কুন্তল ঘোষের স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষ এবং কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ আর বিনিয়োগ চলছিল সমানে। দেশের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায় বঙ্গের চাকরি বিক্রির দেদার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অভিযোগ। ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রের দাবি, তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষ শিক্ষা ক্ষেত্রে বাঁকা পথে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দু’হাতে যে-টাকা পকেটে ভরেছিলেন, তা বিনিয়োগ করেছিলেন পূর্বে ত্রিপুরার চা-বাগানে এবং পশ্চিমে গোয়ার হোটেল ব্যবসায়। এমনকি নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা কুন্তলের মাধ্যমে বাংলাদেশের কয়েকটি সম্পত্তিতেও বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে ইডি।
তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত অন্য যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি আদালতে যাতায়াতের পথে প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘কুন্তল নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা ভিন্ রাজ্যে পাচার করে দিয়েছে।’’ ইডি-র বক্তব্যে তারই প্রতিধ্বনি। ওই তদন্ত সংস্থা সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনুকে জেরা করে ভিন্ রাজ্যে বিভিন্ন ব্যবসায় কুন্তলের কালো টাকা বিনিয়োগের কয়েকটি সূত্র পাওয়া গিয়েছে। ওই সূত্রেই তদন্তকারীরা জেনেছেন, ২০১৭ সালের পরে গোয়ার একটি পাঁচতারা হোটেল গ্রুপে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
গোয়ার ওই হোটেল গ্রুপকে চিঠি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে তলব করা হয়েছে। কুন্তল কয়েক কোটি টাকা আগরতলার চা-বাগানেও বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ।
বুধবার কুন্তলের স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষকে ডেকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, জয়শ্রীর বয়ানে নানান অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। জয়শ্রীর নামে থাকা সম্পত্তি এবং তাঁর আয়করের নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। ফের তাঁকে তলব করবে ইডি।
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআই এ দিন তৃণমূল সাংসদ তথা ওই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার আধিকারিক সুজয় ভদ্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। টাকার বিনিময়ে অবৈধ কর্মপ্রার্থীদের স্কুলে নিয়োগের ঘটনায় ‘কালীঘাটের কাকু’ হিসেবে সম্প্রতি তাঁর নাম উঠে এসেছে।
ভিন্ রাজ্যে কুন্তলের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ইডি সূত্রের দাবি, কুন্তলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ত্রিপুরার একটি অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা জমা পড়েছিল। সেই রাজ্যে রাজনৈতিক প্রচার ও নানা অনুষ্ঠান বাবদ ওই টাকা জমা পড়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। সম্প্রতি চা-বাগানে বিনিয়োগের তথ্যও পাওয়া গিয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৭ সালের পরে কুন্তলের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে জয়শ্রীর অ্যাকাউন্টে দফায় দফায় মোটা অঙ্কের টাকা জমা পড়েছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে জয়শ্রীর নামে একাধিক সম্পত্তিও কেনা হয়েছে। বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি স্কুল আছে কুন্তলের। ট্রাস্ট গঠন করে বেসরকারি কলেজ ও স্কুল কেনা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, জয়শ্রী ওই ট্রাস্টের অন্যতম সদস্যা। ট্রাস্টের মাধ্যমে বেসরকারি স্কুল ও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের অভিযোগ।
তদন্তকারীদের দাবি, কুন্তল ও শান্তনু পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে নিয়োগ দুর্নীতির চক্র চালিয়ে গিয়েছেন। শান্তনু নিজেকে আড়ালে রাখতে কুন্তলের সঙ্গে বৈঠক করতেন কলকাতার বেশ কয়েকটি পাঁচতারা হোটেলের রেস্তরাঁয়। ওই সব হোটেল চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তলব করা হয়েছে।
সুজয় প্রসঙ্গে সিবিআই সূত্রে এ দিন জানানো হয়েছে, ইডি এবং সিবিআইয়ের মামলায় জেল হাজতে থাকা তাপস মণ্ডলের মুখেই প্রথম উঠে আসে ‘কালীঘাটের কাকু’র নাম। তাপসের অভিযোগ, ‘কালীঘাটের কাকু’র মাধ্যমে বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন কুন্তল। জিজ্ঞাসাবাদের পরে সুজয় এ দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শান্তনু ও কুন্তলের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক পরিচয় ছিল। কিন্তু আমি নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত নই।’’
তবে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, সুজয়ের সঙ্গে কুন্তলের ঘনিষ্ঠতার নানা তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। সিবিআইয়ের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি চক্রে সুজয়ের যোগ আছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তাই তাঁকে ফের তলব করা হবে। বছরখানেক আগে কয়লা পাচার কাণ্ডেও সুজয়কে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই, ইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy