আমিরের বাড়ি থেকে উদ্ধাক হওয়া টাকা। ফাইল চিত্র।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশ পুরনো। গার্ডেনরিচের আমির খানের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য কলকাতার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা পুলিশের পার্ক স্ট্রিট থানাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ সত্ত্বেও ওই থানার পুলিশ কোনও রকম হেলদোল দেখায়নি বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অভিযোগ। ইডি-র তদন্তকারীরা এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন।
বিভিন্ন সময়েই সমাজের নানা স্তর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে কখনও নিষ্ক্রিয়তার, কখনও বা অতি সক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। থানায় অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ সেটিকে গুরুত্ব না-দেওয়ায় সম্প্রতি বাগুইআটির অপহৃত দুই কিশোরকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ। আদালত আমিরের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করতে বলা সত্ত্বেও পুলিশের নিশ্চেষ্ট থাকার পিছনে কোন ‘রহস্য’ আছে, সেটা সমধিক ভাবাচ্ছে ইডি-কে। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী-যোগেই ওই তদন্ত গতি হারিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই রহস্য ভেদ করতে চাইছে ইডি।
আদালত সূত্রের খবর, পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকায় কলসেন্টারের আড়ালে আমির প্রতারণার কারবার চালাতেন বলে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ২০২১ সালে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারক পার্ক স্ট্রিট থানার তৎকালীন ওসি শেখ আমানুল্লাকে এফআইআর করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আমানুল্লা বদলি হয়ে এখন আছেন জোড়াবাগান থানায়। তাঁকে এবং সেই মামলার তদন্তকারীকে অফিসারকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি চালাচ্ছে ইডি। রাজ্য মন্ত্রিসভার এক প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে আমানুল্লার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি। তাঁদের সন্দেহ, মন্ত্রিসভার ওই প্রভাবশালী সদস্যের চাপেই আমিরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুধু কাগজে-কলমে থেকে গিয়েছিল।
সোমবার বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমানুল্লা ফোন ধরেননি। জবাব দেননি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও। তবে কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আমিরের বাড়িতে শনিবারের ইডি হানার পরে নড়ে বসেছেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা। আমিরের বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট থানার সেই মামলার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এক ডেপুটি কমিশনারকে।
ইডি-র তদন্তকারীদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশে মামলা দায়ের হলেও আমিরের বিরুদ্ধে তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। ওই মামলার কোনও তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়নি আদালতে। এমনকি এফআইআর দায়ের হওয়া সত্ত্বেও প্রায় দেড় বছরে কোনও চার্জশিট দেওয়া হয়নি বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। মামলা হওয়ায় আমির তাঁর পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার অফিসটি বন্ধ করে দিলেও বহাল তবিয়তে প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। শুধু পার্ক স্ট্রিটের ওই অফিস থেকে আর্থিক প্রতারণার ঠাঁই বদল করে নিয়েছিলেন কলকাতার লাগোয়া কয়েকটি ভাড়ার ফ্ল্যাটে।
মোবাইল অ্যাপ প্রতারণার মামলায় গত শনিবার মেটিয়াবুরুজের পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খানের ছোট ছেলে আমিরের দোতলার ঘর থেকে ১৭ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। ওই ঘটনায় প্রভাবশালী-যোগের ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। আমিরের বাড়িতে পাওয়া বিপুল অর্থ যে শুধু অ্যাপ প্রতারণার নয়, তাঁর বাবা ও দাদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার ইঙ্গিতও পেয়েছে ইডি।
আদালত থেকে ওই মামলার সব নথি সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইডি-ও। ওই সংস্থার তদন্তকারীরা জানান, কলকাতা পুলিশের কাছ থেকেও তদন্তের নথি তলব করা হয়েছে। ইডি-র দাবি, আমির ও মোমিনপুরের বাসিন্দা, তার ব্যবসায়ী বন্ধু শাহরিয়া আলির সঙ্গেও রাজ্য মন্ত্রিসভার ওই প্রভাবশালী সদস্যের যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। শনিবার শাহরিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। দু’জনের মোবাইলই বন্ধ। তাঁদের মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন বন্দর এলাকায় ছিল বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy