঁদের জানানো হয় যে, তাঁদের নথিপত্রে কিছু গোলমাল রয়েছে। ২০১৪ সালের টেটের চূড়ান্ত তালিকায় নাম তোলানোর জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আরও ২ লক্ষ টাকা করে দাবি করেন কুন্তল। মোট ৬০ লক্ষ টাকা দেওয়ার পর প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত মেধাতালিকায় ওঠে।
কিন্তু অভিযোগ, এর পর চূড়ান্ত কাউন্সেলিং আয়োজন করার জন্যও আবার টাকা চাওয়া হয়। কুন্তল জানান, এ বার টাকা চাইছেন স্বয়ং পর্ষদ সভাপতি মানিক। দাবি মতো আরও ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা একাধিক কিস্তিতে কুন্তলের হাতে তুলে দেন দিব্যেন্দু।
চার্জশিটে ইডির দাবি, ২০২২ সালের জানুয়ারি নাগাদ কুন্তল দিব্যেন্দুকে জানান, ২০১৭ সালের অকৃতকার্য টেট প্রার্থীদেরও চাকরির বন্দোবস্ত তিনি করে দিতে পারবেন। এ বার আরও ২০ জন প্রার্থীর খোঁজ নিয়ে আসেন দিব্যেন্দু। প্রত্যেকের জন্য ৪ লক্ষ টাকা করে চাওয়া হয়। কুন্তলের হাতে দিব্যেন্দু তুলে দেন ৭৫ লক্ষ টাকা।
অভিযোগ, পর্ষদের ওয়েবসাইটে এর পর এই প্রার্থীদের কৃতকার্য হিসাবে দেখানো হয়। কিন্তু প্রার্থীরা আরটিআই করিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের নম্বর বাড়েনি। দিব্যেন্দু এর পর কুন্তলের কাছ থেকে টাকা ফেরত চান। কুন্তল তাঁকে মাত্র ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে দাবি। সেই সঙ্গে কুন্তল এ-ও জানিয়েছেন, পার্থ এবং মানিক জেলে আছেন বলে বেআইনি নিয়োগের বন্দোবস্ত করতে সমস্যা হচ্ছে।
দিব্যেন্দুর দাবি, তিনি কুন্তলকে ধাপে ধাপে মোট ৩ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। তার মধ্যে মাত্র ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, পার্থ, মানিক জেলের বাইরে থাকলে বেআইনি নিয়োগ কি সহজ হত? কুন্তল কি তাঁদের সহায়তাতেই বেআইনি ভাবে নিয়োগের বন্দোবস্ত করে দিতেন? আদালতে এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ইডির চার্জশিট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy